সম্পাদকীয় ২...
শেষ নহে
লিকাতার একটি সুপরিচিত সংগীত-বিপণি বন্ধ হইয়া যাইতেছে। যাঁহারা সেই বিপণিতে নিয়মিত যাতায়াত করিতেন, স্বাভাবিক ভাবেই তাঁহাদের অনেকেরই মন খারাপ হইয়াছে। স্বজনবিয়োগ সর্বদাই বেদনার। কিন্তু, বিচ্ছেদের আবেগ কিছু স্তিমিত হইলে প্রত্যেকেই বুঝিবেন, এই মৃত্যু নিতান্ত সময়োচিত। যে ভাবে প্রাচীন লং প্লেয়িং রেকর্ড, স্পুল, ক্যাসেট ক্রমে কালের গর্ভে নিমজ্জিত হইয়াছে, কমপ্যাক্ট ডিস্ক নামক প্রযুক্তিটিও সেই পথেই যাইবে। অস্তাচলগামী যাত্রা সবে আরম্ভ হইয়াছে। এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সেই যাত্রা দ্রুততর হইবে, কারণ বর্তমান প্রযুক্তিতে ‘পাইরেসি’-র পথ মসৃণতর হইয়াছে। যত ক্ষণ না প্রশাসন এই চৌর্যবৃত্তি প্রতিরোধে কঠোর হইবে, যত ক্ষণ না বে-আইনি আপলোড-ডাউনলোড গুরুতর অপরাধ হিসাবে বিবেচিত হইবে, সরল অর্থনীতির যুক্তিই সম্ভাব্য ক্রেতাকে সাইবার-চোরে পর্যবসিত করিবে। হাহুতাশ করা অর্থহীন, প্রশাসনিক সক্রিয়তার দাবি জানানো বাঞ্ছনীয়। বিশ্বের প্রচুর দেশে মানুষ সাইবার-চৌর্যবৃত্তির কথা চিন্তাও করেন না, কারণ তাঁহারা সেই অপরাধের শাস্তি বিষয়ে সচেতন।
কিন্তু, ভারতে যদি সাইবার-চৌর্যবৃত্তি সম্পূর্ণ বন্ধও হইয়া যায়, তবুও কি কমপ্যাক্ট ডিস্কের বাজার থাকিবে? খানিক থাকিবে বইকী— এ দেশে কিছুই সম্পূর্ণ লোপ পায় না। কিন্তু সেই বাজারের ভরসায় কর্পোরেট ব্যবসা চলিবে না। তাহাতে সংগীত-শিল্প স্তব্ধ হইয়া যাইবে, এমন আশঙ্কার কোনও কারণ নাই। লং প্লেয়িং রেকর্ড নাই, কিন্তু আবদুল করিম খান বা ফৈয়জ খানের গান কমপ্যাক্ট ডিস্ক বাহিত হইয়া দিব্য ব্যবসা করিতেছে। যে সংগীত-বিপণির ব্যবসা বন্ধ হইতেছে, তাহার অথবা তাহার ন্যায় অন্য বিপণিগুলির টিকিয়া থাকিবার মন্ত্র একটিই নূতন প্রযুক্তির সহিত মানাইয়া লওয়া। বিভিন্ন অনলাইন বিপণি ইতিমধ্যেই এমপিথ্রি জাতীয় ফর্ম্যাটে গান বিক্রি আরম্ভ করিয়াছে— ন্যায্য মূল্য চুকাইয়া ফাইলটি ডাউনলোড করিয়া লইলেই হয়। সম্ভবত ইহাই সংগীত-ব্যবসার নূতন পথ। ভিন্নতর পথও সম্ভব। কিন্তু তাহা সন্ধান করিতে হইবে। কমপ্যাক্ট ডিস্কের ব্যবসা আর তাহার পূর্বগৌরবে ফিরিয়া আসিবে না। তাহার প্রয়োজনও নাই।
তবু, কিছু বিক্রি থাকিবেই। বিশেষত যে গান এখনও ইন্টারনেট-সমুদ্র মন্থনে সহজে মিলে না, সেই গান এখনও কমপ্যাক্ট ডিস্কেই বিক্রি হইবে। সেই বাণিজ্যের পরিমাণেই যদি ব্যবসা চালাইতে হয়, তবে তাহার পথ ভিন্ন। কলিকাতার কিছু সনাতন সংগীত-বিপণি তেমন ব্যবসা করে। সেই দোকানগুলি দৃষ্টিনন্দন নহে, আয়তনেও ক্ষুদ্র। কর্মচারীর সংখ্যা সীমিত। অর্থাৎ, বাণিজ্যের স্বল্পতার সহিত তাল মিলাইয়া তাহাদের ব্যয়ও নিতান্তই কম। ফলে, লাভের ভারসাম্যটি বজায় থাকে। এই পথটি ভারতে সুপরিচিত। খুচরা ব্যবসায়ে বৃহৎ বৈদেশিক পুঁজি আসিলেও কেন পাড়ার মুদিখানাগুলি দিব্য চলে, তাহার কারণ এখানেই। খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখা, সীমিত সংখ্যক ক্রেতার সহিত ব্যক্তিগত সম্পর্ক বজায় রাখা। ভারতের অর্থনীতি জন্মাবধি দ্বৈত বৃহৎ বনাম ক্ষুদ্রের এই দ্বিত্ব লইয়াই একবিংশ শতক চলিবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.