উদ্বোধনের পর থেকে অনেক গুলি মেলাই হয়ে গিয়েছে দুর্গাপুর হাটে। বিক্রিবাটাও মোটামুটি ভাল হয়েছে। কিন্তু বছর পেরোলেও মেলায় পৌঁছনোর জন্য প্রয়োজনীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই বলে ক্ষোভ বাসিন্দাদের।
জুলাই মাসের গোড়াতেই মেলা শুরুর কথা ছিল। কিন্তু ঝড়বৃষ্টিতে সুসজ্জিত এই হাটের ক্ষতিতে তা পিছিয়ে গিয়েছে অনেকটাই। জোর কদমে চলছে মেরামতির কাজ। সব কিছু ঠিক থাকলে জুলাইয়ের মাঝেই মেলা হবে বলে জানা গিয়েছে।
দিল্লি হাটের আদলে দুর্গাপুর হাটের নির্মাণ কাজ শেষ হয় গত বছরের প্রথম দিকে। নির্মাণ কাজের জন্য কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রকের হ্যান্ডিক্রাফ্টস ও হ্যান্ডলুম বিভাগের তরফে যৌথভাবে ১ কোটি ৫ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়। ২ কোটি ১৪ লক্ষ টাকা অনুদান দেয় রাজ্য সরকার। হাটের জন্য প্রয়োজনীয় সাড়ে পাঁচ একর জমি ও ১৫ লক্ষ টাকা দেয় এডিডিএ। গত বছরের ১৩ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই হাটের উদ্বোধন করেন। সেই সময়ে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার ক্ষুদ্র ও হস্তশিল্পীরা তাঁদের পসরা নিয়ে আসেন এই মেলায়। তার পর থেকে প্রায় দশটি মেলা হয়েছে এখানে। কিন্তু হাটে যাওয়ার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা তেমন উন্নত নয় বলে অভিযোগ ক্রেতা-বিক্রেতা দুই পক্ষেরই। |
জাতীয় সড়ক লাগোয়া দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা পলাশডিহা মোড়। |
মেলাপ্রেমী মানুষের অভিযোগ, মেলার সবচেয়ে কাছের বাসস্ট্যান্ড বলতে সিটি সেন্টার। সেখান থেকে মেলার দূরত্ব প্রায় দেড় কিলোমিটার। তাই বাসে উঠতে বা বাস থেকে নেমে হেঁটেই পার হতে হয় এই রাস্তা। জাতীয় সড়ক লাগোয়া পলাশডিহা ক্রসিং পার হতে হয়। তাই দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে সব সময়। অতীতেও এখানে বহু দুর্ঘটনা ঘটেছে। সন্ধ্যার পরে মেলায় যাওয়ার জন্য এই ক্রসিং পেরনো বেশ ঝুঁকির।
স্থানীয় বাসিন্দারা আরও জানান, শুধু পথচারী নয়, মোটরবাইক বা সাইকেল নিয়ে যাতায়াতও বেশ ঝুঁকির। অভিযোগ, রাতের আলো আঁধারিতে দ্রুতগতির ট্রাকের গতিবিধি বোঝা যায় না। ওই রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ঠিক নয়।শুধু সিগন্যালের আলোই ভরসা। তাঁদের দাবি, স্থায়ী ট্রাফিক স্ট্যান্ড গড়ে তোলা জরুরি। তাঁদের আরও অভিযোগ, জাতীয় সড়কের নীচে একটি সরু ভূগর্ভ পথ রয়েছে। কিন্তু সেখান দিয়ে নর্দমার নোংরা জল বয়ে যায়। তাছাড়া ওই ভূগর্ভপথ এত অপরিসর যে এক সঙ্গে দু’টি মোটর সাইকেলও চালানো যায় না। কাজেই একমাত্র সরাসরি মিনিবাস যোগাযোগ চালু হওয়াই সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায়, মত বাসিন্দাদের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক টানা পনেরো দিন ধরে চলে এই হাটের মেলা। বিক্রিবাটা মোটামুটি হয়। তবে ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা যথাযথ হলে ভিড় বাড়বে আরও। ‘আরবান হাটে’র দায়িত্বে থাকা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের আধিকারিক মৌ সেন জানান, প্রথম থেকেই বিষয়টি নিয়ে মহকুমাশাসক ও মহকুমা পরিবহণ আধিকারিককে চিঠি দিয়েছেন। তাঁর আর্জি, বাসরুটের মধ্যে রাস্তার এই অংশটি ঢুকিয়ে নেওয়া হোক। পূর্বতন মহকুমাশাসক আয়েষারানী আহমেদের উদ্যোগে মেলা চলাকালীন কয়েকটি মিনিবাসকে ওই রাস্তায় চালানো হয়েছিল। কিন্তু ওই অস্থায়ী ব্যবস্থার কথা অনেকেই জানতে পারেননি। |
মৌ দেবী বলেন, “আরবান হাট ছাড়াও পলাশডিহার এই অঞ্চলে আইটি হাব, বেসরকারি চক্ষু হাসপাতাল, স্কুল রয়েছে। কাজেই বাস রুট চালু হলে অনেকেরই সুবিধা।” পলাশডিহার স্থানীয় বাসিন্দাদেরও বক্তব্য, স্টেশন থেকে প্রান্তিকায় যে সব বাস যায়, সেগুলিকে জাতীয় সড়ক পার করে ওই এলাকা দিয়ে যাওয়া জাতীয় সড়কের সমান্তরাল রাস্তা ধরে নিয়ে গিয়ে গাঁধী মোড়ের কাছে জাতীয় সড়ক ধরিয়ে দিলেই হয়।
দুর্গাপুরের মহকুমা পরিবহণ আধিকারিক অনিমেষ সিংহ রায় জানান, স্থায়ীভাবে বাসের রুট পরিবর্তনের বিষয়টি তাঁদের হাতে নেই। মহকুমা প্রশাসনের নির্দেশে অস্থায়ীভাবে আগের মেলায় তিনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে মিনিবাসগুলিকে ওই এলাকার দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু অস্থায়ীভাবে এই ব্যবস্থার খবর যে সবার কাছে পৌঁছয়, তা না। একটু সময় বেশি লাগলে যাত্রীদের কেউ কেউ বিরক্তও হন। তিনি বলেন, “মানুষের চাহিদার কথা ভেবে স্থায়ী রুট তৈরি হলে ভাল হয়। সে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন জেলা পরিবহণ আধিকারিক।” বর্ধমানের জেলা পরিবহণ আধিকারিক আশিস সাহা জানান, তাঁর কাছে এই ধরনের কোনও অভিযোগ এখনও আসেনি। রুট পরিবর্তন চেয়ে কেউ আবেদন করলে তিনি সামনের পরিবহণ সংক্রান্ত বৈঠকেই সমস্যার সমাধান করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, “মানুষজন ফ্যাক্স করে তাঁদের দাবির কথা জানাতে পারেন ০৩৪২-২৫৬৯৫১৯ নম্বরে।”
|