নিষ্ক্রিয় পড়ুয়ারা
কামদুনি নিয়ে জ্বলেনি মোমবাতি
প্রায় ১৫০০ কিলোমিটার দূরে দিল্লিতে দামিনীর গণধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে কলকাতায় জ্বলে উঠেছিল মোমবাতি। প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার দূরে ঢাকার শাহবাগ আন্দোলনের সমর্থনেও সরব হয়েছেন শহরবাসী। তা হলে ২০ কিলোমিটার দূরত্বে বারাসতের কামদুনিতে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুন করার ঘটনায় একটিও সহমর্মিতার মোমবাতি জ্বলল না কেন? ঘুরপাক খাচ্ছে প্রশ্নটা। ছাত্র সংগঠনগুলি স্বীকার করছে, খামতি থেকে গিয়েছে তাদের তৎপরতায়।
কেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট-কাউন্সিলে ছাত্র প্রতিনিধিত্বের দাবি, পরীক্ষার হলে নকল করতে বাধা দেওয়ার প্রতিবাদ বা ফেল করা ছাত্রদের পাশ করানোর দাবিতে আন্দোলন তো কার্যত রোজই দেখছে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। অথচ পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে এক দল দুষ্কৃতীর বিকৃত কামনার বলি হয়ে কোনও ছাত্রী মারা গেলে তার প্রতিবাদ কেন শোনা যাচ্ছে না ছাত্রসমাজের গলায়? তবে কি এই ঘটনা নাড়া দেয়নি ছাত্রসমাজকে?
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলি কিন্তু তা বলছে না। শনিবার থেকেই সেখানে আছড়ে পড়েছে উদ্বেগ, আশঙ্কা, সহমর্মিতার বার্তা। যে নৃশংতার বলি হয়েছেন বারাসতের ওই কলেজছাত্রী, তা যে দিল্লির ঘটনার চেয়ে কোনও অংশে কম নয়, বরং বেশি এমন বার্তা পাঠিয়েছেন অনেকেই। কিন্তু শহরে কোনও আন্দোলন কেন সংগঠিত হল না? কেউ মনে করছেন, পরীক্ষা চলায় ক্লাস ছুটি বলে আন্দোলন সংগঠিত করার কাজটা করা যায়নি। কারও মতে, আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনই সব মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রনেতাদের অনেকেই স্বীকার করছেন, রাজনৈতিক মদতপুষ্ট না হলে এ শহরে আন্দোলন দানা বাঁধা কঠিন।
প্রাক্তন ছাত্রনেতা অসীম চট্টোপাধ্যায় যেমন বললেন, “কলকাতার ছাত্রসমাজ সব সময়ই স্থানীয় সমস্যার চাইতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে বেশি মাথা ঘামায়। এখানে রাজনৈতিক উদ্যোগ ছাড়া স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন তেমন দেখা যায় না।” ছাত্র সংগঠনগুলির এই নিষ্ক্রিয়তায় অসন্তুষ্ট প্রাক্তন বামপন্থী ছাত্রনেতা সইফুদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, “আন্দোলন করার মতো ছাত্র সংগঠন কোথায়? এই ঘটনায় দিল্লির দামিনীর কথা মনে হলেও কেউ কিছুই করছে না।” প্রাক্তন ছাত্রপরিষদ নেতা তথা বর্তমানে রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় অবশ্য এ নিয়ে কোনও মত জানাতে চাননি। তাঁর কথায়, “বারাসতের ঘটনাকে আমাদের দল ইতিমধ্যেই দুঃখজনক বলে চিহ্নিত করেছে।”
বর্তমান ছাত্রনেতারা কী বলছেন? ছাত্র পরিষদের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কৌস্তুভ বাগচী মানছেন, ঘটনাটা নিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলির যতটা তৎপর হওয়া উচিত ছিল তারা তা হয়নি। একই মত নকশালপন্থী সংগঠন ইউএসডিএফ-নেতা সৌম্য মণ্ডলেরও। এসএফআইয়ের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সাধারণ সম্পাদক অয়ন বসুর কথায়, “সংগঠিত ভাবে আন্দোলনের কোনও কর্মসূচি এখনও নেওয়া হয়নি। দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।” তবে তিনি জানান, বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু কর্মসূচি নিয়েছে এসএফআই। যেমন, উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন স্টেশন চত্বরে স্মরণসভা, ওই ছাত্রীর বাড়ির লোকের সঙ্গে দেখা করা এবং পুলিশের বড়কর্তাদের সঙ্গে কথা বলা ইত্যাদি।
প্রত্যাশিত ভাবে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) আন্দোলন করার চেয়ে শাসক দলের ভূমিকার প্রশংসা করতেই তৎপর। ঘটনার নিন্দা করে টিএমসিপি-র উপদেষ্টা মণ্ডলীর চেয়ারম্যান বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বাম আমলেও তো অনেক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তখন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখন অভিযোগের সঙ্গে সঙ্গে দোষীদের গ্রেফতার করা হয়েছে।”
এই রাজনৈতিক টানাপোড়েনে যাঁদের কোনও উৎসাহ নেই, সেই সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা কিন্তু কামদুনির ঘটনায় রীতিমতো আতঙ্কিত। কলকাতার এক কলেজছাত্রী বলেন, “ঘটনাটা শুনে ভাল করে ঘুমোতে পারিনি। আমিও রাতে টিউশন পড়ে ফিরি। মনে হচ্ছে যদি আমার সঙ্গে এ রকম ঘটে!”
ছাত্রছাত্রীদের অন্য একটি দল এই প্রশ্নও তুলছেন যে, সহমর্মিতা আন্দোলন করেই বা হবেটা কী? কত ঘটনার কত প্রতিবাদ, কত সহমর্মিতাই তো রোজ দেখানো হচ্ছে। তাতে সমাজে কী প্রভাব পড়ছে? যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্যের স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রী রীতি রায় বলেন, “প্রতিবাদ বলতে একটা মিছিল বা পথনাটিকা করা অথবা মুখ্যমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেওয়া। কী হবে এতে? প্রশাসনকে তো নড়ে বসতে হবে। যেটা করতে সরকার একেবারেই রাজি নয়।” ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই বাংলা দ্বিতীয় বর্ষের আবাহন দত্ত মনে করেন, প্রতিবাদ আন্দোলনে একটা সাময়িক আলোড়ন হলেও এর কোনও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়ে না।
তা হলে কি নানা প্রতিবাদ আন্দোলন কাছ থেকে দেখার পরে একটা হতাশাই কাজ করছে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে? অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের বক্তব্যে কিছু সত্য তো আছেই।” কিন্তু তাঁর মতে, এটা শুধুই হতাশা, নাকি এর মধ্যে খানিকটা দায় এড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারও আছে, সেটা ভেবে দেখা দরকার। “দিল্লির ঘটনায় যে আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল, তাতে কি কিছুই হয়নি? সরকার তো একটা নতুন আইন করতে উদ্যোগী হল। সেটাও তো বিবেচনায় রাখতে হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.