জেলা পরিষদ আসনে প্রার্থিপদে মনোনয়ন জমা দিলেন খুনের চেষ্টার অভিযোগে ফেরার আসামি মালদহের সুজাপুরের বাসিন্দা মহম্মদ এসারুদ্দিন। তিনি তৃণমূলের হয়ে প্রার্থিপদ জমা দিয়েছেন মালদহ জেলা পরিষদের সুজাপুর (৩৫ নম্বর আসন) থেকে। এপ্রিলের গোড়ায় এসারুদ্দিন ওরফে রুকুর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল কালিয়াচকের তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি সহরুল বিশ্বাসকে গুলি করে খুনের চেষ্টা করার। সেই সহরুলই এ বার রুকুর প্রার্থিপদে প্রস্তাবক হয়ে সই করেছেন।
|
এসারুদ্দিন।
—নিজস্ব চিত্র। |
কিন্তু পুলিশ কেন রুকুকে গ্রেফতার করল না?
মালদহের পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমি বিশদে খোঁজখবর নিয়ে যা বলার বলব।” কালিয়াচক থানার আইসি শুভব্রত ঘোষ অবশ্য দাবি করেছেন, “এসারুদ্দিন মণ্ডল ওরফে রুকু-সহ তিন জনকে পুলিশ খুঁজছে।” তৃণমূল অবশ্য দাবি করেছে, সহরুলকে খুনের চেষ্টার ঘটনায় রুকু জড়িত নন। তাঁকে জোর করে ফাঁসানো হয়েছে। সহরুলকে খুনের চেষ্টার সময়ে রুকু ছিলেন কংগ্রেসে। সম্প্রতি তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী তথা রাজ্যের নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “মহম্মদ এসারুদ্দিনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, সেটা ঠিক নয়। যাঁরা আমাদের দলের অঞ্চল সভাপতিকে গুলি করেছিল, সেই দলে মহম্মদ এসারুদ্দিন মণ্ডল ছিল না। ভুল বোঝাবুঝির জন্য ওঁর নামে মিথ্যা খুনের চেষ্টার অভিযোগ করা হয়েছিল। বিষয়টি ওঁরা দুজনে বসে মিটিয়ে নিয়েছে। পুলিশকে বলেছি, যাঁরা আমাদের অঞ্চল সভাপতিকে গুলি করে খুন করার চেষ্ঠা করেছিল তাদের খুঁজে বের করে, দ্রুত গ্রেফতার করতে।”
পুলিশ সূত্রের খবর, গত, ৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় দলের কর্মীদের নিয়ে সুজাপুর স্ট্যান্ডে পার্টি অফিসে বসেছিলেন সহরুল। সেই সময়ে দুষ্কৃতীরা গুলি চালালে সহরুলের বুকে লাগে। তখন এলাকার কংগ্রেস কর্মী মহম্মদ এসারুদ্দিন মণ্ডল সহ তিন জনের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ জানান তৃণমূল কংগ্রেসের অঞ্চল সভাপতি। ওই বয়ানের ভিত্তিতে পুলিশ মামলা শুরু করে। পরে বিচারকের কাছেও জবানবন্দি দেন সহরুল। এর পরেও অবশ্য রুকুবাবুকে পুলিশ আজও খুঁজে পায়নি কেন? তা হলে তিনি বহাল তবিয়তে কী ভাবে মনোনয়ন দাখিল করলেন?
পুলিশ জানিয়েছে, রুকুবাবুকে দ্রুত গ্রেফতার করা হবে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্রের কথায়, “রুকুবাবু শাসকদলে ভিড়ে যাওয়ায় পুলিশ আর তাকে ধরছে না।” তবে জেলার মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী বলেন, “মামলা কী হয়েছে জানি না। তবে পুলিশকে প্রভাবিত করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। পুলিশ পুলিশের কাজ করবে। আমার বিরুদ্ধেও ৩৬টি মামলা ছিল। তার অর্থ এই নয় যে, আমি অপরাধী। আমিও তো ভেটে দাঁড়িয়ে জিতেছি।”
যাঁর বিরুদ্ধে গুলি করার অভিযোগ করেছেন, তাঁর প্রস্তাবক হওয়ার প্রেক্ষাপট কি? জবাবে তৃণমূল নেতা সহরুলবাবু বলেন, “আমি কিছু বলব না। যা বলার আমাদের দলের জেলা সভাপতিই বলেছেন।”
যাঁকে ঘিরে এত বিতর্ক, সেই তৃণমূল প্রার্থী মহম্মদ এসারুদ্দিন কিন্তু দাবি করেছেন তিনি ফেরার নন। তিনি মনোনয়ন পত্রে মামলার কথা উল্লেখও করেছেন। সেখানে মামলাটি উচ্চ আদালত পর্যন্ত পৌঁছেছে বলে দাবি করেছেন। তাঁর দাবি, “আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়। দল সেটা বুঝতে পেরেছে। তাই দল আমাকে প্রার্থী করেছে।” |