মুক্তো-ধারা
বিয়ের পরে সে দিন শ্যুটিংয়ে ফিরলেন মিসেস নিসপাল সিংহ রানে। শুরু করলেন তাঁর দ্বিতীয় ইনিংস। কোয়েল মল্লিক। পরনে লেহেঙ্গার জমকালো সাজ, সঙ্গে আমেরিকান ডায়মন্ড সেটিং মুক্তোর ভারী গয়না। গ্ল্যামার উছলে উঠল এমনতরো সাজে!
অনেকের মতোই মুক্তোর অন্ধ ভক্ত কোয়েল। কথায় কথায় সে দিন বলছিলেন মুক্তো তাঁর অল টাইম ফেভারিট। মায়ের কাছ থেকেই কোয়েলের মুক্তোপ্রীতি। ‘‘মা এত পছন্দ করেন, যে হায়দরাবাদ গেলেই চারমিনারের পাশের দোকানগুলি থেকে রঙিন মুক্তো কেনা চাই-ই চাই। এক বার ভার্জিনিয়ায় গিয়ে দারুণ মজা হয়েছিল। ওখানে পার্ল ফেস্টিভ্যাল চলছিল। সেই উৎসবের একটি পর্বে খুলতে দেওয়া হচ্ছিল ঝিনুক। যাঁর খোলা ঝিনুকে মুক্তো থাকবে, সেটা সে-ই পেয়ে যাবে। আমার ঝিনুকটাতে ছিল এক জোড়া মুক্তো’’!
সত্যিই, মুক্তোই সেই গয়না, যা দেশ-কালের সীমা মানে না। মুক্তো সব প্রজন্মের জন্য। এক সময় রাজা-রাজড়াদের গলা জুড়ে থাকত মুক্তোর বেশ কয়েকটি লম্বা-চওড়া হার। মুক্তোর সেই কদরে আজও এতটুকু ভাটা পড়েনি। অষ্টাদশী থেকে ষাটোর্ধ্ব যে-ই পরুন, তাঁকে তাঁর মতো করে সুন্দর দেখাবে। এখানেই মুক্তোর ইউএসপি। মুক্তো সব সময়ই ইন। রানি এলিজাবেথের কথাই ধরুন। বৃদ্ধ রানিকে যখনই দেখা যায়, কানে মুক্তোর দুল, গলায় একছড়া মুক্তোর মালা। অথবা দেখুন এই প্রজন্মের ক্যাথরিন মিডলটনকে। পশ্চিমী পোশাকের সঙ্গে কানে মুক্তোর টপ বা হাতে শুধুই মনকাড়া একটি মুক্তোর ব্রেসলেট। ব্রিটিশ রাজপরিবার ছেড়ে চোখ ফেলুন হিলারি ক্লিন্টন বা মিশেল ওবামার দিকে, মুক্তোর সাজেই অধিকাংশ সময় দেখা যাবে দুই জনকেই।

পশ্চিমী পোশাকের সঙ্গে দারুণ মানানসই হলেও শাড়ির সঙ্গে কিন্তু মুক্তোর মোটেও আড়ি নয়। মহারানি গায়ত্রী দেবীকে দেখলেই তা বোঝা যাবে। রানির মনকাড়া সৌন্দের্যর যোগ্য সঙ্গত বুঝি এক ছড়া মুক্তোর মালা। আসলে আভিজাত্যে ভরপুর মুক্তোর গয়না। জলের সঙ্গে যোগ থাকায় বোধহয় জলের গুণটাই মুক্তোর গুণ। ‘‘মুক্তোর বয়স বাড়ে না। যিনিই পরুন, তাঁকে তাঁর মতো করে সুন্দর লাগবে,” বলছিলেন কলকাতার এক স্বনামধন্য স্বর্ণবিপণির কর্ণধার অনর্ঘ্য চৌধুরী। সাবেকি বা আধুনিক যে কোনও সাজের সঙ্গে দিব্যি চলে। যে ভাবে পরুন, মুক্তো ঠিক সে ভাবেই সুন্দর হয়ে উঠবে। অথচ সাজকে ছাপিয়ে যাবে না।

এ প্রজন্মের মুক্তো
মুক্তোয় মজেছে আজকের টলিউডও। অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী বলছিলেন, “গয়নার ওপর আমার কোনও ঝোঁক নেই। কিন্তু মুক্তো দারুণ লাগে। আসলে আমার দিদু মুক্তোর গয়না পরতেন। তাতে মিষ্টি দিদুকে আরও মিষ্টি লাগত। তাই থেকে মুক্তোর প্রতি একটা ভালবাসা তৈরি হয়ে গেছে। এ বারের পুজোয় মাকে মুক্তোর সেট দিয়েছি। আর মা পরার আগে সেটা নিজেই পুজোয় পরে ফেলেছি।’’
বিয়েতে কুড়িটার মতো মুক্তোর সেট পেয়েছেন অভিনেত্রী অনিন্দিতা বসু। বললেন, “মা বিয়েতে আমাকে দিয়েছিলেন কুন্দনের লকেট দেওয়া মুক্তোর লম্বা হারের সেট। মুম্বই থেকে এনেছিলেন। দারুণ দেখতে।” মুক্তোর গয়না শাড়ির সঙ্গেই বেশি পরি। নতুন কিছু চোখে পড়লে কিনে ফেলি। মুক্তোর প্রচুর কালেকশন আছে অভিনেত্রী সম্পূর্ণা লাহিড়ীরও। জানালেন, “হায়দরাবাদ থেকে কিনেছিলাম দু’ছড়া লম্বা হার। সঙ্গে মানানসই লম্বা দুল। ওটাই আমার সব থেকে পছন্দ। ঢাকাই শাড়ি পরলেই আমি সেটটা পরি। আঙুরের থোকার মতো মুক্তোর দুলও আমার খুব পছন্দের। এটাও হায়দরাবাদ থেকে কেনা। মুক্তো এত ভালবাসি যে মা মাঝেমাঝেই আমার জন্য মুক্তো কেনেন। এই জন্মদিনেও মা মুক্তো দিয়েছেন।’’
যতনে মুকুতা
• সরাসরি পারফিউম লাগাবেন না।
• খুলে রাখার সময় মুক্তোর গয়না নরম কাপড় দিয়ে মুছে নেবেন।
• নরম কাপড়ে মুড়ে রাখবেন। আলো হাওয়া লাগবে এমন জায়গায় মুক্তো রাখলে ভাল।
• নারকেল তেলে ন্যাকড়া ভিজিয়ে মুক্তোর গয়না মুছে রাখলে ঔজ্জ্বল্য বাড়বে।
মুক্তোর সাতকাহন
হার, সীতাহার বা গলার সঙ্গে লেগে থাকা চোকার। একটি-দু’টি বা তিনটি স্ট্রিং-এ বোনা। কোনওটাতে শুধুই মুক্তোর সারি। আবার কোনওটায় আমেরিকান ডায়মন্ড বা সিলভারের ওপর গোল্ড প্লেটেড রকমারি পেনডেন্ট। তাতেই অদ্বিতীয় মুক্তোর গয়না। কানের জন্য টপ অথবা ঝোলা দুল। আর হাতের ব্রেসলেট বা সরু চুড়ি। এই নিয়েই মুক্তোর গয়নার যাবতীয় সাম্রাজ্য। একটি বিখ্যাত মুক্তো বিপণির তরফ থেকে জানা গেল সাদা মুক্তোর চাহিদা বেশি হলেও আজকের তন্বীদের মন ছুঁয়েছে রঙিন মুক্তো। তার মধ্যে প্রথম সারিতে আছে কালো আর গোলাপি রঙের মুক্তোর গয়না। রঙিন মুক্তোর দাম কিন্তু কিঞ্চিৎ বেশি। চাহিদা বাড়ছে ওয়েস্টার্ন লুক-এর সিঙ্গল সাইড বা ডাবল সাইড পেনডেন্ট মুক্তোর সেটেরও। শেষ প্রান্তে নয়, যে পাশে শাড়ির আঁচল তার উল্টো দিকে হারের এক পাশে থাকবে পেনডেন্ট। শিফনের মতো হালকা শাড়ির সঙ্গে এ ধরনের গয়না দারুণ মানানসই। আবার কোট-প্যান্ট বা স্কার্টের মতো পশ্চিমী পোশাকের সঙ্গে দিব্যি পরতে পারবেন এই রকম গয়না।
মাল্টিপ্লেক্সের সেমি-প্রেশাস পাথরের বিখ্যাত গয়নার দোকানের তরফ থেকে নিখিল কোঠারি জানালেন, উপহার হিসেবে আজকাল মুক্তোর গয়নার চাহিদা বাড়ছে। বাজেটের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কেউ কিনছেন মুক্তোর সেট, আবার কেউ কিনছেন ফ্লেক্সিবেল ব্রেসলেট। একটা স্ট্রিং-এর মুক্তোর গলার গয়নার দাম মোটামুটি ভাবে ৫০০ থেকে শুরু। ডাবল লাইন হলে দাম শুরু হবে ১১০০ থেকে। অনর্ঘ্য জানালেন, “আজকালকার বিয়েতে সকাল আর রাতে একই গয়না পরে থাকার রেওয়াজ উঠে গিয়েছে। সেখানে বিয়ের দিন সকালের সাজের জন্য অনেকেই পছন্দ করছেন মুক্তোর সেট। পেনডেন্ট বসানো বড়সড় মুক্তোর সীতাহার, সঙ্গে মানানসই দুল আর ব্রেসলেট। মোটামুটি ভাবে হাজার দশেক টাকা থেকে শুরু।”
তবে মুক্তো কিনতে গিয়ে অনেকেই ঠকে যান। মুক্তো চেনার সহজ উপায় বললেন নিখিল। মুক্তো একটু ভারী হবে। দাঁত দিয়ে খানিক ঘষলে খসখস করবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.