যৌথ ষড়যন্ত্র দেখছেন মুকুল
দিনভর বিক্ষোভ মহানগরে, আঁচ পড়ল কালীঘাটে
বারাসত ও গেদের ছাত্রী-ধর্ষণের ঘটনা এবং রাজ্যে বেড়ে চলা নারী নিগ্রহের তথ্য নিয়ে বৃহস্পতিবার দিনভর মিছিল-বিক্ষোভ চলল কলকাতার রাজপথে। তার আঁচ পড়ল মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনেও।
নারী নির্যাতনের বিভিন্ন ঘটনার প্রতিবাদে এবং কামদুনির ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এ দিন সাতসকালে কালীঘাটে বিক্ষোভ দেখান জনা পঞ্চাশেক মহিলা। মাস দেড়েক আগেও মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন সারদার এজেন্ট-আমানতকারীরা। পুলিশ জানায়, শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে এ দিন ১৩ জন মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাঁদের ব্যক্তিগত জামিনে ছেড়েও দেওয়া হয়। দুপুর ও বিকেলে একই প্রশ্নে মধ্য কলকাতায় সিপিএমের ছাত্র ও বাম মহিলা সংগঠনগুলির মিছিল উপলক্ষে সাজ সাজ রব ছিল পুলিশে! আবার মহাকরণের সামনে বিক্ষোভ দেখায় ছাত্র পরিষদ। পার্ক সার্কাস থেকে গাঁধী মূর্তি পর্যন্ত মোমবাতি মিছিল করে যুব কংগ্রেস।
মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনেই গণধর্ষণের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে গ্রেফতার তরুণী। — নিজস্ব চিত্র
নারী নিগ্রহের ঘটনায় যে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে, তাকে রাজনৈতিক ভাবেই মোকাবিলা করতে চায় শাসক দল। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে বিক্ষোভের সমালোচনা করে মুকুল রায় বলেছেন, “বাংলায় দু-একটি ঘটনা যা ঘটেছে, তা বেদনার, দুঃখেরও। বাংলার মা-বোনেরা আমাদের সম্পদ। ওই ঘটনার (বারাসত) সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের সরকার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু বাংলাকে অস্থির করতে মাওবাদী, সিপিএম এবং কংগ্রেস ষড়যন্ত্র করছে। এরা মুখ্যমন্ত্রীর চরিত্রহনন করছে!” প্রায় হুঁশিয়ারির সুরে মুকুলবাবু বলেন, “আমাদের লক্ষাধিক কর্মী-সমর্থক আছেন। তাঁদের বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীদের বাড়িতে তো পাঠাচ্ছি না! এটা আমাদের সংস্কৃতি নয়।” নানা সংগঠনের প্রতিবাদের পরে পাল্টা পথেও নামছে তৃণমূল।
বিক্ষোভ মিছিলে সামিল গেদে সম্মিলনী স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র
মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কুৎসা ও বারাসতের ঘটনার প্রতিবাদে আজ, শুক্রবার পার্ক স্ট্রিটে মাদার টেরিজার মূর্তি থেকে ময়দানে গাঁধী মূর্তি পর্যন্ত মোমবাতি মিছিল করবে তৃণমূলের মহিলা সংগঠন। তৃণমূল ভবনে মুকুলবাবুর পাশে বসেই তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের রাজ্য সভানেত্রী ও মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “মুখ্যমন্ত্রী এক জন মহিলা। তাঁর বিরুদ্ধে যে ধরনের কুৎসা ও চরিত্রহনন করা হচ্ছে, তা আমাদের সংস্কৃতি নয়।” ছিলেন আরও দুই মন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও ফিরহাদ হাকিমও।
নারী নিগ্রহের ঘটনাকে যে ভাবে রাজ্য নস্যাৎ করতে চাইছে, বিরোধীরা তার সমালোচনা করেছে। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের প্রশ্ন, “কখনও প্রশাসনিক কর্তা, কখনও দলের নেতাদের দিয়ে একই কথা বলানো হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী চুপ কেন? রাজ্যে এত নারী নিগ্রহ হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী কেন এড়িয়ে যাচ্ছেন?” উদ্বিগ্ন হওয়ার বদলে সরকার তথা শাসক দল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়েই বেশি মাথা ঘামাচ্ছে বলেও তাঁর অভিযোগ।
পুলিশের দাবি, তাদের কাছে আগাম খবর ছিল, জনা তিরিশেক মহিলা সকাল ৯টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে জড়ো হবেন। কিন্তু ৮টার আগেই বিক্ষোভকারীরা কালীঘাট সেতুর সামনে প্রেমেন্দ্র মিত্র সরণিতে জড়ো হন। কালীঘাট সেতুর সামনে পুলিশ ব্যারিকেড করে। কিছু বিক্ষোভকারী পুলিশকে জানান, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে মহাকরণে দাবিপত্র দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী দেখা করেননি। তাই বাড়িতেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের কয়েক জনের দেখা করিয়ে দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।
পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ বলেন, “বিক্ষোভকারীরা মুখ্যমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী ‘জেড প্লাস’ স্তরের নিরাপত্তা পান। তাঁর উপরে মাওবাদী এবং অন্য জঙ্গি সংগঠনের হুমকি রয়েছে। তাই বিক্ষোভকারীদের তাঁর বাড়ির সামনে যেতে দেওয়া হয়নি।” সিপির দাবি, বিক্ষোভকারীদের ধর্না এবং তাঁদের গ্রেফতারের প্রক্রিয়া রেকর্ড হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের পক্ষে দোলন গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশকে বলি, চার প্রতিনিধিকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দিতে। দু’বছর ধরে দেখা করার আবেদন জানিয়েও সাড়া পাইনি।” দুপুরে ওয়েলিংটন থেকে ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবজ্যোতি দাস, মধুজা সেন রায়দের নেতৃত্বে এসএফআইয়ের মিছিল আসে ধর্মতলায়। বাম মহিলা সংগঠনগুলির মিছিলও সেখানে শেষ হওয়ায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ধর্মতলা চত্বর। এসএফআইয়ের প্রতিনিধিদল পরে মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ সচিবের হাতে দাবিপত্র দিয়ে আসে।

পুরনো খবর
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.