বারাসতের পরে এ বার দমদম।
রবিবার রাতে বাড়ি ফেরার পথে দুষ্কৃতীর হাতে এক তরুণীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠল দমদমের আদর্শনগরে। ওই তরুণী একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী। দমদম থানায় দায়ের হওয়া অভিযোগে জানানো হয়েছে, ওই দুষ্কৃতী পিছন থেকে ওই তরুণীর মুখ চেপে ধরে। কোনও মতে নিজেকে ছাড়িয়ে তিনি চিৎকার করলে স্থানীয় যুবকেরা ছুটে যান। তরুণীকে ধাক্কা মেরে রাস্তায় ফেলে চম্পট দেয় ওই দুষ্কৃতী। ঘটনায় তিনি সামান্য আঘাতও পান।
তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও কোনও নির্দিষ্ট সূত্র পায়নি পুলিশ। উপরন্তু পিছন থেকে হামলা চালানোয় ওই দুষ্কৃতী সম্পর্কে বিশেষ কোনও তথ্য ওই তরুণীর কাছ থেকে পাওয়া যায়নি বলে পুলিশ সূত্রে খবর। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের বেলঘরিয়ার অতিরিক্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনার বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “লিখিত অভিযোগে ওই তরুণী জানিয়েছেন, গলি দিয়ে হাঁটার সময়ে এক যুবক পিছন থেকে তাঁর মুখ চেপে ধরে। তিনি হাত ছাড়িয়ে চিৎকার করতেই ওই দুষ্কৃতী পালায়। তদন্ত চলছে।”
পুলিশকে ওই তরুণী জানান, সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টরে একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করেন তিনি। অফিস থেকে রোজের মতো রবিবার রাতেও বিমানবন্দরের এক নম্বর গেট স্টপেজে নেমে মসজিদ রোড ধরে আদর্শনগরে বাড়ির দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন। অন্যান্য দিন রাস্তায় লোকজন চলাচল করলেও ওই রাতে ফাঁকাই ছিল বলে তিনি জানান।
থানায় শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করে ওই তরুণী জানিয়েছেন, বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছতেই আচমকা এক যুবক পিছন থেকে তাঁর মুখ চেপে ধরে। প্রথমে চিৎকার করার সুযোগ পাননি। নিজেকে ছাড়াতে আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন। সুযোগ পেতেই তিনি চিৎকার করতে থাকেন। স্থানীয় কয়েক জন যুবক তা শুনে ছুটে আসে। বিপদ বুঝে ওই দুষ্কৃতী তাঁকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে চম্পট দেয়। কাঁধে, কোমরে, হাতে ও পায়ে কিছুটা চোট পেয়েছেন তিনি।
ওই তরুণী বলেন, “চেনা রাস্তায় যে এমন কাণ্ড ঘটতে পারে, তা কখনও ভাবিনি।” তাঁর বাবা, প্রাক্তন সিআইএসএফ কর্মী বলেন, “এই ঘটনার পরে কী ভরসায় মেয়ে চাকরি করতে যাবে? ওর নিরাপত্তা নিয়ে আমি চিন্তিত। প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিক।” যদিও ঘটনার পরে পুলিশের ভূমিকায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে তরুণীর পরিবার।
বারাসতের কামদুনিতে ছাত্রী-হত্যার ঘটনার পরে তাঁদের এলাকাতেই এমন ঘটবে ভাবেননি আদর্শনগরের বাসিন্দারা। সোমবার সকালে ঘটনার কথা জানাজানি হতে এলাকায় ক্ষোভ ছড়ায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, দিনের বেলাতেই পুলিশের দেখা মেলে না। রাতে দূর অস্ত্। স্থানীয় বাসিন্দা পরিচয় দিয়ে কালীপদ ঘোষ নামে এক ব্যক্তি বলেন, “আমাদের এলাকায় এমন হতে পারে ভাবিনি। তবে যা দেখছি, পুলিশের উপরে ভরসা করে লাভ নেই। প্রয়োজনে আমাদেরই রুখে দাঁড়াতে হবে।”
অভিযোগ কার্যত স্বীকার করলেও এই ঘটনার কথা জানতেন না স্থানীয় কাউন্সিলর থেকে দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান কেউই। স্থানীয় কাউন্সিলর, সিপিএমের শ্যামলী দেবনাথ বলেন, “পুলিশের নিয়মিত নজরদারি নেই এলাকায়। তবে এমন ঘটনা ওয়ার্ডে আগে ঘটেনি। আমি এলাকায় নেই। ঘটনা সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছি।” দমদম পুর-চেয়ারম্যান, তৃণমূলের সঞ্জীব (মিলু) চন্দ বলেন, “ঘটনার কথা জানতাম না। তবে নজরদারি বাড়াতে পুলিশ-প্রশাসনকে বলব।” নজরদারি নিয়ে অভিযোগ প্রসঙ্গে ডেপুটি পুলিশ কমিশনার বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “পুলিশি টহলদারি নিয়ে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।” |