|
|
|
|
মুখ খুলল শিবসেনাও |
উদ্বেগ গোপন করছে না ক্ষুব্ধ জেডিইউ
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
লালকৃষ্ণ আডবাণীর পদত্যাগের চিঠি ঘিরে মেঘ জমছে এনডিএ-র অন্দরে। জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক জেডিইউ সরাসরিই জানিয়েছে, তারা এনডিএ-র ‘স্বাস্থ্য’ নিয়ে উদ্বিগ্ন। এমনিতেই জেডিইউ প্রধান নীতীশ কুমার প্রকাশ্যেই মোদী-বিরোধী। মোদীকে নিয়ে আডবাণীর ক্ষোভ পদত্যাগের সিদ্ধান্তের পরে অসন্তোষ গোপন রাখছেন না দলের নেতারা। বিজেপির পুরনো শরিক শিবসেনাও আডবাণীর পদত্যাগ নিয়ে বসে নেই। দলের তরফে বলা হয়েছে, আডবাণীকে বাদ দিয়ে এনডিএ-র কথা ভাবা যায় না। পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের জন্য দল আডবাণীকে অনুরোধ করবে বলেও আজ জানিয়েছেন শিবসেনার নেতা সঞ্জয় রাউত।
সব মিলিয়ে আডবাণীর পদত্যাগ এক অভূতপূর্ব সঙ্কটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে এনডিএ-কে। জেডিইউ-এর অধিকাংশ নেতার বক্তব্য, কোনও অবস্থাতেই মোদীকে এনডিএ-র নেতা হিসেবে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। মোদীকে মেনে নিলে নিজেদের ভাবমূর্তি যে নষ্ট হবে, তা-ও ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়েছেন নীতীশ। তবে আপাতত ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়েই চলতে চাইছে তারা। বিষয়টি নিয়ে দ্রুত আলোচনায় বসবে দল।
মোদীকে বিজেপির প্রচারের মুখ হিসেবে তুলে ধরার বিষয়টি নিয়ে পটনায় সোমবার নীতীশ সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা খবরটি দেখেছি। বিষয়টি নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা করে এবং সব দিক বিচার-বিশ্লেষণ করে আমাদের অবস্থান কিছু দিনের মধ্যেই জানিয়ে দেব।” আডবাণীর ইস্তফা প্রসঙ্গে নীতীশের সুরেই বিবৃতি দিয়েছেন জেডিইউয়ের সর্বভারতীয় সভাপতি শরদ যাদব। তিনি বলেন, “আমি হতাশ। অটলবিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আডবাণী এবং আমি মিলে এনডিএ তৈরি করেছিলাম। বিষয়টি নিয়ে দলের অন্দরে আলোচনা করে তবেই পরবর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।”
প্রকাশ্যে যাই-ই বলুন না কেন, জেডিইউ সূত্রের খবর, মোদী-প্রশ্নে বিজেপির সিদ্ধান্তে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ নীতীশ। মোদীর ব্যাপারে নিজের কড়া আপত্তির কথা বহু বারই বিজেপি নেতৃত্বকে জানিয়েছেন তিনি। পটনায় ২০১০ সালে বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের সময়ে সেই মত প্রকাশ্যেই জানিয়ে দেন নীতীশ। সেই সময়ে নরেন্দ্র মোদীর দেওয়া একটি বিজ্ঞাপনকে কেন্দ্র করে নীতীশ-মোদী বিরোধ চরমে ওঠে। তখন নীতীশকে শান্ত করেন আডবাণী, জেটলিরা। যে সব বিজেপি নেতার সঙ্গে নীতীশ তুলনায় বেশি স্বচ্ছন্দ, তার মধ্যে আডবাণী, জেটলি অন্যতম। বিজেপি নেতৃত্বও তা জানে। তবুও একতরফা ভাবে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীকে দলের প্রচারের মুখ হিসেবে বেছে নেওয়ায় বিজেপি নেতৃত্বের উপর বেজায় চটেছেন নীতীশ।
জেডিইউয়ের একাংশ অবশ্য নীতীশকে বোঝাচ্ছেন যে, বিহারের রাজনৈতিক সমীকরণের কথা মাথায় রেখে চটজলদি কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়াই বাঞ্ছনীয়। বিজেপি-কে হারালে যেমন সংখ্যালঘু ভোট নিজেদের ঘরে আনার সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনই উচ্চবর্ণের ভোট হারানোর আশঙ্কাও রয়েছে। এই অবস্থায় বিহারে বিজেপি নিজে জিততে না পারলেও নীতীশকে হারানোর ক্ষমতা রাখে। দলের ওই অংশের নেতারা নীতীশকে বোঝাচ্ছেন, দলের প্রচারের মুখ করা মানেই তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করে দেওয়া নয়। তাই এখনই আগ বাড়িয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না।
কিন্তু সোমবার আডবাণীর ইস্তফার পরে মোদীর বিরুদ্ধে আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়াচ্ছে নীতীশ-শিবির। তাদের মতে, “মোদীকে মেনে নিলে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। মোদীকে না মানলেও দলের ক্ষতি হবে। কিন্তু ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। সে ক্ষেত্রে বিজেপির সঙ্গ ছাড়লে আঘাত যেমন আমরা পাব, তেমন বিজেপি-ও পাবে।” মোদীকে নিয়ে দলের অসন্তোষ স্পষ্ট করে দিয়ে দলের মুখপাত্র এবং নীতীশ-ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত শিবানন্দ তিওয়ারি বলেন, “আমরা পুরো পরিস্থিতি বিচার-বিবেচনা করছি। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই আমাদের দল মোদীকে নেতা হিসেবে মেনে নিতে প্রস্তুত নয়।” তিনি আরও বলেন, “২০০২ সালে এই গোয়াতেই বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক হয়েছিল। সেখানে বাজপেয়ীজি মোদীর সরকার ভেঙে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। তাঁকে সে দিন বাধা দিয়েছিলেন আডবাণীজি। সেটা যে কত বড় ভুল করেছিলেন, তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন আডবাণীজি। সে দিন মোদীকে সরিয়ে দিলে ২০০৪ সালে এনডিএ কেন্দ্রে দ্বিতীয় বার সরকার গড়ত।” নীতীশ-ঘনিষ্ঠ জেডিইউয়ের পিছড়েবর্গ মুসলিমদের নেতা আলি আনোয়ার বলেন, “দেশের একতা, অখণ্ডতা নষ্ট হবে, এমন সিদ্ধান্ত কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না।” কিন্তু এত সব কিছুর পরেও চটজলদি কোনও সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে না জেডিইউ। দলীয় সূত্রে বলা হচ্ছে, সব দিক ভাল ভাবে খতিয়ে দেখেই সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁরা। দলের এক নেতার কথায়, “আমরা সব কিছুর উপরেই নজর রাখছি। মোদীর নেতা হওয়া, আডবাণীর ইস্তফা সব কিছুই। এখন দেখার আডবাণীজির ইস্তফার পরে বিজেপির অন্দরের সমীকরণই বা কী দাঁড়ায়। সেটা বুঝে তবেই আমরা কোনও সিদ্ধান্ত নেব। রাজনীতিতে হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া আত্মহত্যার সামিল। সেটা কখনওই নীতীশ কুমার করবেন না।” |
|
|
|
|
|