মামা-ভাগ্নে যেখানে আপদ নেই সেখানে। কিন্তু মামা আর ভাগ্নে যদি দুজন দুই দু-দলের সমর্থক হন! আর সামনে যদি পঞ্চায়েত ভোট থাকে! তা হলে বাড়ি বাঙচুর, আগুন লাগানো, বোমাবাজির মতো তুলকালাম কান্ডও ঘটতে পারে। যেমন ঘটেছে মালদহের রতুয়ায়। রবিবার রাত থেকে রতুয়ার চাঁদমণি ২ পঞ্চায়েতের মানুষ সেই ঘটনার সাক্ষী। দু’দলের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ১৬ জন। দুই সিপিএম কর্মীকে মালদহ মেডিক্যালে ও ৩ কংগ্রেস সমর্থককে সামসি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। সোমবার সকালেও এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী।
যুযুধান দুই শিবিরের নেতৃত্বে এক দিকে রয়েছেন সেকেন্দর আলি। তিনি দীর্ঘ দিনের সিপিএমের সমর্থক। দলের খারাপ সময়েও দল ছেড়ে যাওয়ার কথা কল্পনাতেও আনতে পারেন না। আর তাঁর ‘আদরের ভাগ্নে’ আশানুদ্দিন বরাবরই কংগ্রেসের সমর্থক। ভাগ্নের রাজনীতির বিষয়টি নিয়ে মামা বরাবরই অখুশি। সমস্যা হল রবিবার রাতে। পঞ্চায়েতের প্রচারের কাজ সেরে ভাগ্নে আশানুদ্দিন ভাবলেন, মামাবাবুর খবর নেওয়া যাক। দরজা খুলে ভাগ্নেকে দেখেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন মামা। ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন ভাগ্নেকে। কিন্তু ‘মামাবাড়ির আবদার’ বলে কথা! ভাগ্নেও চেঁচামেচি শুরু করলেন। এমনিতে এলাকার কংগ্রেস-প্রার্থীকে সিপিএমের হুমকির অভিযোগ নিয়ে উত্তেজনা চলছিল। রটে যায় আশানুদ্দিনকে হুমকি দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ পাল্টা অভিযোগে রাতে শুরু হয় রাজনৈতিক উত্তেজনা। ছড়িয়ে পড়ে পাশের তিনটি গ্রামে। শুরু হয় ভাঙচুর। দু’পক্ষের সংঘর্ষে ১৫টি বাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। লুঠ হয় ২টি দোকানও। সিপিএমের প্রাক্তন প্রধান ও বর্তমানে বিরোধী দলনেতার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “মামা-ভাগ্নের বিবাদকে কেন্দ্র করে দু’দলের মধ্যে গোলমাল বেঁধে যায়। অভিযুক্তরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এলাকায় পুলিশি টহল চলছে।”
রাতভর গোলমালের পর দু’পক্ষের নামেই অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ দায়ের হয়েছে। মামা-ভাগ্নে দুজনেই এলাকা ছাড়া। তবে তাদের মোবাইল ফোন খোলা রয়েছে। এ দিন মামার রাগ কিছুটা পড়েও এসেছে। মামা সেকেন্দর আলি বলেন, “কিছু দিন ধরেই উত্তেজনা চলছিল। সে কারণেই ভাগ্নেকে বাড়িতে আসতে বারণ করা হয়। বাড়ি এলে দলের কর্মীরাও তো অন্য কিছু ভাবতে পারেন! কিন্তু কোথা থেকে যে কী হয়ে গেল।” অন্য দিকে ভাগ্নে আশানুদ্দিনের গলার সুরেও অভিমান। তিনি বলেন, “রাজনীতি নিজের জায়গায় থাকবে। অন্য দল করি বলে কি মামা পর হয়ে যাবে? এইটাই বোঝাতে গিয়ে যত ঝামেলা।”
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ঘটনার পর বনডাঙ্গা, খোঁজখামার ও বালুপুর গ্রামের কংগ্রেস ও সিপিএম কর্মী সমর্থকরা জড়ো হলে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। সিপিএম রতুয়া জোনাল কমিটি সম্পাদক জহুর আলম বলেন, “হার নিশ্চিত বুঝতে পেরে সামান্য ছুতোয় কংগ্রেস সন্ত্রাসের পথ ধরছে।” ব্লক কংগ্রেস সভাপতি আব্দুল হান্নান বলেন, “ওঁরা হামলা করার পরে, আত্মরক্ষার্থে দলীয় কর্মীরা যা করার তা করেছে। ৯ সমর্থকের বাড়ি ওঁরা ভাঙচুর করে।” |