গত মাসের ১৪ তারিখ আদালতের বাইরে সংবাদমাধ্যমকে যে অভিযোগ জানিয়েছিলেন, বুধবার সেইটাই প্রধান বিচারপতির অরুণকুমার মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চের সামনে তুলে ধরলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী সমরাদিত্য পাল। দাবি করলেন, ১৪ মে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে যে নির্দেশ হাইকোর্ট দিয়েছিল, তা বিবদমান দু’পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে হয়নি। আর এই মন্তব্যের জেরেই প্রধান বিচারপতির সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়লেন সমরাদিত্যবাবু। বাদানুবাদ চলল প্রায় দেড় ঘণ্টা।
আদালতের নির্দেশ থেকে ‘উভয় পক্ষের সম্মতিতে’ কথাটি বাদ দেওয়ার আর্জি জানিয়ে গত ১৭ মে মামলা দায়ের করেছিল নির্বাচন কমিশন। এ দিন সেই মামলার শুনানির সময় ভিড়ে ঠাসা এজলাসে প্রধান বিচারপতিকে সমরাদিত্যবাবু বলেন, “১৪ মে-র নির্দেশে যে উভয় পক্ষের সম্মতি কথাটি লেখা হচ্ছে, তা আমি ওই দিন শুনতে পাইনি। সন্ধ্যে ছ’টার পর হাইকোর্টের ওয়েবসাইটে নির্দেশটি পড়েই আমি তা জানতে পারি। আর তখনই তার প্রতিবাদ করি।”
এই কথা মানতে চাননি প্রধান বিচারপতি। সমরাদিত্যবাবুকে তিনি বলেন, “আপনি সম্মতি দিয়েছিলেন। সম্মতি না-থাকলে এজলাসে বসে যখন আমরা নির্দেশ দিচ্ছিলাম, তখন আপনি আপত্তি করেননি কেন?” এর পর ১৪ মে-র নির্দেশের এক একটি অংশ ধরে তিনি প্রশ্ন করতে শুরু করেন কমিশনের আইনজীবীকে। |
|
|
অরুণকুমার মিশ্র
|
সমরাদিত্য পাল |
|
প্রথম প্রশ্ন: নির্বাচনের সময় বাহিনী প্রসঙ্গে আপনি সহমত হননি?
সমরাদিত্যবাবু: এখানে মূল আলোচ্য বিষয় হল নির্দেশের প্রতিটি অংশে কমিশন সম্মতি দিয়েছিল, না দেয়নি। অন্য প্রসঙ্গ আলোচনা করে লাভ নেই।
দ্বিতীয় প্রশ্ন: কমিশন তিন দফায় পঞ্চায়েত নির্বাচন চেয়েছিল। হাইকোর্ট সেই নির্দেশ দিয়েছে। কমিশন কি তাতে একমত হয়নি?
সমরাদিত্যবাবু: উভয় পক্ষের সম্মতিতে নির্দেশ, এই কথাতেই আমার আপত্তি।
তৃতীয় প্রশ্ন: আদালত বিভিন্ন বিষয়ে দু’পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। তাতে আদালতের মনে হয়েছে, দু’পক্ষই এই নির্দেশের সঙ্গে সহমত। আপনার কি কিছু বলার আছে?
সমরাদিত্যবাবু: ডিভিশন বেঞ্চ যে কোনও রায় বা নির্দেশ দিতে পারে। তাতে কোনও পক্ষ সন্তুষ্ট হতে পারে। আবার না-ও হতে পারে। কিন্তু কোনও পক্ষ কি আপত্তি করতে পারে? আমি রায়ের বিরোধিতা করতে পারি না। কিন্তু তার মানে কি এই যে, সম্মতির ভিত্তিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে?
চতুর্থ প্রশ্ন: বাহিনী নিয়ে কি আপনার আপত্তি ছিল?
সমরাদিত্যবাবু: কমিশন সব বুথে দু’জন করে সশস্ত্র পুলিশ চেয়েছিল। হাইকোর্ট তা মানেনি। এখানে কমিশনের সম্মতি ছিল না।
প্রধান বিচারপতি: কমিশন ও রাজ্য সরকার উভয় পক্ষই অবাধ ও মুক্ত নির্বাচন চেয়েছে। হাইকোর্টও তাই নির্বাচন কী ভাবে করা যায়, তা দেখেছে। নির্দেশের প্রতি পদে সম্মতি রয়েছে কিনা, তা দেখা হয়নি।
বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী: নির্দেশে সব সময়েই এমন কিছু কিছু শব্দ ব্যবহার করা হয়, যেখানে আদালত মনে করে এই বিষয়ে কোনও পক্ষেরই আপত্তি নেই।
সমরাদিত্যবাবু: এই নির্দেশের কোনও একটি অংশের সঙ্গে আমি একমত হতে পারি। তার মানে এই নয় যে, সামগ্রিক নির্দেশটি উভয় পক্ষের সম্মতিতে হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি: সামগ্রিক নির্দেশটি আপাত ভাবে উভয় পক্ষের সম্মতিতে হয়েছে বলা যায়।
সমরাদিত্যবাবু: গোটা নির্দেশটা উভয় পক্ষের সম্মতিতে হয়েছে, এই কথাতেই আমার আপত্তি।
দীর্ঘ বিতর্কের পর ঠিক হয়, ১৪ মে-র নির্দেশের কোন কোন জায়গায় তাদের সম্মতি নেই, তা নির্দিষ্ট করে জানাবে নির্বাচন কমিশন। তার ভিত্তিতে ডিভিশন বেঞ্চ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পান্ডে এ দিন বলেন, “নির্দেশের কোন কোন বিষয়ে আমরা সহমত হতে পারছি না, তা আলোচনার ভিত্তিতেই ঠিক করব।” এ দিন রাতে মীরার সঙ্গে কথা হয় সমরাদিত্যবাবুর। ঠিক হয়, নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে জটিলতা কাটাতে প্রয়োজনে ডিভিশন বেঞ্চের কাছে নতুন করে আবেদন করবে নির্বাচন কমিশন।
|