বই-খাতা ছেড়ে ছেলেটাকে অনেকেই মাঝে মধ্যে দিন মজুরের কাজ করতে যেতে দেখেছেন। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরে সেই ছেলেরই অসামান্য ফল দেখে অনেকেই তাই অবাক হয়ে গিয়েছেন। নুন আনতে পান্তা ফুরোনো সংসারের ছেলে হুড়ার ধবনি গ্রামের অরূপ মাহাতো ৮০ শতাংশ নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়েছে। শুধু এটুকুই তার কৃতিত্ত্ব নয়, কলা বিভাগে সে স্কুলের সবোর্চ্চ নম্বর প্রাপক। অরূপের স্কুল বিশপুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে পড়ুয়ারা তাই তাকে নিয়ে এখন গর্ব করছেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক তথা হুড়া বিধানসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়ক সুভাষ মাহাতো বলেন, “ছেলেটা কখনও কখনও একশো দিনের কাজ করে বাবাকে সাহায্য করেছে। তারমধ্যেও এই ফল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।” |
অ্যাসবেসটসের ছোট্ট ছাউনির নীচে অরূপদের বাস। বাবা নিরঞ্জন মাহাতো কখনও একশো দিন প্রকল্পে কাজ করেন। কখনও দিন মজুরের কাজও। তাঁর কথায়, “সামান্য জমি রয়েছে। কিন্তু সেই জমিতে যে সামান্য ধান তৈরি হয়, তাতে বড়জোর কয়েক মাস ভাতের সংস্থান হয়। লোকের জমিতে কাজ না করলে ভাত জোটেনা। তাই ছেলেকেও মাঝে মধ্যে কাজে নিয়ে যাই।” অরূপ জানায়, টিউশন পড়ার কথা ভাবতে পারিনি। স্কুলের শিক্ষকদের সাহায্য নিয়ে এই ফল করেছি। বই দিয়েছে বন্ধুরা।” এ ভাবে শুধু মনের জোরেই সে এ বার এলাকার অন্যতম কৃতী হয়েছে। তার প্রাপ্ত নম্বর: বাংলায় ৭৪, ইংরেজিতে ৮৫, ইতিহাসে ৮০, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ৮০ ও শিক্ষা বিষয়ে ৮১। অরূপের ইচ্ছে ইংরেজি নিয়ে পড়াশোনা করবে। কিন্তু এ বার স্কুল ছেড়ে কলেজে যেতে হবে। কলেজে ভর্তির খরচ তো রয়েইছে, সেই সঙ্গে বইপত্র ও আনুষঙ্গিক খরচ কোথা থেকে জোগাড় হবে, এখন সেই দুর্ভাবনা তাকে কুড়েকুড়ে খাচ্ছে।
প্রচণ্ড দারিদ্রের মধ্যে মাধ্যমিকের মতোই উচ্চমাধ্যমিকেও নজরকাড়া সাফল্য পেয়েছে পুঞ্চার পায়রাচালি গ্রামের প্রিয়াঙ্কা মাঝি। মাধ্যমিকে সে ৬১৬ নম্বর পেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে ১০ হাজার টাকা পেয়েছিল। এ বার চাঁদড়া হাইস্কুলের ওই ছাত্রী উচ্চমাধ্যমিকে ৮০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছে। তার প্রাপ্ত নম্বর: বাংলায় ৮০, ইংরেজিতে ৮৭, ভূগোলে ৭৬, ইতিহাসে ৮১ ও সংস্কৃতে ৮৪। গ্রামেরই একটি মিষ্টির দোকানে দৈনিক ৫০ টাকা মজুরিতে কাজ করেন প্রিয়াঙ্কার বাবা সার্থক মাঝি। তিনি বলেন, “মেয়ের পড়ায় ভীষণ জেদ। এই সামান্য টাকায় সংসার চালাব, নাকি দুই ছেলেমেয়ের পড়ার খরচ জোগাড় করব ভেবে পাচ্ছি না। স্কুলের শিক্ষকরা পাশে না থাকলে মেয়েটা এত দূর পড়তেই পারত না।”
প্রিয়াঙ্কাও অরূপের মতো ইংরাজিতে অনার্স নিয়ে পড়াশোনা করতে চায়। তার স্বপ্ন, শিক্ষকতা করে তার মতো গরিব ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করা। চাঁদড়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক গোপালচন্দ্র দে বলেন, “প্রিয়াঙ্কার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে আমরা ওকে সাধ্যমতো সাহায্য করব।” |