শেষ লগ্নে মনোনয়ন তোলার হিড়িক পূর্বে
কেউ ভয়ে, কেউ দলের মুখ রক্ষায়সোমবার, শেষ দিনে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিলেন অনেকেই।
তমলুকের পিপুলবেড়িয়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের পায়রাচালি গ্রামে একই আসনে তৃণমূলের প্রার্থী পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন সত্যরানি বেশকারি ও উমা মাইতি। একই আসনে তৃণমূলের প্রার্থী পদের দাবিদার নিরুপমা মাইতি দলের টিকিট না পেয়ে শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। দলের ইচ্ছায় সত্যরানিদেবী থাকলেন, শেষ দিনে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিলেন বাকি দু’জন। তৃণমূল নেতারাই তমলুকের নাইকুড়িতে ব্লক অফিসে এনেছিলেন তাঁদের। উমাদেবী বলেন, “তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলাম। মনোনয়নপত্র প্রত্যহার করতে হওয়ায় কিছুটা তো খারাপ লাগছেই।” নিরুপমাদেবী কোনও কথা বলতে চাননি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর তৃণমূল নেতাদের তত্ত্বাবধানে উমাদেবী ও নিরুপমাদেবী একই গাড়িতে চেপে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়ে যান।
আবার ওই একই গ্রাম পঞ্চায়েতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কংগ্রেসের সভাপতি অসিত পালের গ্রাম নিশ্চিন্তবসান থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রার্থী পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন কংগ্রেসের পিয়ালি পাহাড়ি অধিকারী। এ দিন দুপুরে তমলুকের নাইকুড়িতে বিডিও অফিসে এসে তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য ফর্ম পূরণ করে জমা দেন। ফলে ওই গ্রাম থেকে কংগ্রেসের হয়ে লড়ার কেউ থাকল না। অসিতবাবু অভিযোগ করেন, “কয়েকদিন ধরেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য ওদের উপর চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে খবর পাচ্ছিলাম।” পিয়ালিদেবী অবশ্য বলেন , “সিপিএম ও তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলাম। প্রার্থী হওয়ার আগে দলীয় নেতৃত্ব যে ভাবে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিলেন, এখন সে ভাবে সাহায্য পাচ্ছি না। তাই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছি।”
মনোনয়ন তুলছেন কংগ্রেস ও নির্দল প্রার্থীরা। তমলুকে নিজস্ব চিত্র।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করানোর জন্য প্রার্থীদের নিয়ে এদিন তমলুক ব্লক অফিসে ভিড় করেছিলেন তৃণমূল নেতারা। তমলুক পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি শেখ জালালুদ্দিনের দফতরে বসে চলছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের ফর্ম পূরণের কাজ। সেখানে ছিলেন উত্তর সোনামুই গ্রাম পঞ্চায়েতের বর্তমান প্রধান তথা এ বারে তৃণমূলের জেলা পরিষদের প্রার্থী সোমনাথ বেরা-সহ স্থানীয় নেতারা। সোমনাথবাবু বলেন, ‘‘আমাদের মূল লড়াই বামফ্রন্টের সঙ্গে। লড়াই সামনা-সামনি করতে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করাটা যে জরুরি, তা বুঝিয়েছিলাম। অনেকেই অবশ্য নিজে থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।”
দলের নির্দেশে মনোনয়ন প্রত্যাহারের নজির আছে বামেদেরও। এ দিন তমলুক ব্লক অফিসে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন সিপিএমের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া পদুমপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের কুরপাই উত্তর বুথের প্রার্থী ফাতেমা বিবি। ওই গ্রামে সিপিএম প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন আরও এক জনহামেদুন বিবি। তিনিই রইলেন। মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর ফতেমা বিবি বলেন, ‘‘আমাদের বুথে তৃণমূলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে দু’জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলাম। দলের নির্দেশেই আমি মনোনয়নপত্র করে নিয়েছি।” ব্লক অফিস চত্বরে দাঁড়িয়ে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা তমলুক পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি শক্তিপদ বেরা বলেন , ‘‘দলীয় ভাবে যে সব জায়গায় একাধিক মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়েছিল, সেগুলি প্রত্যাহার করা হয়েছে।” তবে, দলীয় নির্দেশে কম, রাজ্যে শাসকদলের চোখ রাঙানিতেই এ দিন বিভিন্ন জায়গায় বাম প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। পটাশপুর ২ ব্লকের সাউৎখণ্ড গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৮টি আসনের মধ্যে ১৬টি ও আড়গোয়ালে ১৯টির মধ্যে ১৭টিতে তাদের দলীয় প্রার্থীরা মনোনয়ন তুলে নিতে বাধ্য হয়েছেন বলে দাবি সিপিএমের। দলের প্রতাপদিঘি জোনাল কমিটির সম্পাদক কালীপদ দাস মহাপাত্র বলেন, “রবিবার রাতভর ওই দুই এলাকায় বাম প্রার্থী ও নেতাদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে তৃণমূলের লোকেরা চমকিয়েছে। কোথাও ভাঙচুর করেছে। কোথাও মারধর। ভয়ে এ দিন প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন।”
মনোনয়ন দখিলের পরে প্রার্থীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে দিয়েছিলেন পটাশপুর ১ ব্লকের চিস্তিপুর গ্রামের বাসিন্দা তথা সিপিএমের মংলামাড়ো লোকাল কমিটির সম্পাদক চিন্তামণি মাইতি। সেই আক্রোশে রবিবার রাতে তাঁর বাড়িতে হামলা চালায় তৃণমূলের বাইকবাহিনী।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.