বাঁকুড়া কোর্টে দুর্ভোগ
নাগাড়ে কর্মবিরতি আইনজীবীদের
ক সপ্তাহেরও বেশি সময় গড়িয়ে গেল। কর্মবিরতি তুললেন না বাঁকুড়া জেলা আদালতের আইনজীবীরা। মামলার কাজ বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দূর-দূরান্ত থেকে আদালতে আসা বিচারপ্রার্থীরা। অথচ এই কর্মবিরতির প্রকৃত কারণ নিয়েই বিতর্ক দেখা দিয়েছে আইনজীবীদের একাংশের মধ্যে।
গত ৫ জুন থেকে বেশ কয়েক দফা দাবিতে আদালতে ধর্মঘট শুরু করে ‘অ্যাডভোকেট বার অ্যাসোসিয়েশন’। দাবিগুলির অন্যতম হল, আদালত চত্বরে সাক্ষীদের বসার জায়গা বানানো, গাড়ি পার্কিংয়ের নির্দিষ্ট জায়গা করা, আইনজীবীদের বসার জায়গার ব্যবস্থা করা, কোর্ট চত্বর নিয়মিত পরিষ্কার রাখা প্রভৃতি। বার অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী কমিটির অন্যতম সদস্য তাপস চৌধুরী বলেন, “আদালত চত্বরে চরম অব্যবস্থা। এমনকী দূর থেকে আসা লোকেদের পানীয় জলের সংস্থান করা হয়নি এত দিনেও। এ ছাড়াও নানা সমস্যা রয়েছে। আমরা এ সবের সুরাহার দাবি দীর্ঘদিন ধরে জানালেও কোনও কাজ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
বার অ্যাসোসিয়েশনের অফিসে দোতলা তৈরির কাজ চলছে।
জেলা আদালতের আইনজীবী মহলেরই একটি অংশের অবশ্য দাবি, যে-সব দাবিকে সামনে রেখে কর্মবিরতি চলছে, সেগুলি নিছকই নিমিত্তমাত্র। আসলে বার অ্যাসোসিয়েশনের অফিসের দোতলায় কাজ হচ্ছে। তাই আইনজীবীদের বসার ক্ষেত্রে একটা সমস্যা হবে। এই কারণেই ‘পরিকল্পিত’ ভাবে এই কর্মবিরতি ডাকা হয়েছে বলে আইনজীবীদের একাংশের অভিযোগ। এ প্রসঙ্গে তাপসবাবুর বক্তব্য, “এই অভিযোগ মোটেও ঠিক নয়। আমরা ওই সব দাবি আদায়ের জন্য লড়াইয়ে নেমেছি।” তাঁর সংযোজন, “এটা ঠিক যে বার অ্যাসোসিয়েশনের অফিসের দোতলার কাজ শুরু হয়েছে। ঘটনাচক্রে কর্মবিরতি চলছে। তবে, দু’টি বিষয় নিতান্তই কাকতালীয়।”
কারণ নিয়ে চাপানউতোর যাই হোক, জেলা আদালতে টানা কর্মবিরতির জেরে সমস্যায় পড়েছেন বহু মানুষ। বাঁকুড়া শহরের লালবাজার এলাকার বাসিন্দা বাসুদেব দে মোদক শুক্রবার কোর্ট চত্বরে দাঁড়িয়ে বলেন, “ভাড়াটিয়ার সঙ্গে বিবাদ আদালতে গড়িয়েছে। বিচারের দিন এসে দেখি ধর্মঘট চলছে। ফলে, বিচারের দিন পিছিয়ে গেল। আইনজীবীদের ধর্মঘটের জন্য ভুগতে হচ্ছে আমাদেরই।”
কর্মবিরতির জেরে সুনসান আদালত চত্বর।
একই সমস্যায় পড়েছেন গঙ্গাজলঘাটির বাসিন্দা বিশ্বনাথ মণ্ডল। বধূহত্যার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এখন জামিনে মুক্ত। তাঁর কথায়, “মামলার শুনানিতে আদালতে গিয়ে দেখি আইনজীবীরা ধর্মঘট ডেকেছেন। বিচার হল না। কবে হবে তা-ও জানি না। শুধু শুধু এত কষ্ট করে, টাকা খরচ করে বাঁকুড়া আসতে হল।” প্রতিবেশীর সঙ্গে বচসার ঘটনায় শহরের মানকানালি এলাকার বাসিন্দা পুতুল পালের স্বামী-সহ কয়েক জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পুতুলদেবী এ দিন আদালতে এসেছিলেন স্বামীর জামিনের আবেদন জানাতে। তাঁর ক্ষোভ, “কর্মবিরতি না চললে হয়তো আমার স্বামী এ দিনই জামিন পেয়ে যেতেন। তা আর হল না।” কোর্ট ইনস্পেক্টর অফিসের এক পুলিশ কর্মীর কথায়, “কর্মবিরতির ফলে বহু কেস জমা হয়ে যাচ্ছে। এর পরে যে দিন কর্মবিরতি উঠবে, সে দিন থেকে আমাদের ঘাড়ে বিরাট চাপ এসে পড়বে। সেই চাপ সামলানো কঠিন হবে। আমরা তাই বেশ চিন্তায় আছি।” শুধুই বিচারপ্রার্থী নন, এই কর্মবিরতিতে ক্ষোভ ছড়িয়েছে আইনজীবীদের একাংশের মধ্যেও। সদ্য প্র্যাকটিস শুরু করা একাধিক তরুণ আইনজীবীর কথায়, “আমরা বারণ করেছিলাম এ ভাবে কর্মবিরতির পথে যেতে। কারণ এর ফলে বিচারপ্রার্থীদের যেমন সমস্যা হচ্ছে, তেমনই আমাদের মতো ছোটখাটো আইনজীবীদের রোজগারও মার খাচ্ছে। কিন্তু বার অ্যাসোসিয়েশন আমাদের কথা কানে তোলেনি।” তাপস চৌধুরীর আশ্বাস, সোমবার থেকে কর্মবিরতি তুলে নেওয়া হবে।

ছবি: অভিজিত্ সিংহ



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.