আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে ধৃত শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বাস্তুকার মৃগাঙ্কমৌলি সরকারের নতুন একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট এবং গাড়ির হসিদ মিলেছিল। সেই সম্পত্তির মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। শনিবার শিলিগুড়ির শরৎ বসু রোডে ওই বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে মৃগাঙ্কবাবুকে নিয়ে গিয়ে প্রায় ২ ঘন্টা তল্লাশি চালায় তারা। ফ্ল্যাটের দেওয়ালে বাইরে থেকে আমদানি করে আনা বহুমূল্যবান পাথর বসানো রয়েছে। স্নানের ‘জাকুজি’ বিদেশ থেকে আনা হয়েছিল, ঘরে ঢোকার দরজা কারুকার্য খচিত বহুমূল্যবান। তা ছাড়া যে সমস্ত আসবাব এবং জিনিস দিয়ে ঘর সাজানো হয়েছে তাতে বহু লক্ষ টাকা খরচ করা হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। সেই সঙ্গে দামি গাড়ি এবং গ্যারেজ রয়েছে। |
পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন বলেন, “ফ্ল্যাটটি মৃগাঙ্কবাবুর নামেই কেনা। কোথা থেকে ওই বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, গাড়ি কেনা এবং ফ্ল্যাট সাজানোর টাকা তিনি পেয়েছেন সে সব বিস্তারিত খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ দিন এসজেডিএ’র দফতর থেকেও কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।” কাগজে কলমে ফ্ল্যাটটির মূল্য ৩০ লক্ষ টাকা বলে মৃগাঙ্কবাবু পুলিশের কাছে দাবি করলেও তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। বিক্রেতা ওই মূল্যে কী ভাবে ফ্ল্যাটটি দিয়েছেন তাতে সন্দেহ প্রকাশ করে তাঁর ভূমিকাও পুলিশ খতিয়ে দেখতে চাইছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃগাঙ্কবাবু ওই ফ্ল্যাটের বিষয়টি প্রথমে গোপন রেখেছিলেন। দিন কয়েক আগে পুলিশ অন্য জায়গা থেকে ওই ফ্ল্যাটের বিষয়টি জানতে পারে। বৃহস্পতিবার খোঁজ করে ফ্ল্যাটের হসিদ পান তারা। এ দিন ফ্ল্যাটের দাম এবং সেখানে রাখা অন্যান্য সম্পত্তির হিসাব পেতে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তা থেকেই প্রাথমিক ভাবে সম্পত্তির ওই হিসাব পেয়েছে পুলিশ। পরে দুপুরে মৃগাঙ্কবাবুকে নিয়ে এসজেডিএ’র দফতরে গিয়ে প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা বিভিন্ন নথিপত্র ঘেটে তল্লাশি চালায় তারা। উপস্থিত ছিলেন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার এবং পুলিশের অন্যান্য পদস্থ আধিকারিকেরাও। এ দিনও এসজেডিএ’র দফতর থেকে ৪ টি ফাইল পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে। তা ছাড়া প্রকল্পগুলি কী ভাবে টেন্ডার ডেকে কাকে বরাত দেওয়া হয়েছিল তার প্রক্রিয়াও খতিয়ে দেখছেন তারা।
পুলিশের একটি সূত্রই জানিয়েছে, এসজেডিএ’র উদ্যোগে ত্রিফলা আলো লাগানো, জোড়াপানি নদী সংস্কারের মতো বিভিন্ন প্রকল্পে যুক্ত ঠিকাদারদের একাংশ মৃগাঙ্কবাবুকে ওই ফ্ল্যাট কিনতে, সাজাতে সাহায্য করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সে সব দিকও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এসজেডিএ’র একটি সূত্রই জানিয়েছে, প্রথমে অস্থায়ী পদে এসজেডিএতে বাস্তুকার হিসাবে যোগ দিলেও ২০০৮ সালে সহকারি বাস্তুকার পদে তিনি চাকরিতে স্থায়ী হন। সে সময় বেতন সব মিলিয়ে ৩০ হাজার টাকার মতো পেতেন। ২০১২ সালে কার্য নির্বাহী বাস্তুকার হিসাবে পদোন্নতি করা হলে বেতন দাঁড়ায় ৪০ হাজার টাকার মতো। কিন্তু ওই বিলাস বহুল ফ্ল্যাট কিনতে কোথা থেকে তিনি টাকা পেয়েছেন সেটা পুলিশ দেখছে।
মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানের নিকাশি প্রকল্পে (এসটিপি-২ এবং এসটিপি-৩) এবং বাগডোগরা, মালবাজার এবং ময়নাগুড়ি শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানোর কাজে ৫০ কোটি টাকা আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গত ১৬ মে এসজেডিএ’র মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক শরৎ দ্বিবেদী দফতরের দুই বাস্তুকার মৃগাঙ্কবাবু, সপ্তর্ষি পাল এবং ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধার অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করেন। মৃগাঙ্কবাবুকে গ্রেফতারের পর তাকে ১৪ দিন পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়। সে সময় কলকাতা-সহ বেশ কিছু জায়গায় মৃগাঙ্কবাবুকে নিয়ে তল্লাশি চালানো হয়েছিল। গত শুক্রবার তাকে আদালতে তোলা হলে এবং আরও ৪ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার আবেদন করা হলে আদালত তা মঞ্জুর করে। এর পরেই এ দিন তল্লাশি চালাতে তাকে নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে এবং এসজেডিএ দফতরে যায় পুলিশ। ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধার অজিতবাবুকে অবশ্য পুলিশ এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি। |