পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধীদলগুলিকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে না দেওয়ার ‘হুমকি’ দিয়েছিলেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি। কিন্তু তার এক দিন পরে তাঁরই অনুগামীদের মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরোধী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে নানুর থানা এলাকায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জেলায় ফের প্রকাশ্যে এসে পড়ল তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। এ দিন থুপসড়া পঞ্চায়েতে ভোটের জন্য মনোনয়নপত্র তুলে ব্লক অফিসে জমা দিতে যান তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামীরা। অভিযোগ, তাঁদের মারধর করেন এলাকায় দলের জেলা সভাপতির বিরোধী গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত কাজল শেখের অনুগামীরা। এ দিনই মহম্মদবাজারে সিপিএমের এক মহিলা প্রার্থীর মনোনয়নপত্র কেড়ে নেওয়ায় অভিযুক্ত তৃণমূল। |
আহতের চিকিৎসা চলছে বোলপুরে।—নিজস্ব চিত্র। |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, থুপসড়া পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সংঘাতের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। ২০০৩ সালের নির্বাচনে ওই পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল-বিজেপি জোট। কিন্তু বছর খানেকের মাথায় উপপ্রধান-সহ ১৩ জন সদস্য সিপিএমে যোগ দেওয়ায় পঞ্চায়েতে ক্ষমতা হারাতে হয় তৃণমূলকে। উল্টো ঘটনা ঘটে ২০০৮ সালের নির্বাচনের পরও। ওই বছর পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখল করে সিপিএম। কিন্তু কয়েক মাস পরে প্রধান-সহ ৮ জন সিপিএম সদস্য তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় পঞ্চায়েতের ক্ষমতা হারাতে হয় সিপিএমকে। এর পরেও পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক বিবাদ থামেনি। বরং পঞ্চায়েত পরিচালনাকে কেন্দ্র করে জেলা সভাপতির গোষ্ঠীর সঙ্গে কাজল শেখের গোষ্ঠীর বিবাদ চরমে ওঠে। বোমাবাজি থেকে শুরু করে দলীয় কার্যালয় দখলের অভিযোগ ওঠে দু’টি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেই।
এ দিন দুপুর ১টা নাগাদ ওই পঞ্চায়েতের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য জেলা সভাপতির অনুগামী হিসেবে পরিচিত স্থানীয় সন্ন্যাসী থান্দার, শেখ ডাবলু, দাতাকর্ণ দাস-সহ বেশ কয়েক জন ব্লক অফিসে যান। অভিযোগ, ওই সময় তাঁদের মনোনয়নপত্র এবং ভোটার কার্ড কেড়ে নেয় বিরোধী গোষ্ঠীর লোকেরা। পরে তাঁদের বালিগুণী গ্রামের কাছে বেধড়ক মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। ওই তিন জনকে আহত অবস্থায় বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, “প্রায় ৫০ জন দুষ্কৃতী লাঠি এবং ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমাদের উপরে চড়াও হয়। পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড়ালে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়।” জেলা সভাপতির ঘনিষ্ঠ তথা দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আব্দুল কেরিম খানের দাবি, “পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখল করার জন্য কাজল শেখের গোষ্ঠীর লোকেরাই ওঁদের মারধর করেছে। শুধু ওঁরাই নন, এক মহিলা-সহ আরও এক কর্মী মার খেয়েছেন। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়েছে।” মুখে মারধরের অভিযোগ করলেও থানায় লিখিত অভিযোগ হয়নি। পুলিশ জানায়, কোনও অভিযোগ হয়নি। পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাজল গোষ্ঠীর তরফে দলের নানুর ব্লক কার্যকরী সভাপতি অশোক ঘোষ দাবি করেছেন, “ওই ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনও যোগ নেই। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেরও ব্যাপার নেই।”
|
নম্বর বিভ্রাট
নিজস্ব সংবাদদাতা • বোলপুর |
প্রশাসন থেকে পর্যবেক্ষকদের যে মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে তাতে ফোন করে সাড়া পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সোমবারই আনন্দবাজারের তরফে বোলপুরের পর্যবেক্ষক মণিরূপা ভট্টাচার্যকে ফোন করা হলে দেখা যায় বাস্তবে নম্বরটির কোনও অস্তিত্বই নেই। বোলপুরের মহকুমাশাসক প্রবালকান্তি মাইতি স্বীকার করে নেন, প্রশাসন থেকে দেওয়া নম্বরটি ভুল ছিল। তাঁর দাবি, “পর্যবেক্ষকদের মোবাইল নম্বর সংক্রান্ত কাগজটিতে ছাপার ভুল ছিল। ভুল ধরা পড়তেই আমরা তা সংশোধন করে নিয়েছি।” |