দীর্ঘদিন ধরেই দলীয় কোন্দলে জেরবার বাগদা ব্লকের তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই কোন্দল মেটানোর জন্য দলের পক্ষ থেকে বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠকে দায়িত্বও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সোমবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে পরিষ্কার যে কোন্দল মেটেনি।
ব্লকের ন’টি পঞ্চায়েতের ১৯টি আসনের জন্য তৃণমূলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন জমা পড়েছিল ২২৭টি। নির্দল ছিল ৪৬টি। নির্দলের মধ্যে বেশির ভাগই বিক্ষুব্ধ তৃণমূল। পঞ্চায়েত সমিতির ২৭টি আসনের জন্য তৃণমূলের তরফে মনোনয়ন জমা পড়েছিল ৪৩টি। নির্দল ছিল ৫টি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পরে দেখা যাচ্ছে, তৃণমূলের পক্ষে সাত প্রার্থী তা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। নির্দল হিসেবে প্রত্যাহার করেন ৬ জন। তৃণমূলের হয়ে মনোনয় জমা দিয়েও যাঁরা দলীয় প্রতীক পাননি, তাঁরা নির্দল হিসেবে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কোন্দল সবচেয়ে বেশি হেলেঞ্চা পঞ্চায়েতে। এখানে ১৭টি আসনে তৃণমূল প্রার্থী দিয়েছিল ২৭টি। নির্দল প্রার্থী দিয়েছিল আটটি আসনে। এই নির্দল প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন হেলেঞ্চা পঞ্চায়েতের বর্তমান প্রধান তৃণমূলের নিখিল ঘোষ এবং তাঁর ভাই কিশোর। চূড়ান্ত তালিকায় দেখা যাচ্ছে ২৭টির মধ্যে ৯টি এবং নির্দল ৮টির মধ্যে একটি করে আসনে প্রার্থী প্রত্যাহার করেছেন। দলীয় প্রতীক না পেয়ে এই পঞ্চায়েতের আসনে নির্দল হিসেবে দাঁড়িয়েছেন তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের নেতা অঘোর হালদার। টিএমসিপি নেতা জয়ন্ত বিশ্বাস এবং স্থানীয় তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি।
তৃণমূলের একাংশের ব্যাখ্যা, বর্তমান প্রধান নিখিল ঘোষকে মূলত স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ মন্ত্রী উপেন বিশ্বাসের আপত্তিতেই দল এ বারে প্রার্থী করেনি। সে কারণেই এখানে দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা-কর্মীরা প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে পড়েছেন।
ব্লক প্রশাসন জানায়, নিখিলবাবুর বিরুদ্ধে ১০০ দিনের কাজে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ব্লক প্রশাসনের তরফে তাঁর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে। এখন তিনি জামিনে মুক্ত রয়েছেন। উপেনবাবু বলেন, “মামলায় চার্জশিট হয়ে যাওয়া ব্যক্তিকে প্রার্থী করা সম্ভব নয়। ওঁর বদলে তাঁর স্ত্রীকে প্রার্থী করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। উনি রাজি হননি।”
স্থানীয় সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন ধরেই বাগদা ব্লকে উপেনবাবুর অনুগামীদের সঙ্গে ব্লক সভাপতি দিলীপ ঘোষ, প্রাক্তন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তরুণ ঘোষদের বিরোধ রয়েছে। দলের জেলা নেতৃত্বের কাছে দু’পক্ষের তরফেই আলাদা প্রার্থী-তালিকা জমা দেওয়া হয়েছিল। সর্বসম্মত প্রার্থী-তালিকা তৈরির জন্য বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠকে বাগদার পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। গোপালবাবুর চেষ্টায় কোন্দল কিছুটা কমলেও সমস্যা পুরো মিটল না। গোপালবাবু বলেন, “হেলেঞ্চা পঞ্চায়েত ছাড়া অন্য জায়গায় সমস্যা মিটেছে।”
অঘোরবাবুর স্ত্রী স্বপ্নাদেবীও পঞ্চায়েত সমিতিতে নির্দল হিসেবে লড়ছেন। কিন্তু কেন? অঘোরবাবু বলেন, “প্রথমে দলের তরফে জানানো হয়েছিল, আমার স্ত্রীকে পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী করা হবে। কিন্তু নিখিলবাবু কেন নির্দল হয়ে দাঁড়ালেন, এই প্রশ্ন তুলে আমার স্ত্রীকে প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই কারণেই ওই সিদ্ধান্ত।” |