|
|
|
|
|
বিঁধলেও আত্মহারা
আক্রমণে যাবে না কংগ্রেস
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
|
উল্লসিত বটে। তবে উচ্ছ্বাসে নেই। পাছে শহিদের মর্যাদা পেয়ে যান নরেন্দ্র মোদী। পাছে লোকসভা ভোটে সহানুভূতির হাওয়া ওঠে বিজেপি-র প্রচারের এই নতুন মুখটির অনুকূলে।
তবে বিরোধী শিবিরে এমন একটা ডামাডোলের মুহূর্তে কংগ্রেস যে কতটা আহ্লাদিত, সেটাই বা তারা পুরোপুরি লুকিয়ে রাখবে কেন! ফলে লালকৃষ্ণ আডবাণীর ক্ষোভের আঁচে সহানুভূতির মৃদু বাতাস জোগানোকেই ঠিক কৌশল বলে মনে করছে কংগ্রেস। বিজেপি-তে ফাটল আরও বাড়ানো আর নীতীশকুমারদের মতো নেতাদের কাছে টেনে এনডিএ-কে আরও ছত্রভঙ্গ করাই যার লক্ষ্য। কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের মতে, বিজেপি-র ঘরোয়া কোন্দলই এখন সংবাদমাধ্যমের বড় খোরাক। এবং তাতেই কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপি-র তফাতটা মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। কংগ্রেস প্রকাশ্যে বেশি মন্তব্য করলে, মোদী সহানুভূতি কুড়োতে পারেন। লোকসভার ভোটযুদ্ধ সে ক্ষেত্রে মোদী-রাহুলের ব্যক্তিগত লড়াইয়ে পরিণত হতে পারে। সেটা বিপজ্জনক হবে বুঝেই কংগ্রেস চাইছে লোকসভা ভোটটা যেন দুই শিবিরের মধ্যে মতাদর্শের লড়াই হয়ে ওঠে।
গত তিন দিন ধরে বিজেপি-তে যে অসিযুদ্ধ চলছে তা নিয়ে গোড়া থেকেই কমবেশি কটাক্ষ করে আসছিলেন কংগ্রেসের নেতারা। কিন্তু দলের সব পদ থেকে আডবাণীর ইস্তফা অনেকটা হাতে চাঁদ পেয়ে যাওয়ার মতো হলেও লোকসভা ভোটকে পাখির চোখ করে এখন প্রতিক্রিয়া প্রকাশের ব্যাপারে লক্ষণীয় ভাবে সতর্ক কংগ্রেস।
আহমেদ পটেল, দিগ্বিজয় সিংহের মতো কংগ্রেসে রাজনৈতিক ম্যানেজাররা মনে করছেন, আডবাণীর ইস্তফা নিঃসন্দেহে বিজেপি-র কাছে একটা বড় ধাক্কা। সেই ইস্তফা গ্রহণ না করে রাজনাথ সিংহরা পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করলেও বিজেপি-তে নৈতিক অবক্ষয় নিয়ে আডবাণী যে ভাবে খেদ প্রকাশ করেছেন, আসন্ন লোকসভা ভোটে সেটা কংগ্রেসের বড় অস্ত্র হয়ে উঠবে। অস্ত্র হবে বিজেপি-র অন্দরের মোদী বিরোধিতাও। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র বলেন, “এ সবই মোদীকে তুলে ধরার কুপ্রভাব। বিজেপি-র পতন শুরু হল।” কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক দিগ্বিজয় সিংহ বলেন, “অতীতে যাঁরাই মোদীকে তুলে ধরেছেন, মোদী তাঁদেরই হাত কেটেছেন। মোদীকে কেন্দ্র করে তাই বিজেপি-তে ভীতি দানা বাঁধছে।”
গোয়ায় বিজেপি-র কর্মসমিতির বৈঠকে কাল মোদীকে দলের লোকসভা ভোটের প্রচার কমিটির নেতা ঘোষণা করার পরই রাহুল গাঁধী আজ বৈঠকে বসেন। গুরুদ্বারা রেকাব গঞ্জ রোডে দলের ওয়ার রুমে ওই বৈঠকে বিজেপি-র কোন্দল নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। ওঠে নীতীশকুমারের প্রসঙ্গও। দলের এক শীর্ষ নেতা জানান, স্থির হয়েছে, বিজেপি-র কোন্দল নিয়ে কংগ্রেস যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই টিপ্পনি করবে। বস্তুত কংগ্রেস নেতারা নিজেরা মন্তব্য করার চেয়ে আজ বেশি তৎপর ছিলেন ফেসবুক, ট্যুইটার-সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আডবাণীর চিঠির প্রতিলিপি সকলের কাছে ছড়িয়ে দিতে।
কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, বৈঠকে স্থির হয়েছে, লোকসভা ভোটের মুখে আডবাণীর ওই চিঠিকে বড় হাতিয়ার করবে কংগ্রেস। ভবিষ্যতে আডবাণী ও মোদীর মধ্যে কোনও সমঝোতা সূত্র তৈরি হলেও সেই অস্ত্রের ধার কমবে না। কারণ আডবাণী স্বীকার করেছেন, বিজেপি-র বর্তমান নেতাদের মধ্যে তিনি নৈতিক অবক্ষয় দেখতে পারছেন। কেউ দেশের কথা ভাবছেন না। সবাই স্বার্থ দেখছেন। এমন নেতাদের ওপর বিজেপি-র প্রতিষ্ঠাতা আডবাণীরই যদি আস্থা না থাকে তা হলে মানুষ তাঁদের বিশ্বাস করবে কী করে?
মোদীর উত্থান প্রসঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নটিও উস্কে দিতে চাইছে কংগ্রেস। সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে দীর্ঘদিনের বিরোধী নীতীশের সঙ্গে কংগ্রেস তলে তলে যোগাযোগ রাখছে। আডবাণীর ইস্তফার প্রশ্নে সংযুক্ত জনতা দলের প্রতিক্রিয়াকে ইতিবাচক বলেই মনে করছে কংগ্রেস। তাঁদের ধারণা, মোদীর এই উত্থানের পর নীতীশের পক্ষে এখন এনডিএ থেকে বেরিয়ে যাওয়া সহজ হবে।
কংগ্রেসের এক শীর্ষ সারির নেতার কথায়, “বিজেপি-তে ও অন্য বিরোধী দলগুলির একাংশ মোদীর পথ রুখতে বদ্ধপরিকর। লোকসভা ভোটের কথা ভেবে এদের অক্সিজেন জোগানোই হবে কংগ্রেসের রণনীতি।” |
|
|
|
|
|