এখনও আতঙ্কে তাপস-পত্নী
সাহায্য ফেরানোই উচিত ছিল, কিন্তু সাহস পাইনি
কামদুনিতে ধর্ষিতার পরিবারটির মতো সরকারি সাহায্য প্রত্যাখ্যান করতে চেয়েছিলেন তিনিও। শুধু সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়েই সেটা করতে পারেননি মিনতিদেবী।
মিনতিদেবী গার্ডেনরিচে দুষ্কৃতীর গুলিতে নিহত পুলিশকর্মী তাপস চৌধুরীর স্ত্রী। যাঁর বাড়িতে গিয়ে নানা সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মিনতিদেবী সে সব প্রস্তাব ফিরিয়ে দেননি। কিন্তু কামদুনির পরিবারটি বুধবার ঠিক সেটাই করে দেখিয়েছে। বৃহস্পতিবার হরিদেবপুরের সারদাপল্লির বাড়িতে বসে মিনতিদেবীও বলছেন, “মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, কামদুনির পথটাই ঠিক। সংসারের কথা না-ভাবতে হলে আমিও হয়তো ওই রাস্তাই বেছে নিতাম।” কলকাতা পুলিশে বাবার চাকরিটাই এখন করেন তাপসবাবুর মেয়ে তনুশ্রী। ঘটনাচক্রে কামদুনির মেয়েটিও তনুশ্রীরই বয়সী ছিল। মেয়েটির উপরে নৃশংস অত্যাচারের কথা শুনে তাই শিউরে উঠেছেন মিনতিদেবী।
তাপসবাবুর মৃত্যুর পরে তাঁর বাড়িতে গিয়ে এককালীন সরকারি আর্থিক সাহায্য, তাপসবাবুর মা-র চিকিৎসার খরচ, চাকরি না-করেও নিহত এসআই-এর বেতনের টাকা মিনতিদেবীকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি নিয়মেই বাবার চাকরি তনুশ্রীর পাওয়ার কথা ছিল। পাশাপাশি তনুশ্রীর ভাই তমালের পড়াশোনার দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বাড়ির সামনে পুলিশ মোতায়েন রাখার আশ্বাসও ছিল।
গার্ডেনরিচের ঘটনার পর চার মাস কেটে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর সব আশ্বাস কি পূর্ণ হয়েছে?
ছেলের সঙ্গে তাপস চৌধুরীর স্ত্রী মিনতি চৌধুরী। —নিজস্ব চিত্র
চৌধুরী পরিবারের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, এপ্রিলের শুরু থেকেই তাপসবাবুর বাড়ির সামনে পুলিশের নজরদারি বন্ধ হয়েছে। এককালীন ক্ষতিপূরণের টাকা হাতে পেলেও, মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি মতো তাপসবাবুর বেতন এখনও পাননি মিনতিদেবী। পেনশনের জন্য সময় লাগবে আরও চার বছর।
আর খুনের বিচারের সরকারি আশ্বাস? মিনতিদেবীর কথায়, “চাকরি, টাকার চেয়েও বেশি জরুরি দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি। সেই বিচারের প্রক্রিয়ার উপরেই তো আর আস্থা রাখতে পারছি না। অভিযুক্ত জামিন নিয়ে ঘুরছে।” তাপস খুনের মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্না এবং কংগ্রেসের মোক্তার জামিন পাওয়ার পরই লালবাজারের এক শীর্ষকর্তার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল মিনতিদেবীর। “ওঁকে বলেছিলাম, মুখ্যমন্ত্রী বিচারের আশ্বাস দিয়েছিলেন। এ বার তা হলে কার উপরে আস্থা রাখব। জবাবে ওই পুলিশকর্তা জানান, এক পুলিশ অফিসার খুন হয়েছেন। পুলিশই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। আমার আশঙ্কার কথা ওই পুলিশকর্তাই মুখ্যমন্ত্রীকে জানাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।”
প্রতিশ্রুতি রক্ষিত হবে কি? না হলে কী করার আছে? মিনতিদেবী অনুভব করছেন, সরকারি চাকরি, ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়ে আসলে প্রতিবাদের ভাষাটাই কেড়ে নেওয়া হয়। “আমার ক্ষেত্রে যেমন হয়েছে। ছেলেমেয়ের কথা ভেবে প্রকাশ্যে কিছু বলতে ভয় পাই।”
আধো-অন্ধকার ঘরে মায়ের পাশে বসে তখন খানিকটা বিহ্বল নিহত এসআই-এর ১৫ বছরের ছেলে তমাল। সে-ও বলে ওঠে, “বাবার খুনিদের শাস্তি চাই।”
শাস্তি ছাড়া আর কিছুই চাই না, এই বলেই তো মুখ্যমন্ত্রীর অন্যান্য আশ্বাস প্রত্যাখ্যান করে এসেছে কামদুনি। ওই পরিবারটির বিরল মনের জোরকে অভিনন্দন জানিয়ে মিনতিদেবী অকপটে বলেন, “কামদুনির পরিবারটির সাহস আছে। সঙ্গে রয়েছে গোটা এলাকা। উনি (তাপসবাবু) খুন হওয়ার পর আমার অভিভাবক বলতে কেউ ছিল না। তাই প্রত্যাখ্যানের সাহস পাইনি।” কিন্তু পরিস্থিতি যে তাতেও বিশেষ বদলায়নি, তা এখন বুঝতে পারছেন মিনতিদেবী। “মেয়েটা একা-একা অফিস যায়। খিদিরপুর এলাকা দিয়েই যাতায়াত করে। ছেলেটারও স্কুল। কাউকে কিছু বলতেই ভয় লাগে। যদি আরও বড় কোনও ক্ষতি হয়ে যায়!”
আর্তনাদের মতোই শোনায় স্বামীহারা মহিলার কথাগুলো!

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.