প্রতীক নিয়ে নানুরের পর এ বার জেলার অন্যত্রও তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। শনিবার ছিল মনোনয়নপত্র তোলার শেষ দিন। ওই দিন তৃণমূলের বীরভূম জেলা পর্যবেক্ষক মলয় ঘটক প্রার্থীদের প্রতীক বিলি করার পরেও অসন্তোষ দূর হয়নি। না সিউড়ির বিধায়ক স্বপন ঘোষের অনুগামীদের।
সিউড়ি বিধানসভা এলাকায় তৃণমূলের প্রতীক বিলি নিয়ে সিউড়ির বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষ ও দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দ্বন্দ্ব মেটাতে শনিবার সিউড়িতে বৈঠক করেন মলয়বাবু। বেলা ১১টা থেকে পৌনে ৩টে পর্যন্ত বৈঠক চলে। উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, সিউড়ির বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষ, নানুরের বিধায়ক গদাধর হাজরা-সহ ব্লক ও পঞ্চায়েত স্তরের বহু নেতাকর্মী। আলোচনা হয় সিউড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ৭টি, দুবরাজপুরের ৪টি এবং সাঁইথিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের মহম্মদবাজারের ৬টি পঞ্চায়েত এলাকার প্রার্থী নিয়ে। |
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্য এখনও অনেক দেওয়ালে লেখা হয়নি প্রার্থীর
নাম। মাড়গ্রামের প্রতাপপুরে সব্যসাচী ইসলামের তোলা ছবি। |
দল সূত্রে খবর, সিউড়ির কড়িধ্যা পঞ্চায়েতের ১৫টি আসনের মধ্যে ৮টি অনুব্রতগোষ্ঠী ও ৭টিতে স্বপনগোষ্ঠীর লোকেরা মনোনয়ন দিয়ছেন। একই ভাবে সিউড়ির মল্লিকপুরে ১১টির মধ্যে ৯\২, তিলপাড়ায় ১৫টির মধ্যে ২\১৩, আলুন্দায় ১৫টির মধ্যে ৭\৮, ভুরকুনায় ১১টি আসনের মধ্যে ২\৯ আসনে মনোনয়ন জমা পড়েছে। তবে নগুড়ি ও খটঙ্গায় (মোট আসন ৭টি) সব কটিতেই স্বপনগোষ্ঠীর লোকেরা প্রার্থী দিয়েছেন। অন্য দিকে, দুবরাজপুরের গোয়ালিয়াড়ায় স্বপনগোষ্ঠীর পাল্লা ভারি থাকলেও সাহাপুর, চিনপাই ও পারুলিয়াতে সব আসনে অনুব্রতগোষ্ঠীর লোকেরা মনোনয়ন দিয়েছেন।
তবে অন্য পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে মহম্মদবাজারে। সেখানে ৬টি পঞ্চায়েত এলাকার সবকটি আসনেই (৫৯) আগে মনোনয়ন জমা দেন অনুব্রতগোষ্ঠীর লোকজন। পরে সব আসনে মনোনয়ন জমা করেন স্বপনগোষ্ঠীর লোকজন। কিন্তু মোট আসনের ২৭টিতে দলীয় প্রতীক আগে জমা দেন স্বপনবাবুর লোকজন। বাকি ৩২টি আসনে অনুব্রতবাবুর লোকেরা প্রতীক দেন। প্রতীক নিয়ে দ্বন্দ্ব মেটাতে শনিবার যখন সিউড়িতে আলোচনা চলছে, তখন দুপুর আড়াইয়ে নাগাদ বাকি ২৭টিতে প্রতীক জমা দিয়ে দেন অনুব্রতবাবুর লোকেরা। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে মনোনয়ন জমা দেওয়া প্রার্থীরা যত শেষে প্রতীক জমা দিন না কেন তাঁরাই প্রতীক পাবেন। কিন্তু প্রশাসনকে লেখা মলয় ঘটকের চিঠি দিয়ে শেষে অবশ্য শিকে ছেঁড়ে স্বপনবাবুর লোকেদের। মলয়বাবু বলেন, “যেখানে বিরোধীরা প্রার্থী দিতে পারছে না সেখানে আমাদের এক একটি আসনে অনেক প্রার্থী হয়ে যাচ্ছে। দলের একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন জমা করায় তাই সমস্যা হয়েছিল। ওঁদের বোঝানো হয়েছে। আশাকরি সমস্যা হবে না।”
নেতারা যাই বলুন না কেন, দলীয় প্রতীক না পাওয়ায় তাঁরা নির্দল হয়ে লড়বেন বলে উভয় পক্ষই কিন্তু পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সিউড়ির মল্লিকপুর পঞ্চায়েতের প্রধান শোভা মাল, সিউড়ি-২ এর কেন্দুয়া পঞ্চায়েতের প্রধান নবরঞ্জন ঘোষও আছেন। তাই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কতটা মিটল তা নিয়ে সংশয় থেকেই গেল। |