শ্বশুর-জামাই লড়াই মুছে দিল জামাইষষ্ঠী
স্টিলের দোমড়ানো থালা থেকে আমের টুকরো ফালিটা মুখের কাছে তুলে ধরতেই শাঁখা-পলার রিনরিনে ঠোকাঠুকি।
নাও, খাও দিকিন বাপু। শাশুড়ির মুখে আদেখলা হাসি।
লাল ডুরে কোলাভেরি গেঞ্জি আর ফিকে নীল পাতলুন, আমের ফালির কাছে মুখটা এনেও চোখ তুলে প্রচারের চেনা গতে আওড়ে ফেলেন, “মা, ভুট্টা কিন্তু হামকেই দিবেন, পোরতিক টো মনে আছে তো!” অস্বস্তি ঢাকতে নিজের কথাতেই হেসে ওঠেন কিঞ্চিৎ।
হ হ, ঢের মনে আছে। তুমাকেই দিব বাবা। নাও রসগুল্লাটা এ বার টপ করি খেইয়ে লাও দিকি।
সাদা বস্তার উপরে আসনপিঁড়ি জামাইয়ের পাশে নীল হাতপাখা নিয়ে অনর্গল হাওয়া করে চলা শ্বশুরের মুখে বোকা বোকা হাসিটা ধক করে থমকে যায় যেন।
আড় চোখে তা আঁচ করেই চোখ মটকে দেন আটপৌরে শাশুড়ি।
জামাইয়ের সে সব চোখে পড়ে না। ফালি শেষ করে আম-আঁটিতে ডুব দিয়েছেন তিনি। রস গড়াচ্ছে কনুই বেয়ে। স্টিলের পাতে জামাইষষ্ঠীর আম, কলা রসগোল্লার মতোই ওঁরা এ বার মুখোমুখি। পঞ্চায়েত নির্বাচনে। সে সমরে অবশ্য মিষ্টতা নেই।
রাজনীতি ভুলে জামাই-আদর। ঝাড়গ্রামের পাটাশিমুলে। শুক্রবার দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।
তা হোক না, ঝাড়গ্রামের পাটাশিমুল গ্রাম পঞ্চায়েতের লোহামেলিয়া গ্রামে জামাইষষ্ঠীর এই সকালে তাঁরা অবশ্য পরস্পরকে বলছেন: আর একটা মিষ্টি খাও বাপু, নাকি সিপিএম বলে রাগ করছু!”
তৃণমূল প্রার্থী জামাই যা শুনে ফিরিয়ে দিচ্ছেন, “এতগুলান মিষ্টি খাইতে লারব, উটো আপনি খাইয়ে লিন না, বাবা।”
জোড়া ফুল-কাস্তে হাতুড়ি। নারদ-নারদ। শত্তুরের মুখে ছাই।
লোহেমিয়ার বৃষ্টি ঝরা সকালে দুই মেরুর শ্বশুর-জামাইয়ের যেন ‘মুখোমুখি বসিবার’ সময়!
শুক্রবার সকাল থেকে দুই পঞ্চায়েত প্রাথর্ীর্কে আস্ত লোহেমিয়া এ ভাবেই দেখল, অবাক চোখে।
এ দিন সাত সকালেই ঝিরঝিরে বৃষ্টি মাথায় করে শ্বশুরবাড়ির উঠোনে এসে পড়েছিলেন হৃষিকেশ মাহাতো। মেরেকেটে বছর পঁচিশ বয়স। তৃণমূলের প্রার্থী।
জামাই ঢুকতেই শশব্যস্ত শ্বশুরমশাই। ঘন ঘন শাঁখ বাজাচ্ছেন শাশুড়ি রমণীদেবী। বড় শ্যালিকা ঘটি ভরে জল এনে বললেন, “নাও ভাই, পা ধুয়ে নাও।” তারপর স্টিলের থালায় ফল-মিষ্টি, লুচি-সেমাইয়ের পায়েস। সুড়ুৎ করে পায়েসটুকু খেয়ে নিয়ে হাতের চেটো দিয়ে মুখ মুছে হৃষিকেশ বলেন, “যদি জিতি, তাহলে আপনার কাছ থেকে উন্নয়ন সংক্রান্ত পরামর্শ নেব কিন্তু।” শ্বশুর ষাট ছুঁই ছুঁই যোগেন্দ্র সিংহের পাল্টা জবাব, “আমি জিতলে, তুমিও আমাকে সহযোগিতা কোরো কন্তু।”
হৃষিকেশ তৃণমূলের প্রার্থী হতেই সিপিএমও চালটা খেলেছিল। যোগেন্দ্রবাবুকে জামাইয়ের বিপক্ষে প্রার্থী করে তারা চেয়েছিল পারিবারিক চাপে পড়ে শেষতক হৃষিকেশ যদি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয়। সে গুড়ে অবশ্য বালি! পাটাশিমুল গ্রাম পঞ্চায়েতের ৭ নম্বর আসনে লড়াই তাই সেয়ানে-সেয়ানে।
হৃষিকেশের পরিবার বরাবরই তৃণমূল। মাধ্যমিক পাশ হৃষিকেশ দিনমজুরির পাশাপাশি, ‘হাল্কা’ টিউশনিও করেন। যোগেন্দ্রবাবুর ছোট মেয়ে চন্দনারও গৃহশিক্ষক ছিলেন তিনি। ভাব তো সেখান থেকেই। ব্যাপারটা জানাজানি হতে ‘আদ্যন্ত সিপিএম’ যোগেন্দ্রবাবু সহজে মেনে নেননি। তবে শেষ পর্যন্ত বাড়ির চাপে মেয়ের মন-‘পরিবর্তন’ মেনে নিয়েছেন তিনি। ততদিনে মহাকরণেও বদল হয়ে গিয়েছে। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে গ্রামবাসীরা মিটিং করে যোগেন্দ্রকে রাজি করান। মালাও বদল হয়ে যায় হৃষিকেশ-চন্দনার।
সত্তরের দশকে যোগেন্দ্রবাবু এক বার এই আসনেই নির্দল প্রার্থী হয়ে জিতেছিলেন। সেচবাঁধ থেকে জমির পাট্টা বিলিসে সময়ের কাজের ফিরিস্তি ফলাও করে প্রচার করছেন তিনি। অন্য দিকে, দীর্ঘদিন সিপিএমের দখলে থাকা পাটাশিমুল পঞ্চায়েতের স্বজনপোষণ ও দুর্নীতি ছাড়া আর কিছুই হয়নি বলে গলা ফাটাচ্ছেন হৃষিকেশ।
আর রমণীদেবী? মুখে আঁচল চাপা দিয়ে বলছেন, “ষষ্ঠীর দিন, জামাই ভোট চাইলে না বলি কী করে! তবে শেষ পর্যন্ত স্বামীকেই হয়তো সমর্থন করব। না করে উপায় আছে!”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.