|
|
|
|
|
ঋত্বিকদের ডিএনএ টেস্ট
বাঙালি মধ্যবিত্ত। স্বভাবে ঘরকুনো। কিন্তু ঋত্বিক ঘটকের মতো বাউন্ডুলে, সংসার বিবাগী
মানুষ বাঙালির বড় আপনজন। কেন, কীসের আকষর্ণ? বিশ্লেষণে সুবোধ সরকার |
|
লোকটা অনেক দূর যেতে গিয়ে পা হড়কে পড়েছে নক্ষত্রে
এক মুখ খোঁচা দাড়ি, হাতে ঘটি, ঘটিতে অমৃত
তার কোনও দেশ নেই, অথচ দু’দুটো দেশ বলা হয় তাকে
সে আসলে গাঙচিল, সুবর্ণ সরোবর পান করে নিত।
লোকটা অনেক দূর গিয়ে, উঠে দাঁড়ালো নক্ষত্রে
কত মেয়ে আজও বলছে: দাদা আমি বাঁচতে চাই, হোক রক্ত কাশি
মেঘে ঢাকা তারা দেখে ভিখিরির মতো কেঁদেছে কিন্নর
কেননা আমরা আজও অঝোরে কাঁদতে ভালবাসি...
প্রতিভা আছে যাঁদের যদি তাঁরা একটু উচ্ছৃঙ্খল হন, একটু ডেয়ারডেভিল হন এবং ছিপি খুলে ঢকঢক করে গলায় ঢালতে পারেন তরল সোনা, তা হলে তাঁর মার নেই। সেলিব্রিটি না হলেও তিনি জনপদে কিংবদন্তি হয়ে ঘুরে বেড়াবেন। ঠিক যে ভাবে ঘুরে বেড়াতেন ঋত্বিক।
এ বার তাঁকে নিয়ে সিনেমা, সরাসরি তাঁকে নিয়ে না হলেও, তিনিই উঠে আসবেন পর্দায় তিনি ও তাঁর ইমেজ, তিনি ও তাঁর সময়, তিনি ও তাঁর বাংলা, বলা যায় দুই বাংলা বাংলা মানে বাঙালি, বাংলা মানে মদ। তিনি ‘ইমেজ’ দিয়েই বারদুয়ারি থেকে বর্ডার থেকে বীরভূমের চল্লিশ ডিগ্রি সেলসিয়াসের রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়িয়েছেন। আমি এখনও ভুলতে পারি না সেই দৃশ্যটা, কলেজে উঠে সুরমা ঘটকের লেখায় পড়েছিলাম, খবর এল সাঁইথিয়ার পিচ রাস্তায় একজন মাতাল শুয়ে আছে, তার মুখে গোঁজা একটা টাকা। সুরমা লিখেছেন তিনি আর কেউ নন, ঋত্বিক। যে লোকটা ‘মেঘে ঢাকা তারা’ বানায়, যে লোকটা ‘অযান্ত্রিক’, ‘কোমল গান্ধার’ করে, সে লোকটা তো আসলে কিন্নর, সে লোকটা সাঁইথিয়ার রাস্তায় পড়ে আছে? এখান থেকে শুরু হয়ে যায় একটি ‘মিথ’য়ের মৃত্যু এবং একটি কিংবদন্তির জন্ম। |
|
যদি খুব কষ্ট করে আমরা কল্পনা করি সত্যজিৎ রায় মদ খেয়ে পড়ে আছেন পার্ক স্ট্রিটে, এটা যেমন লোকে খাবে না, তেমনি শক্তি চট্টোপাধ্যায় টালমাটাল পায়ে এসপ্ল্যানেড পার হচ্ছেন, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় ট্রাফিক কন্ট্রোল করছেন এই দৃশ্যের টিআরপি এত উচ্চতার সূচক যে বারংবার রিপিট টেলিকাস্ট চাইবেন দশর্ক। কিন্তু যদি বলি শঙ্খ ঘোষকে দেখলাম খালাসিটোলায় খাচ্ছেন, লোকে আমাকে হাফ ন্যাড়া করে গাধার পিঠে চাপিয়ে কলকাতার বর্ডার পার করিয়ে দেবেন।
বাঙালির ডিএনএ টেস্ট করে কী কী পাওয়া যাবে আমি জানি না। তবে একটা জিনিস পাওয়া যাবে সেটার নাম দেবদাস। এই সে দিন একটা এলিট ক্যাম্পাসে দেখলাম এক পোস্ট গ্র্যাজুয়েট দেবদাস, তার হাতে ব্ল্যাকবেরি, কোলে ল্যাপটপ, থামস আপের বোতল থেকে গলায় ঢেলে চলেছে সুধা। যে মেয়েটি ছেড়ে গিয়েছে তার জন্য বলছে, ‘ফিরে এসো চাকা’। আর তাকে ঘিরে সান্ত্বনা দিচ্ছে প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার মতো তিনটি অ্যান্টি-টিটেনাস, যাতে দেবদাসের লিভার সিরোসিস না হয়। এ রকম একটা সিউডো-দেবদাসও এত জনপ্রিয়?
না হলে তিনটি লতানো মেয়ে ও ভাবে লতিয়ে ওঠে দেবদাসের গায়ে? বনশালির দেবদাস দেখতে গিয়ে সহ্য করতে না পেরে মাঝপথে উঠে এসেছিলাম।
এত সোনাদানা বৈভব দেখে গা রিরি করছিল। দেবদাসের আসল সোনাটা দেখাতে ভুলে গিয়েছিলেন পরিচালক। কিন্তু বাঙালির চোখে দেবদাস আজও সোনা, আজও বাঙালির আসল রোম্যান্টিক আইকন। মদ বহু প্রেমিককে গৃহহীন করেছে। কিন্তু দেবদাস যত মদ খেয়েছে তত বেশি মাতৃভূমি তৈরি করেছে বাঙালির হৃদয়ে। মা-মাসিরা বলেন, আর খাস না বাবা, কিন্তু মনে মনে কোথাও গ্লোরিফাই করে গিয়েছেন দেবদাসকে, খা, আর একটু খা। কোনও পুরুষ কোনও মেয়ের জন্য মদ্যপান করে জীবনটা নষ্ট করে ফেলল, এটা মা-মাসিদের যেমন লিঙ্গ রাজনীতির প্লেজার দিত, তেমনি এলিট ক্যাম্পাসের ঠোঁটে সিগারেট লাগানো মেয়েদেরও ইগো-মাসাজ করে দেয়।
বিদ্যাসাগরবাবু সে দিন সবে লাঞ্চে বসেছেন। ভৃত্য এসে খবর দিল, উঠোনে একজন মাতাল দাঁড়িয়ে আছে। সে বলছে, বিদ্যাসাগরকে ডাকো, আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে। বিদ্যাসাগর ‘কে রে হারামজাদা’ বলে উঠে দাঁড়ালেন, চল তো দেখি একবার। বিদ্যাসাগর এসে দেখলেন সত্যি সত্যি একটা পেঁচো মাতাল, চারটে পা থাকলেও ঠিকমতো দাঁড়াতে পারত না। মাতাল বলল, “তুমি কি আসল বিদ্যাসাগর?” আমাকে আসল বিদ্যাসাগর এনে দাও। বিদ্যাসাগর গলা গম্ভীর করে জানতে চাইলেন, “কী চাও তুমি? আমিই আসল বিদ্যাসাগর।” মাতাল একটা প্রণাম করে বলল, “আমি মদ খাব। আমাকে টাকা দাও।” বিদ্যাসাগর বললেন, কেন দেব? মাতাল বলল, “তুমি যদি মাতাল মাইকেলকে টাকা দিতে পারো মদ কেনার জন্য, আমাকে কেন দেবে না?” বিদ্যাসাগর বললেন, “কাল একটা ‘মেঘনাদ বধ’ লিখে নিয়ে এসো, তোমাকেও মদ খেতে টাকা দেব।” এটাই মনে হয় প্রথম অফিশিয়াল সিলমোহর যা মদ এবং কবিতাকে অর্থাৎ মদ এবং ক্রিয়েটিভিটিকে রাজ সিংহাসনে বসিয়েছিল। |
কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের ‘মেঘে ঢাকা তারা’য় শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় |
দাদা আমি বাঁচতে চাই |
|
আমেরিকাতে বিদ্যাসাগরের থিয়োরি অচল। হাতে বোতল নিয়ে টালমাটাল পায়ে কোনও ঋত্বিক ঘটক অস্কার নিতে উঠছেন দেখা যাবে না। মধ্যরাতে ফুটপাথ বদল হয় বলতে বলতে কোনও শক্তি চট্টোপাধ্যায় মঞ্চে উঠছেন, এখন আর দেখা যায় না। একজন উচু দরের কবির কবিতা শুনতে হলে ডলার দিয়ে টিকিট কাটতে হয় আমেরিকায়। আমেরিকা বড়লোকের দেশ, মনে রাখতে হবে সেখানে এখনও মিড ডে মিল চালু হয়নি। আমাদের দেশ গরিব, এখানে ওখানে ফ্রি লাঞ্চ মেরে দেওয়া যায়। এখানে মিড ডে মিল বন্ধ হয়ে গেলে সরকার পড়ে যাবে। সেই আমেরিকাতে অ্যালেন গিনসবার্গের মতো হাড়-কাঁপানো কবিকেও জনপ্রিয় করে তুলেছিল আমেরিকা। ভিয়েতনামের উপর যখন ঝাঁপিয়ে পড়ল আমেরিকা, গিনসবার্গ তখন ঝাঁপিয়ে পড়লেন হোয়াইট হাউজের ওপর। তাঁর প্রতিটি কবিতা তখন তাজা বোমা। তিনি তখন ঘোষিত ‘গে’। প্লেন ক্র্যাশের পর যেমন ব্ল্যাক বক্স খুঁজে বের করা হয়, তেমন আমেরিকা ধ্বংসের পর খুঁজে বের করা হবে গিনসবার্গের ‘হাউল’ কাব্যগ্রন্থ। যার ভিতর শুয়ে আছে প্রতিবাদের ব্ল্যাক বক্স। লোকে জানত গিনসবার্গ কলকাতায় গিয়ে সুনীল-শক্তির কাছে গাঁজা খাওয়া শিখে এসেছে। মদ, ভাং, এলএসডি, মারিজুয়ানা সব চলে লোকটার। তবু তাঁকে আমেরিকার মানুষ ভালবাসত, যেমন আমরা ভালবেসেছি ঋত্বিক ঘটককে। আমি ’৯৩তে প্রথমবার আমেরিকা গিয়ে নিউ ইয়র্ক থেকে ফিলাডেলফিয়া পর্যন্ত একটা গোটা দিন ধরে দেখেছিলাম মানুষ তাঁকে কী পরিমাণ ভালবাসে। যদিও তখন তিনি প্রায় নিঃশেষিত, খিটখিটে বুড়ো তাঁর এক দিকে বুদ্ধের বাণী, অন্য দিকে এডসের ভয়। সমকামীদের তখন এডসের ভয় বেড়ে গিয়েছিল দ্বিগুণ।
ঋত্বিক ঘটক জীবদ্দশায় কিছু পাননি। সমকাল তাঁকে কলা দেখিয়েছে। যেমন জীবনানন্দ দাশ, সমকালীন বাস্তবতায় তিনি ছিলেন দলিত, সমকাল তাঁকে মর্তমান কলা দেখিয়েছে। কিন্তু যিশুর মতো জীবনানন্দও কফিনের ঢাকা খুলে বেরিয়ে এসেছেন। আজ তাঁকে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় মাথায় তুলে নিয়েছে। ঋত্বিক ঘটক বাংলা সিনেমাকে, ভারতীয় সিনেমাকে যা দিয়েছেন তার ডিভিডেন্ড তিনি নিজে পাননি। পাচ্ছেন আজকের প্রজন্মের পরিচালকরা। এখন শিক্ষিত মধ্যবিত্তের জন্য যে বাংলা সিনেমা তৈরি হচ্ছে তার পিছনে কোথাও না কোথাও ওই একমুখ খোঁচা খোঁচা দাড়িওয়ালা লোকটা হাতে বোতল নিয়ে ক্যামেরার পিছনে দাঁড়িয়ে আছেন।
কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় ছিলেন ডাক্তার, এখন তিনি হোলটাইমার চিত্রপরিচালক। এটাও একটা নতুন ট্রেন্ড। কেউ রীতিমত বিজ্ঞানী, কেউ ইঞ্জিনিয়র, কেউ আইটি প্রফেশনাল এঁরা চলে আসছেন ভাল ভাল বাংলা ছবি বানাতে। ‘মেঘে ঢাকা তারা’ করার এমন কী প্রয়োজন পড়ল? কমলেশ্বর বললেন, “আমার ছবিতে ঋত্বিক একটি নক্ষত্র যিনি মেঘে ঢাকা পড়ে আছেন। এত বড় পরিচালক, জীবনে বিশেষ কিছুই পাননি, যদিও এটা বায়েপিক নয়, তবু নীলকণ্ঠ নামক প্রধান চরিত্রের মধ্য দিয়ে আমি ধরতে চেয়েছি ঋত্বিক ও তাঁর সমকালকে।” আমি জানতে চাইলাম, ঋত্বিকের কোন জাগগায় আপনি আলো ফেলেছেন? কমলেশ্বর খুব সুন্দর করে বললেন, “উনসত্তর সালে ঋত্বিক একটা অ্যাসাইলামে ভর্তি হন। সেখানে তাঁর শকথেরাপি চলে। কিন্তু সব চেয়ে আশ্চর্য হল এই যে তিনি সে অবস্থায় একটি নাটক লেখেন , নাটকটি তিনি অ্যাসাইলামের যারা আপাতদৃষ্টিতে মানসিক ভারসাম্যহীন, তাঁদেরকে দিয়ে অভিনয় করান। নাটকটির নাম ‘সেই মেয়ে’। এই একটা জায়গায় এসে আমরা ঋত্বিককে নতুন করে আবিষ্কার করি। সেই সময় একই সঙ্গে চলছিল শক থেরাপি, চলছিল নাটকের মহড়া, চলছিল অ্যাসাইলামের ভেতর বসে মদ্যপান।” |
দাদা-বোন মুখোমুখি |
সিনেমায় যেমন ঋত্বিক, ভাস্কর্যে তেমন রামকিঙ্কর। বিদেশে যেমন বিখ্যাত শিল্পীদের নিয়ে উপন্যাস লেখা হয়, তার পর রূপান্তরিত হয় সেলুলয়েডে, সেই চল আমাদের এখনও তৈরি হয়নি। ভ্যান গগ, পল গগাঁ কিংবা পিকাসোকে নিয়ে এত বড় বড় ছবি হয়েছে, রামকিঙ্করকে নিয়ে কেন হল না? শান্তিনিকেতনের মতো আড়ষ্ট ধ্রুপদী আশ্রমজীবনে রামকিঙ্কর ছিলেন একটি ল্যান্ডমাইন। সমরেশ বসু তাঁকে অমর করে রেখে গিয়েছেন এক অসমাপ্ত বিরাট উপন্যাসে, সিনেমা তৈরি হলে একটা যুগ উঠে আসবে চোখের সামনে।
যারা ডেয়ারডেভিল, যারা ঝুঁকি নিতে পারে, রাতের পৃথিবী দেখতে নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারে, মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে রাষ্ট্র্রের বিরুদ্ধে, নির্জলা মদ খেতে পারে, বাঙালি তাদের খুব ভালবাসে, প্রশ্রয় দেয়, প্যাম্পার করে। মাইকেল থেকে ঋত্বিক হয়ে শক্তিদের প্রতিভা নিয়ে যেমন আর কোনও তর্ক নেই তেমনই এদের একটা সমান্তরাল মিল নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই মন্দির, মসজিদ এবং স্যানাটোরিয়ামের যেখানেই এদের ঠিকানা হোক, এরা মদ ঠিক জোগাড় করে ফেলেন। আর ভালবাসা এসে দাঁড়ায় এদের পিছনে। মাথায় স্নেহের হাত রাখে। ঋত্বিক ভালবাসা পেয়েছেন, তাঁর আর জনমতের প্রযোজন নেই। তিনি লাথি মেরে দেওয়াল ভেঙে সিনেমা বানিয়েছেন। তিনি সেলিব্রিটি হতে চাননি কোনও দিন। কমলেশ্বর ঋত্বিকের দুই বাংলাকে তুলে আনতে চাইছেন এক বাংলা মানে বাঙালি, আর এক বাংলা মানে মদ।
একটা বিখ্যাত পোস্টার আছে চ্যাপলিনের। দরজার ফাঁক দিয়ে মুখ বের করে উঁকি মেরে চ্যাপলিন দেখছেন তাঁর নিজের কফিন, নিজের শবাধার। নিজেকে নিয়ে এর থেকে নিষ্ঠুর কৌতুক কী হতে পারে। ‘মেঘে ঢাকা তারা’র নীতা যে কিনা নিজেকে নিঃশেষ করে দিল সংসারের জন্য, দাদার জন্য, বোনের জন্য, মায়ের জন্য, বাবার জন্য। নিজের জন্য একটা চপ্পল বা টিপ পর্যন্ত কিনল না যে মেয়ে, নিজের প্রেমিক সরে গেল বোনের দিকে, মা সেটাকে আসকারা দিলেন, সেই ছিন্নমূল মেয়েটি যে প্রাণ দিয়ে চেয়েছিল তার গানপাগল দাদা সংসারে বেমানান হলেও একদিন একজন বড় গায়ক হবে, সেই মেয়ের মুখ দিয়ে যেদিন কাশির সঙ্গে রক্ত বেরিয়ে আসে (তখন টিবি ছিল ক্যানসারের মতো ভয়ের) তখন এমন কোনও বাঙালি নেই যার চোখে জল আসবে না। উদ্বাস্তু পরিবারের দাদা আর বোনের সম্পর্ক যেন অখণ্ড বাংলার ধানখেতের সঙ্গে নদীর সম্পর্ক। যখন বোনকে রেখে আসতে হল টিবি স্যানাটোরিয়ামে, পাহাড়ের মাথা থেকে আমরা শুনতে পেলাম, “দাদা আমি বাঁচতে চাই’। সেদিন দাদা আর বোনের আরও এক বার ছিন্নবাংলা দ্বিখণ্ডিত হল। পার্টিশানের পর আরও একটা পার্টিশন।
ওই মর্মান্তিক চারটে শব্দ, “দাদা আমি বাঁচতে চাই’ কার্শিয়াং থেকে নামতে নামতে কলকাতা হয়ে কাকদ্বীপের দিকে এগিয়ে চলেছে। এখনও ঘুমের মধ্যে অবচেতনের অন্ধকারে আমরা শুনতে পাই ‘দাদা আমি বাঁচতে চাই।’ ঋত্বিক এখনও তাঁর গভীর দুটো চোখে তাকিয়ে আছেন সবাইকে জিতিয়ে দিয়ে নিজে হেরে যাওয়া একটা মেয়ের দিকে, যে তাঁর আঁচল দিয়ে ঠোঁটের কোনা থেকে রক্ত মুছে লুকিয়ে ফেললঋত্বিক তাকে জিজ্ঞাসা করছেন জর্জ বিশ্বাসের গলায় ‘কেন চেয়ে আছ গো মা?’ |
ঋত্বিকের বাউন্ডুলেপনা, মদ্যপান কিংবা খ্যাপামি এসবের জন্য বাঙালি ওর প্রতি আকৃষ্ট এটা আমার মনে হয় না। ঋত্বিককে বাঙালির ভাল লাগে ওর ছবির মধ্যে ভাললাগার উপাদান ছিল বলেই
মৃণাল সেন |
ঋত্বিকের স্বভাবের সঙ্গে ছবির সম্পর্ক নেই। সমসাময়িক বাস্তবকে তিনি ছবিতে নিষ্ঠুর ভাবে তুলে ধরেছেন। বিভিন্ন গল্পের করুণ পরিণতির মধ্যে দিয়ে আর এক ঋত্বিক উঠে আসেন, বাঙালি তাঁকেই ভালবাসে
সুচিত্রা ভট্টাচার্য |
ঋত্বিকের জীবনে ড্রামা ভরপুর। তা ছাড়া মানুষ তাঁর সম্পর্কে খুব বেশি জানে না। সিনেমার জন্য এই রকম ‘লিভিং অন দ্য এজ’ চরিত্র সব সময়ই বেশি আকর্ষণীয়
মহেন্দ্র সোনি |
দেশভাগের মধ্যে দিয়ে, কখনও মাটির মধ্যে দিয়ে, কখনও ছিন্নমূল উদ্বাস্তুর আর্তনাদের মধ্যে দিয়ে ঋত্বিক মাদার আর্কেটাইপ খুঁজেছেনযার সঙ্গে বাঙালির নাড়ীর যোগ আছে
ব্রাত্য বসু |
|
|
|
|
|
|