দু’দিন পরেও পর্যবেক্ষক নেই পাঁচটি ব্লকে
নোনয়নপত্র তোলা ও জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাওয়ার ৪৮ ঘণ্টা কেটে গেলেও বীরভূমের বেশ কয়েকটি ব্লকে এখনও পর্যন্ত কোনও পর্যবেক্ষক নেই। প্রশাসন সূত্রে খবর, মঙ্গলবার অবধি নির্দিষ্ট ব্লকগুলিতে পৌঁছে দায়িত্বভার গ্রহণ করেননি কেউই। এমনিতে জেলায় সোমবার থেকে মনোনয়ন-প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু তারপরেই নানা ব্লকে বিরোধীদের উপরে হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত হয়েছে তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে পর্যবেক্ষককে না পেয়ে উদ্বেগে পড়েছেন রাজনৈতিক দলগুলি। পর্যবেক্ষক না থাকার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন পঞ্চায়েত ভোটে জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক উৎপলকুমার ভট্টাচার্যও। যদিও তাঁরা এখনও কেন দায়িত্ব নেননি, সে বিষয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি।
মনোনয়নের ফর্ম পূরণ করছেন প্রার্থীরা। ময়ূরেশ্বর ২ ব্লকে তোলা নিজস্ব চিত্র।
পঞ্চায়েত ভোটের জন্য রাজ্যে নির্বাচন বিধি জারি থাকাকালীনই বিতর্কিত মন্তব্য করেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। বিরোধীদের অভিযোগ, তাঁদের ভোটে দাঁড়াতে বাধা দিতে দলীয় কর্মীদের উস্কানি দিচ্ছে তৃণমূল। তৃণমূল নেতার সেই প্রকাশ্য মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবারই অবশ্য বীরভূমের জেলাশাসকের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার জগদীশপ্রসাদ মিনা সেই রিপোর্ট পাঠিয়েও দিয়েছেন। এমন একটি পরিস্থিতিতে জেলায় তৃণমূল ছাড়া প্রায় সব বিরোধী দলই অভিযোগ করছে তারা সুষ্ঠু ভাবে মনোনয়নপত্র তোলা বা জমা দেওয়ার কাজ করতে পারছেন না। জায়গায় জায়গায় তাদের নেতা-কর্মীদের উপরে হামলা চালাচ্ছে তৃণমূল। পর্যবেক্ষকদের অনুপস্থিতিতে তাঁদের আশঙ্কা আরও বাড়ছে। ফব-র জেলা সম্পাদক দীপক চট্টোপাধ্যায় মনে করছেন, “রাজ্যে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে নির্বাচন হচ্ছে। এ এক নতুন অভিজ্ঞতা। দলীয় কর্মীরা মার খেলেও কোথাও অভিযোগ জানানোর জায়গা নেই! এই পরিস্থিতিতে কমিশনের ভূমিকা আরও কঠোর হওয়া দরকার।”
তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হল, যে-দিন অনুব্রত মণ্ডল ওই বিতর্কিত মন্তব্য করেন, সেদিনও রামপুরহাট ১ ব্লকের জন্য নির্ধারিত পর্যবেক্ষক আসেননি। পর্যবেক্ষক রাজকুমার মাহাতোলিয়া মঙ্গলবার পর্যন্ত সেই দায়িত্ব নেননি। বিজেপি-র জেলা সহ-সভাপতি শুভাশিস চৌধুরীর মত, “ব্লকে পর্যবেক্ষক থাকলে তৃণমূলের জেলা সভাপতির নির্বাচনী বিধিভঙ্গের বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে জানাতে পারতেন।” জানা গিয়েছে, জেলার ১৯টি ব্লকের মধ্যে ৫টি ব্লকে (মুরারই ১, ময়ূরেশ্বর ১, নলহাটি ২, লাভপুর ও রামপুরহাট ১) কোনও পর্যবেক্ষকই দায়িত্ব নেননি।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ বলছে, মনোনয়নপত্র তোলা-জমা দেওয়ার প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত প্রতিটি ব্লকে পর্যবেক্ষককে সক্রিয় থাকতে হবে। সোমবার রামপুরহাট ১ ব্লকে মোট ১৬ জন (গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৩ ও পঞ্চায়েত সমিতিতে ৩) মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ব্লক সূত্রে খবর, পর্যবেক্ষক রাজকুমার মাহাতোলিয়ার থাকার জন্য আলাদা ভাবে ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবারও তিনি দায়িত্ব নিতে আসেননি। তিনি আদৌ দায়িত্ব নেবেন নাকি অন্য কেউ দায়িত্ব নেবে, প্রশাসন তাও নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। অন্য দিকে, সোমবার মুরারই ১ ব্লকে কেবল মাত্র গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে ১ জন নির্দল প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ওই দিন নলহাটি ২ ব্লকে কেউই মনোনয়ন জমা দেননি। তবে ময়ূরেশ্বর ১ ব্লকে ৭ জন পঞ্চায়েত প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সব ক’টি ক্ষেত্রেই পর্যবেক্ষক না থাকার জন্য প্রশাসনের তরফে জরুরি ব্যবস্থা নিতে হয়েছে।
এ দিকে সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া শুরু হওয়ার পরে রামপুরহাট মহকুমায় কোনও গণ্ডগোল না ঘটলেও বোলপুর মহকুমায় কয়েকটি গণ্ডগোলের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে লাভপুরে বিজেপি-র জেলা সম্পাদককে মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ওই দিনও এসে পৌঁছননি ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক রবি তিওয়ারি। কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মির অবশ্য অভিযোগ, “পর্যবেক্ষক থাকলেও তো দেখছি, রাজ্য সরকার নানা জায়গাতেই পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করে ভোট করতে চায়ছে।” এ দিকে নির্বাচন কর্মীদের মত, পর্যবেক্ষক থাকলে সুষ্ঠু ভাবে মনোনয়নপর্ব পরিচালিত হয়। গণ্ডগোল বা অশান্তি ও কমে। তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, “পর্যবেক্ষক আসা বা না আসার বিষয়টি রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ব্যাপার। তবে এটুকু বলতে পারি রাজ্যে অবাধ-শান্তিপূর্ণ ভোট হবে।”
যদিও নিবার্চন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করার জন্য পর্যবেক্ষক জরুরি বলে করছে জেলার সিপিএম নেতৃত্ব। সিপিএমের জেলা সম্পাদক দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, “যে সব ব্লকে এখনও পর্যবেক্ষক এসে পৌঁছননি, সেখানে কমিশন দ্রুত পর্যবেক্ষক পাঠানোর ব্যবস্থা করুক।” এ দিকে পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক উৎপলকুমার ভট্টাচার্য বলেন, “মঙ্গলবার পর্যন্ত কয়েকটি ব্লকে কোনও পর্যবেক্ষক এসে পৌঁছননি। রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে সে কথা জানিয়ে রিপোর্ট করেছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.