পেল্লাই লাল দালান বাড়ির। ভিতরে কাপড় দিয়ে ঘেরা প্যান্ডেল। টিনের ছাউনি দেওয়া ঘরে বিশাল কড়াইয়ে ভাত ফুটছে। উঠোনে বসে সবজি কাটতে ব্যস্ত মহিলারা। নিচ তলার হলঘরে গাদাদাদি করে শুয়েবসে আছেন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে আসা পুরুষেরা। তিনতলার ঘরে কোলের শিশু থেকে নাবালক সন্তানদের নিয়ে মহিলাদের ভিড়। কোচবিহার শহরের রূপনারায়ণ রোডে জেলা সিপিএম দফতরের ছবি। যেন কোনও শরণার্থী শিবির।
সিপিএম সূত্রের খবর, দলের দফতরে আশ্রয় নেওয়া জেলার প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দাদের সিংহভাগ পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। বাকিরা দলের সক্রিয় কর্মী। সবমিলিয়ে সংখ্যাটা দেড় শতাধিক। প্রায় ৫ দিন ধরে গ্রামছাড়া ওই প্রার্থী ও কর্মীদের ঠিকানা কোচবিহার জেলা দফতর। দলের জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য অনন্ত রায় বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেস আশ্রিতরা জেলাজুড়ে সন্ত্রাস চালাচ্ছে। আমাদের প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটছে। আতঙ্কের জেরেই শতাধিক প্রার্থী ও কর্মীরা শরনার্থী শিবিরের মত দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েও লাভ হচ্ছে না।” |
দফতরে আশ্রয় নেওয়া আনসার আলির কথায়, “আমি পানিশালা গ্রাম পঞ্চায়েতে সিপিএম প্রার্থী হতেই তৃণমূলের লোকজন হুমকি দিচ্ছে। স্ত্রী, ছেলে নিয়ে পার্টি অফিসে আশ্রয় নিয়েছি।” চিলকিরহাটের নুরজাহান বেওয়া কোচবিহার-১ পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএম প্রার্থী। তিনি বলেন, “নাম প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল। নিরুপায় হয়ে বাড়ি ফেলে এখানে এসেছি।” একই বক্তব্য সুটকাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের আজিজার রহমান, আনারউদ্দিন মিঁয়া বা জিরানপুরের শেফালি বর্মনদের। শিবিরে ৮ মাসের ছেলে নিয়ে থাকা মোয়ামারি পঞ্চায়েত প্রার্থী অম্বিয়া বিবি বলেন, “আতঙ্কে গ্রাম ছেড়েছি।”
আশ্রিতদের জন্য দৈনিক ৬০ কেজি চালের ভাত রান্না হচ্ছে। ডাল করা হচ্ছে ৫ কেজি। সব্জি, মাছ বা ডিম থাকছে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। রান্নার মূল দায়িত্ব সামলাচ্ছেন পানিশালা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রার্থী অমূল্য বর্মন। তাঁর কথায়, “অনুষ্ঠান বাড়িতে রান্নার অভিজ্ঞতা কাজে লাগছে।” দলের শহর লোকাল কমিটির সম্পাদক অরুণ করঞ্জাই বলেন, “শুভানুধ্যায়ীদের সাহায্যে চলছে সব। প্রতিদিন একটা সিলিন্ডার জোগাড় করতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। ৮টি শৌচালয় থাকলেও কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।”
সিপিএমের মত ফরওয়ার্ড ব্লকের অভিযোগ, একই ভাবে ৪০ জন প্রার্থী দলের জেলা অফিসে আশ্রয় নিয়েছেন। হাওয়ারগাড়ি, পালপাড়া, গোকুলেরকুঠি, তুতিয়ারকুঠি, ঘুঘুমারিতে দলের কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন। দলের জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, “গ্রামে গ্রামে তৃণমূলের পতাকা নিয়ে বাইক বাহিনী লুঠতরাজ চালাচ্ছে। পুলিশ নির্বিকার।” শনিবার দলের জেলা দফতরে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে উদয়নবাবু নির্বাচন কমিশনকেও কটাক্ষ করেন।
তৃণমূল অবশ্য বামেদের তোলা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “ভুল বুঝিয়ে সই করানোর পর ওই প্রার্থীদের আটকে রাখা হয়েছে। তাঁদের শেখানো বুলি বলতে বাধ্য করা হচ্ছে।” জেলা পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়াল বলেন, “প্রত্যেকটি অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা হচ্ছে।” |