শুরু হয়েও থমকে রয়েছে ‘আরবান হাট’ গড়ার কাজ
হাট বসে গ্রামে। কিন্তু ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উপযুক্ত বিপণনের জন্য খোদ দুর্গাপুরেই শহুরে হাট গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছিল রাজ্য সরকার। বছর দুয়েক আগে তৎকালীন বাম সরকারের তত্ত্বাবধানে নির্মাণকাজও শুরু হয়। কিন্তু তার পরে থমকে গিয়েছে উদ্যোগ।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৯ সালে ‘দিল্লি হাট’-এর অনুকরণে এ রাজ্যে প্রথম ‘আরবান হাট’ গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয় দুর্গাপুরে। সে বছর ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সড়কের পাশে নতুন গড়ে ওঠা সংযোগকারী রাস্তার পাশে পলাশডিহায় প্রকল্পের শিলান্যাস করেন তদানীন্তন ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পমন্ত্রী মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়। মূলত পিছিয়ে পড়া এলাকার ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের প্রকৃত বিপণনই ছিল এই হাট গড়ে তোলার উদ্দেশ্য। পরে কলকাতা, শিলিগুড়ি ও শান্তিনিকেতনেও এমন হাট গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছিলেন মন্ত্রী।
পলাশডিহায় তোলা নিজস্ব চিত্র।
হাট গড়ার জন্য আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এডিডিএ) পাঁচ একর জমি বরাদ্দ করে। এডিডিএ-কে দিয়েই এই প্রকল্পের কাজ করাচ্ছিল ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতর। রাজ্যে বাম জমানার অবসানের পরে এডিডিএ-র কর্তৃত্ব এসেছে তৃণমূলের হাতে। তৃণমূল বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বর্তমানে এডিডিএ-র চেয়ারম্যান। কিন্তু প্রকল্পটি কী অবস্থায় রয়েছে, তা নিয়ে তিনি কার্যত কিছুই জানাতে পারেননি। তিনি শুধু বলেন, “খোঁজ নিয়ে দেখছি।” অন্য দিকে, যিনি চেয়ারম্যান থাকাকালীন এডিডিএ এই প্রকল্পে হাত দিয়েছিল, সেই সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী আবার বলেন, “আমরা যখন দায়িত্বে ছিলাম তখন সব ঠিকঠাকই চলেছে। এখন কেন বন্ধ, তা আমার জানা নেই।”
গত কয়েক বছরে দুর্গাপুরে গড়ে উঠেছে বড় বড় বাজার। কিন্তু হস্ত ও কুটির শিল্পের বিশেষ দোকান নেই এই শহরে। এ দিকে, গ্রামাঞ্চলের অনেক শিল্পীই তাঁদের জিনিস বাজারে নিয়ে আসতে পারেন না। এই সমস্যা দূর করতেই হাট তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ঠিক হয়, এই জমিতে ক্ষুদ্র ও হস্ত শিল্প সামগ্রী বিক্রির জন্য স্থায়ী স্টল থাকবে। গড়া হবে একটি মুক্তমঞ্চ। লোক সংস্কৃতির প্রসারের জন্য সেখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করতে পারবেন শিল্পীরা। এ ছাড়া, থাকবে একটি ‘চিলড্রেন্স কর্নার’। মেলা আয়োজনের মতো পরিকাঠামো গড়ার পরিকল্পনাও হয়েছিল। দরপত্র চূড়ান্ত হওয়ার পরে নির্মাণ কাজও শুরু হয়।
তার পরে পেরিয়ে গিয়েছে প্রায় দু’বছর। কিন্তু কাজ বিশেষ এগোয়নি। শেষ সাত-আট মাস নির্মাণ কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। চত্বরে চড়ে বেড়াচ্ছে গরু-ছাগল। অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে অর্ধসমাপ্ত নির্মাণও। স্থানীয় বাসিন্দা সৌমেন্দুশেখর রায়, শ্রাবণী রায়রা বলেন, “যে দিন এই প্রকল্পের শিলান্যাস হয়, আমরা ভেবেছিলাম এই হাটকে ঘিরে এলাকার চেহারা বদলে যাবে। কাজও শুরু হল। কিন্তু অনেক দিন সব বন্ধ। আদৌ কিছু হবে কি না, তা বুঝতে পারছি না।” হতাশ এলাকার খুদেরাও। চিলড্রেন্স কর্নার গড়ে উঠলে খেলাধুলোর জায়গা পেত তারা।
দুর্গাপুরে এই প্রকল্প গড়ে তোলার জন্য গোড়া থেকে উদ্যোগী হয়েছিল স্থানীয় পুরসভা। কিন্তু প্রকল্পটি আপাতত কী অবস্থায় আছে, তা স্পষ্ট নয় তাদের কাছেও। পুরসভার ডেপুটি মেয়র শেখ সুলতান জানান, বিধানসভা নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই আরবান হাট গড়ার কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। তিনি বলেন, “আরবান হাট গড়ে উঠলে শিল্পী ও ক্রেতা উভয়েই উপকৃত হতেন। কেন এই প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে, তা জানা নেই। সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরে এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেব।”
প্রকল্পের কী অবস্থা, তা-ই যখন কেউ জানেন না, ভবিষ্যৎ কতটা অনিশ্চিত তা বলাই বাহুল্য।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.