কলেজ-পুস্তিকার দখল নিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ
শিক্ষায়তনে রাজনীতির দাপাদাপিতে ক্রমেই অভ্যস্থ হয়ে উঠেছে রাজ্যের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ। ছাত্র সংসদের নির্বাচন নিয়ে অধ্যক্ষকে হেনস্থা থেকে অনলাইনে ছাত্র ভর্তির সরকারি নির্দেশের প্রতিবাদে প্রবল ভাঙচুর, সর্বত্রই জড়িয়েছে শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের নাম। এ বার কলেজের ভর্তি সংক্রান্ত প্রসপেক্টস বা পুস্তিকাতেও ছত্রে ছত্রে উঠে এল শাসকদলের দাপট।
নদিয়ার শান্তিপুর কলেজের ওই পুস্তিকার প্রথম পাতাতেই দেখা গিয়েছে কলেজের গেটের দু ধারে সুবিশাল টিএমসিপি’র ব্যানার। সঙ্গে ছবি খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। উপরে সবুজ কালিতে জ্বল জ্বল করছেআর নয়, এ বার তৃণমূল ছাত্র পরিষদ।
পুস্তিকার ভিতরে কলেজের প্রতিষ্ঠাতার ছবির নীচে খালি পায়ে কেতাদুরস্ত ভঙ্গিতে বসে ছাত্র সংসদের দুই প্রাক্তন নেতা। শান্তিপুর শহর তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি এবং কলেজের ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সহ-সম্পাদক ও কলেজের টিএমসিপি ইউনিটের সভাপতি।
শান্তিপুর কলেজ কতৃর্পক্ষ এ ছবি ছাপলেন কী করে? এর জবাব অবশ্য স্পষ্ট করে বলতে পারেননি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ চয়ন ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “আমি সদ্য দায়িত্ব নিয়েছি। এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। যা বলার পূর্ববর্তী অধ্যক্ষই বলতে পারবেন।” পূর্ববর্তী অধ্যক্ষ শঙ্কর সোম কী বলছেন, “আসলে ব্যস্ততার মধ্যে ছাপা হয়ে গিয়েছে।”
অস্বস্তিতে পড়লেও তৃণমূলের জেলা নেতারা কিন্তু ভাঙছেন না। তৃণমূলের নদিয়া জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত যেমন বলছেন, “ওরা কলেজেরই তো ছাত্র। এর মধ্যে অন্যায়ের কী আছে!” জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত পালের মন্তব্য: “বিষয়টি নিয়ে অহেতুক জলঘোলা করছে বিরোধীরা। কলেজের সাধারণ ছাত্র হিসেবেই আমাদের দুই নেতার ছবি ছাপানো হয়েছে। এতে অন্যায়ের কিছু নেই। তা ছাড়া, পুস্তিকা তো আমরা ছাপিনি ছেপেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। কাজেই দায় তাঁদেরই।”
পুস্তিকার প্রচ্ছদ (ডান দিকে) ও পিছনের মলাটে দুই নেতা। —নিজস্ব চিত্র।
কলেজের ছাত্র কিংবা প্রাক্তনী হলে তা হলে সাত খুন মাফ?
কলজের পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায় অবশ্য ব্যাপারটা লঘু করে দেখছেন না। তিনি অন্তত বলেন, “এমনটা বাঞ্ছনীয় নয়। তবে আমি সদ্য সভাপতি হিসেবে মনোনীত হয়েছি। বিষয়টি সম্পর্কে সম্যক জানি না। এর ভিতরে কোনও চক্রান্তও থাকতে পারে।”
সর্বত্রই ‘চক্রান্তের’ খোঁজ করা তৃণমূল নেতারা অবশ্য আড়ালে স্বীকার করে নিচ্ছেন, ‘গোটা ব্যাপারটা যথেষ্ট দৃষ্টিকটূ।’
শুক্রবার সকালে ওই পুস্তিকা হাতে পাওয়ার পরে কলেজে ভর্তি হতে আসা ছাত্রছাত্রীরা রীতিমতো বিস্মিত। তাঁদের অনেকেই বলেন, “প্রথম থেকেই যে কলেজে এমন তৃণমূলে ছাত্র সংগঠনের দাপট সেখানে ভর্তি হওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই।” হতবাক ছাত্রছাত্রীরা এই সংকীর্ণ রাজনীতির খোলাখুলি সমালোচনাও করছেন অনেকে। নবদ্বীপ ঘাট এলাকার দুই পড়ুয়া প্রতাপ বিশ্বাস ও প্রতাপ সরকার শুক্রবার কলেজে এসেছিলেন ফর্ম তুলতে। তাদের বক্তব্য, “বিষয়টি আমাদের খুব খারাপ লেগেছে। দৃষ্টিকটুর ব্যাপার। ভর্তি বিষয়ক পুস্তিকায় ছাত্র সংগঠনের নেতাদের ছবি থাকাটা মানা যায় না। ছবি যদি ছাপাতে হয়, তাহলে কোনও মনীষির ছবি ছাপানো যেত।”
আর এই ঘটনায় তাঁর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ওই কলেজেরই পরিচালন সমিতির প্রাক্তন সভাপতি তথা স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক অজয় দে। তিনি বলেন, “এটা মানা যায় না। কলেজে দলতন্ত্রের এই দাপাদাপি সহ্য করতে না পেরেই ইস্তফা দিয়েছিলাম।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দেও বলেন, “কোনও রাজনৈতিক দলের নেতার ছবি থাকা মানেই তাদের কাছে রাজনৈতিক বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েই কলেজে প্রবেশ করতে হবে। আপনারাই বিচার করুন শিক্ষা ক্ষেত্রে কী ধরনের অরাজকতা চলছে।” ওই কলেজের বিরোধী সংগঠন এসএফআই ঘটনার নিন্দায় সরব। সংগঠনের জেলা সম্পাদক কৌশিক দত্ত বলেন, “শিক্ষাক্ষেত্রে জাঁকিয়ে বসা দলতন্ত্রের জ্বলন্ত প্রমাণ শান্তিপুর কলেজের এই ঘটনা। ওটা কোনও কলেজ ‘প্রসপ্রেক্টাস’ নয়, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রচারপত্র।”
চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরু থেকেই কলেজগুলিতে শুরু হয়েছে ভর্তির তোড়জোড়। ভর্তির আবেদনপত্রের সঙ্গে কলেজের সম্পর্কে জ্ঞাতার্থে পড়ুয়াদের মধ্যে বিলি করা হচ্ছে পুস্তিকা। কলেজ কর্তৃপক্ষই ওই পুস্তিকা প্রকাশ করে থাকেন। সেখানে ছাত্র সংগঠনগুলির কোনও ভূমিকাই নেই। কিন্তু কিভাবে শান্তিপুর কলেজের পুস্তিকায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কেষ্ঠবিষ্ঠুদের ঢালাও ছবি ছাপা হল? কীভাবেই বা পুস্তিকার একেবারে কভার পাতায় শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের ব্যানার ছাপানো হল?
উত্তর নেই। শুধু ঔদ্ধত্য আছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.