চুদুরবুদুর গালাগালি নয়। তবুও বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ উত্তাল হল এই একটি শব্দে। শ্লীল না অশ্লীল, তা নিয়ে দীর্ঘ বাদানুবাদ। তবু ফয়সালা হয়নি। শেষ পর্যন্ত স্পিকার শিরিন শারমিন নির্দেশ দিয়েছেন, চুদুরবুদুর-এর ঠিকুজি-কুলুজি পরীক্ষা করে দেখা হবে। শব্দটি অশ্লীল হলে কার্যবিবরণী থেকে বাদ যাবে, না হলে নয়।
বাংলাদেশে তো বটেই, এ বাংলাতেও লঘু আড্ডায় চুদুরবুদুর আদৌ অপরিচিত শব্দ নয়। কলকাতার ভাষাবিদ পবিত্র সরকার বা ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক নির্মল দাস, দু’জনেরই অভিমত চুদুরবুদুর গ্রাম্য শব্দ, অশ্লীল কিছুতেই নয়। অর্থ বাড়াবাড়ি করা বা গড়িমসি করা। অভিধান বলছে, বাংলাদেশের একটা গ্রাম্য খেলারও নাম চুদুরবুদুর।
বিরোধী বিএনপি সাংসদ রেহানা আখতারের মুখ এমনিতেই বেশ লাগামছাড়া। সরকারকে আক্রমণ করতে তিনি যে সব বাছা বাছা শব্দের তির ছোড়েন, তার একটা বড় অংশই পরে কার্যবিবরণী থেকে মুছে ফেলতে হয়। রবিবারও সংসদে দাঁড়িয়ে সরকারকে তুলোধোনা করছিলেন ফেনির এই নেত্রী। বিএনপি চায় বরাবরের মতো নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারই দেশে সাধারণ নির্বাচন করুক। শাসক আওয়ামি লিগ এ বারে আর তা চাইছে না। রেহানা ফেনির কথ্য ভাষায় সরকারকে হুঁশিয়ারি দায়ে বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে চুদুরবুদুর চইলত না!”
ব্যাস! রে রে করে তেড়ে যান শাসক দলের সাংসদরা। অধিবেশন লাটে ওঠার জোগাড় হয়। সরকারি দলের হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, চুদুরবুদুর অশ্লীল কথা, অশোভন। কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়া হোক। বিএনপি-র সাংসদদের দাবি, একেবারেই না। ফেনি কেন, বাংলাদেশের সর্বত্রই চুদুরবুদুর চালু শব্দ। শাসক দলের সাংসদেরা খামোকাই এ নিয়ে চুদুরবুদুর করছেন। এটা বাদ দিতে হলে তো গোটা কার্যবিবরণীই জলে ধুয়ে সাদা করে ফেলতে হয়! শেষ পর্যন্ত স্পিকার জানিয়েছেন, চুদুরবুদুর-এর পরীক্ষা হবে। শ্লীল হলে থাকবে, না হলে বাদ।
ফেণি জেলার পাশে ফেণি নদীর এ পারে ত্রিপুরার সাব্রুম জেলা। যথেষ্টই মিল দু’পারের ভাষায়। চুদুরবুদুর সেখানেও খুবই চালু, জানিয়েছেন ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্মল দাস। তিনি বলেন, “শব্দটিকে কিছুতেই অশ্লীল বলা যাবে না। তবে ঠিক, ভদ্রসমাজে তেমন ব্যবহার হয় না। উল্টোপাল্টা কাজ করা, নড়বড়ে থাকা, ইত্যাদি অর্থ ধরে এই শব্দের ব্যবহার।” অধ্যাপক পবিত্র সরকারও জানিয়েছেন, চুদুরবুদুর গ্রাম্য শব্দ, অশ্লীল নয়।
ঢাকার বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধানে দিব্যি জায়গা করে নিয়েছে চুদুরবুদুর। ওই অভিধানের প্রধান সম্পাদক ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্। ওই অভিধানে চুদুবুদুর-এর তিনটি অর্থ দেওয়া হয়েছে। এক, বাড়াবাড়ি করা। সিলেট, পাবনা অঞ্চলে এই অর্থে ব্যবহার দেখা যায়। দুই, গড়িমসি। এই অর্থে ব্যবহার বেশি ময়মনসিংহ, ঢাকায়। তা ছাড়া এক ধরনের খেলাও রয়েছে, যার নাম চুদুরবুদুর।
চুদুরবুদুর এল কোথা থেকে? পবিত্রবাবু বলেন, “এটা নিশ্চিত ভাবেই অনার্য শব্দ। বাংলায় অনার্য শব্দের উৎস তিনটি। টিবেটো-বার্মান, অস্ট্রিক এবং দ্রাবিড়। এরই কোনওটি থেকে এই ধ্বন্যাত্মক শব্দটি এসে থাকবে।” |