|
|
|
|
নন্দীগ্রামে লড়াইয়ে তৃণমূল বনাম তৃণমূল
আনন্দ মণ্ডল • তমলুক |
বামেরা নেই বললেই চলে। নন্দীগ্রামে এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলকে লড়াই করতে হবে দলেরই একাংশের সঙ্গে। মনোনয়ন-পর্ব শেষ হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, নন্দীগ্রামের বিভিন্ন পঞ্চায়েতে বামেরা প্রার্থী দিতে না পারলেও কংগ্রেস ও নির্দল প্রার্থীরা দাঁড়িয়েছেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে। স্থানীয় ভাবে খোঁজ নিলে দেখা যাচ্ছে নির্দল প্রার্থীদের অনেকেই তৃণমূলের নেতা-কর্মী। এমনকী দলের পঞ্চায়েত সদস্যও আছেন ‘বিক্ষুব্ধ’দের দলে।
নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৪০টি আসনের মধ্যে মাত্র ২৭টিতে দলীয় প্রতীক নিয়ে বাম প্রার্থীরা লড়ছেন। আর পঞ্চায়েত সমিতির ৩০টি আসনের মধ্যে মাত্র ৫টিতে বাম প্রার্থী রয়েছেন। জেলা পরিষদের তিনটি আসনে বামেরা প্রার্থী দিলেও তার মধ্যে দু’জনই নন্দীগ্রামের বাইরের। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ভেকুটিয়া, হরিপুর ও নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় শুধু কিছু আসনে বামেরা প্রার্থী দিতে পেরেছে। সোনাচূড়া, গোকুলনগর, কেন্দেমারি, সামসাবাদ-সহ বাকি ৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির অধিকাংশ আসনেই প্রার্থী দেয়নি তারা। তাই বলে এই সমস্ত আসনে যে তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছে, এমনটা নয়। অধিকাংশ আসনেই তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রয়েছেন কংগ্রেস ও নির্দল প্রার্থীরা। সোনাচূড়া গ্রামপঞ্চায়েতের ১৩ টি আসনের মধ্যে একটি আসন তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতলেও বাকি আসনের মধ্যে ১০টিতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেস। এখানে বামফ্রন্টের কোনও প্রার্থী নেই।
এদিকে ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় নির্দল প্রার্থীদের অধিকাংশই তৃণমূলেরই বিক্ষুদ্ধ কর্মী-সমর্থক বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। বিক্ষুদ্ধদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যও। গোকুলনগর গ্রাম পঞ্চায়েতে এ বার ১৬টি আসনের একটিতেও প্রার্থী দিতে পারেনি বামেরা। কিন্তু তিনটি আসনে তৃণমূল প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতলেও বাকি ১৩টি আসনেই নির্দল প্রার্থী রয়েছেন। যাঁরা সকলেই তৃণমূলের কর্মী বলে পরিচিত এলাকায়। এমনকী পারুলবাড়ি ৫ নম্বর বুথে এ বার তৃণমূলের প্রার্থী তাপস পাত্রের বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হয়ে লড়ছেন তৃণমূলেরই পঞ্চায়েত সদস্য অশোক মুনিয়ান। ওই আসনে আরও একজন নির্দল প্রার্থী তুহিন জানাও এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত।
দলীয় সূত্রে খবর, ২০০৩ ও ২০০৮ সালে দু’দফায় তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে জেতা অশোকবাবু এ বার তৃণমূলের প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও দলীয় ভাবে তাপসবাবুকে প্রার্থী করা হয়। ক্ষুদ্ধ অশোকবাবু মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করে নির্দল প্রার্থী হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন। অশোকবাবু বলেন, “আমি কঠিন সময়ে দু’বার তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে জিতেছিলাম। এ বারও প্রার্থী হওয়ার জন্য দলের ব্লক সভাপতির কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম। কিন্তু স্থানীয় দুই নেতার কোন্দলের জন্য পঞ্চায়েত সদস্য হিসেবে আমার মূল্যায়ন হল না। তাই নির্দল হিসেবেই লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
তৃণমূলের দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গোকুলনগর অঞ্চলে দুই নেতা স্বদেশ দাস অধিকারী ও স্বদেশ দাসের গোষ্ঠী রয়েছে। ব্লক নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে উভয় গোষ্ঠীর মধ্যে আসন সমঝোতা হলেও সবাইকে খুশি করা যায়নি। এমনকী পঞ্চায়েত সমিতির আসনে প্রার্থী খোদ স্বদেশ দাস অধিকারী ও স্বদেশ দাসের বিরুদ্ধেই নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়াই করেছেন তৃণমূলের দুই স্থানীয় নেতা মোহন মাইতি ও রামহরি পাত্র। নন্দীগ্রাম-১ ব্লক তৃণমূল যুব কংগ্রেস কমিটির সদস্য মোহনবাবু বলেন, “দলের টিকিট না পেয়ে আমি পঞ্চায়েত সমিতিতে ও আমার বৌদি গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনে নির্দল হিসেবে লড়াই করছি।” রামহরিবাবু আবার তৃণমূলের সঙ্গে কোনও যোগ থাকার কথাই অস্বীকার করে বলেন, “আমি পুরোপুরি নির্দল। নির্দল প্রার্থী হিসেবেই তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়াই করছি।”
এদিকে সামসাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৩টি আসনের মধ্যে একটি আসন তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতলেও বাকি ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের মধ্যে ১০টিতে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন এলাকার পরিচিত তৃণমূল কর্মীরাই। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আবু তাহেরের অনুগামী হিসেবে পরিচিত সামসাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান শেখ খুসনবি, পঞ্চায়েত সদস্য কবীর মহম্মদ ও দলের অঞ্চল সভাপতি শাহ আলমের বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়াই করছেন যথাক্রমে শেখ ফুকুরুদ্দিন, অতনু জানা ও শেখ রহিমুল ইসলাম নামে সুফিয়ান অনুগামী হিসেবে পরিচিত তিন তৃণমূল কর্মী। সম্প্রতি সামসাবাদে এক দলীয় সভায় এদের সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই বলে ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি মেঘনাদ পাল। তারপরও সুফিয়ান এদের প্রকৃত তৃণমূল কর্মী বলে দাবি করেছিলেন। পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে এই ভাবেই নন্দীগ্রামের বেশ কিছু এলাকায় তৃণমূল বনাম তৃণমূলের লড়াই জমে উঠেছে।
তৃণমূলের ব্লক সভাপতি মেঘনাদ পাল তা মেনে নিয়ে বলেন, “দলের অনেকেই প্রার্থী হিসাবে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। সকলকে সেই সুযোগ দেওয়া যায়নি। তাঁরা অনেকেই নির্দল হয়ে লড়ছেন। আমি প্রত্যেকের কাছে অনুরোধ করব, দলের কথা ভাবতে। তৃণমূলের হয়ে লড়তে।” অশোকবাবুর প্রতীক না পাওয়া প্রসঙ্গে মেঘনাদবাবুর বক্তব্য, “আমরা নিচুতলার কর্মীদের থেকে প্রার্থীদের নাম সংগ্রহ করেছি। অশোকবাবুর নাম উঠে আসেনি বলে তিনি প্রতীক পাননি।”
এ দিকে, এই সব ডামাডোলের মধ্যেই নন্দীগ্রাম ২ ব্লকের আমদাবাদ পঞ্চায়েতের সাতেঙ্গাবাড়ি বুথে ভোট বাতিল হয়ে গিয়েছে। তৃণমূলের এক জনই মনোনয়ন দিয়েছিলেন এই আসনে। তিনি পঞ্চায়েতের ঠিকাদার বলে স্ক্রুটিনির সময় মনোনয়নটি বাতিল হয়ে গিয়েছে। |
|
|
|
|
|