|
|
|
|
|
|
দুর্গন্ধ নগরী |
মমতার প্রতীক্ষায় |
দেবাশিস দাশ |
তাঁর আগমনে পাল্টে গিয়েছিল পথের রোজকার ছবিটা!
কিন্তু, তিনি চলে যাওয়ার পরই ‘যথা পূর্বং তথা পরং’। পথের ধারে ঠিক যেমন দৃশ্য রোজ দেখা যেত, তা ফিরে আসতে দেরি হয়নি। দিনের পর দিন পুরসভার পরিষ্কার না করা উপচে পড়া ভ্যাট, সেই দুর্গন্ধ, সেই নারকীয় পরিবেশ ফিরে এসেছিল তিনি, অর্থাৎ
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাওড়া ছাড়ার পর দিন থেকেই।
হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের আগে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে এক জনসভায় ভাষণ দিতে হাওড়ার সালকিয়া বাঁধাঘাটে এসেছিলেন মমতা। আর তাতেই সাজ সাজ রব পড়ে গিয়েছিল বামশাসিত হাওড়া পুরসভায়। যে পথে কদাচিৎ ঝাড়ু পড়ে, সেই পথই হয়ে উঠেছিল ঝকঝকে। যে পথের দু’পাশের ভ্যাট উপচে আবর্জনা রাস্তায় ছড়িয়ে থাকে, সেই সব ভ্যাটে পড়ছিল কোদালের কোপ। মুখ্যমন্ত্রীর আসা-যাওয়ার পথে যে ক’টি ভ্যাট পড়ে সেখানে লোকলস্কর, গাড়ি-ঘোড়া
নিয়ে সকাল থেকে শুরু হয়েছিল আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ। যা দেখে কার্যত অবাক হয়ে গিয়েছিলেন এলাকার পুরনো বাসিন্দারা। |
|
সালকিয়ার নয়া মন্দিরের কাছে যে মাঠে মুখ্যমন্ত্রী সভা করেছিলেন, পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সেই মাঠের পাশেই রয়েছে একটি বড় ভ্যাট। সেই ভ্যাটের পিছন দিকে গত ২০ বছর ধরে চায়ের দোকান চালাচ্ছেন শঙ্কর সাউ। শঙ্করবাবু জানান, মুখ্যমন্ত্রী আসার আগের দিন তিনি দেখেন, সকাল থেকে জনা কুড়ি সাফাইকর্মী কোদাল, বেলচা, ঝুড়ি নিয়ে জঞ্জাল সাফাইয়ের কাজে নেমে পড়েছেন। পুরসভার গাড়ি সঙ্গে সঙ্গে সেই আবজর্না নিয়ে রওনা হচ্ছে বেলগাছিয়া ভাগাড়ের উদ্দেশ্যে।
শঙ্করবাবুর কথায়: “গত ২০ বছর এই দোকান চালাচ্ছি, এই ভ্যাট কখনও নিয়মিত পরিষ্কার হতে দেখিনি। আমাদের মনে হয়, মুখ্যমন্ত্রী আসছেন দেখে পুরসভা এই ব্যবস্থা নিয়েছিল। কিন্তু এখন ফের আগের অবস্থা।”
ওই ওয়ার্ডের দীর্ঘ দিনের বাসিন্দা অপর্ণা কোলে। তাঁর প্রশ্ন: “দিনের পর দিন এই জমে থাকা আবর্জনা নিয়ে আমরা বিপর্যস্ত। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় নাকে রুমাল চাপা দিতে হয়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী আসছেন খবর পেয়ে রাতারাতি ভ্যাট পরিষ্কার করা হল, তার পর ফের বন্ধ হয়ে গেল কেন?” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী ওই দিন সভাস্থলে এসেছিলেন হাওড়া ব্রিজ দিয়ে ডবসন রোড, পিলখানা মোড় হয়ে জিটি রোড দিয়ে সালকিয়া চৌরাস্তা। এর পর সেখান থেকে বাঁ দিকে ঘুরে সালকিয়া স্কুল
রোড ধরে পৌঁছেছিলেন সঙ্ঘশ্রীর মাঠে। সভা শেষে তিনি সালকিয়া স্কুল রোড দিয়ে গোলাবাড়ি হয়ে হাওড়া ব্রিজ ধরেন।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই পথের মধ্যে শুধুমাত্র জিটি রোডে হাইকোর্টের নির্দেশে প্রতি দিন বেলা সাড়ে ১১টার আগে জঞ্জাল পরিষ্কার হয়ে যায়। কিন্তু বাকি জায়গায় রাস্তার পাশের ভ্যাটগুলি নিয়মিত পরিষ্কার হয় না। যেমন, ডবসন রোড বা সালকিয়া স্কুল রোডে আগে মাঝেমধ্যে সকালে জঞ্জালের গাড়ি দেখা যেত। তবে সব জঞ্জাল তোলা হত না। এখন তো পুরসভার গাড়িরই কার্যত দেখা মেলে না।
কিন্তু কেন এমন অবস্থা?
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, অলিগলির ছোট ভ্যাট থেকে জঞ্জাল এনে পুরসভার সাফাই দফতরের কর্মীরা বড় ভ্যাটে জমা করেন। এমনিতে হাওড়ায় অধিকাংশ বড় ভ্যাটই রাস্তার পাশে তিন দিকে পাঁচিল ঘেরা। আবর্জনা জমতে জমতে ভ্যাটের এক পাশের খোলা অংশ দিয়ে রাস্তায় এসে পড়ে। নিয়ম অনুযায়ী পুরসভার ময়লা ফেলার লরির প্রতি দিন বড় ভ্যাটগুলি থেকে তুলে তা বেলগাছিয়া ভাগাড়ে ফেলার কথা। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, পুরসভার অধিকাংশ জঞ্জাল ফেলার লরি ঠিকাদারদের হওয়ায় তাঁরা নিয়মিত ভ্যাটগুলি
থেকে ময়লা তোলেন না। এই কারণেই জঞ্জালের স্তূপ জমে ভ্যাটগুলিতে।
কিন্তু কেন এমন করেন ঠিকাদাররা?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার বললেন, “চুক্তিমতো পুরসভা নিয়মিত পাওনা টাকা দেয় না। কর্মীদের বেতন দেওয়া তো দূরের কথা, গাড়ির তেল কেনারও টাকা থাকে না। এর পরেও আমরা নিয়মিত জঞ্জাল পরিষ্কার করব কী করে?” যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ পুর কর্তৃপক্ষ। পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ বিভাগের মেয়র পারিষদ দেবাশিস ঘোষ বলেন, “এই অভিযোগ ঠিক নয়। ঠিকাদারদের নিয়মিত টাকা দেওয়া হয়। তবে কোনও কোনও জায়গায় গাড়ি খারাপ হয়ে গেলে জঞ্জাল তোলার কাজে ব্যাঘাত হয়। না হলে শহরে এখন নিয়মিত জঞ্জাল পরিষ্কার করা হয়।” |
ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার। |
|
|
|
|
|