এই সেই ঘর। মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণের দরবার হল। পাশে বিলিয়ার্ড রুম। রাজার হাতের স্পর্শ যেন এখনও লেগে রয়েছে স্টিকে। বাইরের বাগানটা যেন সবুজে ভরে গিয়েছে। এ বাগানেই পায়চারি করতেন সুনীতি দেবী। সিঁড়ি ধরে উপরে উঠতেই পাশাপাশি দুটি ঘর। চেয়ারে বসে এক নিরাপত্তা কর্মী। তিনি বললেন, “এটা ছিল নৃত্যশালা। আর ওই ঘরে থাকতেন বাইজিরা।”
কোচবিহার রাজবাড়ি কেন তার পুরোনো মর্যাদা ফিরে পাবে না? কেন সংগ্রহশালা হয়ে থাকবে রাজবাড়ির কিছু অংশ? এই প্রশ্নে সরব পর্যটক থেকে বাসিন্দারা। হেরিটেজ সোসাইটির পক্ষে অরূপজ্যোতি মজুমদার বলেন, “রাজবাড়ি যে রকম ছিল, সেই অবস্থা ফিরে পাবে তা সবার আশা। পর্যটকরা গোটা রাজবাড়ি ঘুরে উপভোগ করতে চান। এই অনূভুতিই তাদের বারবার কোচবিহারে আকৃষ্ট করবে। আমরা একাধিক বার ওই দাবি জানিয়েছি।”
জেলা শাসক মোহন গাঁধী বলেন, “রাজবাড়ি দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ। তারাই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়।” পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের পক্ষে কলকাতার অধীক্ষক তপন বৈদ্য বলেন, “রাজবাড়ি নিয়ে আপাতত দুটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। রাজবাড়ির অস্ত্রাগার সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া ও রাজ আমলের মুদ্রার একটি গ্যালারি তৈরি করা।” তিনি বলেন, “ চলতি আর্থিক বছরেই এই সিদ্ধান্ত রূপায়িত হবে।”
পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ সূত্রে জানা যায়, মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ ১৮৮৭-তে রাজবাড়ি নির্মাণ করেন। প্রথমে সেটি তিন তলা ছিল। ভূমিকম্পে রাজবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলে, শুধুমাত্র দুটি তলা ব্যবহার হত। রাজবাড়ি উত্তর-দক্ষিণে ১২০ মিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে ৯০ মিটার। পর্যটকদের জন্য দরবার হল সহ আটটি ঘর নিয়ে একটি সংগ্রহশালা করা রয়েছে। অভিযোগ, সংগ্রহশালার রক্ষণাবেক্ষণও সঠিক ভাবে হয় না। নিয়মিত সাফসুতরো করার কাজও বন্ধ থাকে। দরবার হলে মহারাজা ও রানির আবক্ষ মূর্তি রয়েছে। তা ছাড়াও রাজার সপাষর্দ ছবি, শিকারের ছবি, রাজ আমলের গাড়ির ছবিও রয়েছে। সংগ্রহ শালার ঘরগুলির দেওয়ালে মাকড়সার জাল, আসবাবে ধুলোর আস্তরণ পড়ে রয়েছে বলে অভিযোগ। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জাতি সম্প্রদায়ের বর্ণনা, রাজ আমলের দেবদেবীর বর্ণনাও রয়েছে সেখানে। ব্রহ্মা, বিষ্ণু, সূর্য, চর্তুভুজা সহ একাধিক দেব দেবীর মূর্তি রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে দুর্লভ আসবাব।
বেশ কয়েকটি ঘরে পলেস্তরা খসে পড়েছে। শৌচাগারগুলির বেহাল দশা। পেছনের দিকে ময়লার স্তূপ দেখা যায়। সম্প্রতি অসমের এক বাসিন্দা অনিমেষ চৌধুরী রাজবাড়ি ঘুরতে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “আমরা এর আগেও বেশ কয়েক বার এসেছি। প্রতিবারই পরিচ্ছন্নতার অভাব দেখা গিয়েছে। দেওয়ালের পলেস্তরা খসে পড়লেও মেরামত করা হয় না। রাজবাড়ির ৬৬টি ঘরেরই রক্ষণাবেক্ষণ করে দ্রুত সে সব পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া উচিত।”
|