মাটি থেকে ৪০ হাজার ফুট উপরে উঠে অনেকটাই হাল্কা মেজাজে ছিলেন ক্যাপ্টেন মহেশ গুলাবনি। ককপিটে বসে আরামে গা এলিয়ে দিয়ে বললেন, “আরও তিন-চার হাজার ফুট উপরে উঠে যেতে পারি। একটানা ১১-১২ ঘণ্টা ধরে উড়ে গেলেও ক্লান্ত লাগে না। ড্রিমলাইনারের এটাই সব চেয়ে বড় দিক।” ঘণ্টায় প্রায় ৮০০ কিলোমিটার বেগে ড্রিমলাইনার (ডিএল) তখন উড়ে যাচ্ছিল লন্ডনের দিকে। ডানা মেলে ঝকঝকে আকাশটাকেই যেন শাসন করছিল ডিএল।
৬৫ বছর আগে দিল্লি থেকে প্রথম লন্ডনের উড়ান চালু করেছিল এয়ার ইন্ডিয়া। তার পর অনেক বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে সংস্থাটি আজ যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে, সেখান থেকে ঘুরে না দাঁড়ালে বিমান সংস্থার ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে পড়ত। এই অবস্থায় ডিএল-এর ডানায় ভর করেই এয়ার ইন্ডিয়া যেন সেই অন্ধকারের অনেক উপরে উঠে যেতে চাইছে। সংস্থার ডিরেক্টর (কর্পোরেট কমিউনিকেশন) দীপক ব্রারা-র কথায় “আজ এই উড়ান আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর সূচনা বলে ধরে নিতে পারেন।”
বিমানের ভিতরে বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহ ও তাঁর সঙ্গী সড়কমন্ত্রী কে সি বেণুগোপালও পাশাপাশি বসে সেই ঘুরে দাঁড়ানোর পক্ষে সওয়াল করছিলেন। বিমানমন্ত্রীর কথায়, “প্রতিদিন এয়ার ইন্ডিয়ার পারফরম্যান্স ভাল হচ্ছে। রাজস্ব বেড়েছে, কমানো গিয়েছে খরচও।” পারফরম্যান্সের কথা উঠে এল এয়ার ইন্ডিয়ার যাত্রীদের কথাতেও। এমনই এক জন অনাবাসী ভারতীয় চিকিৎসক রাগিনী বাহারি। বছরে দু’বার লন্ডন থেকে ভারতে যাতায়াত করেন। প্রথম পছন্দ এয়ার ইন্ডিয়াই। রাগিনী বলছেন, “মনে হয়, ঘরে আছি। আমাদের খাবার, আমাদের ভাষা। এবং গত কয়েক বছরে পারফরম্যান্সও অনেক ভাল হয়েছে।”
গোড়ার দিকে অবশ্য ড্রিমলাইনার নিয়ে বড় সমস্যা তৈরি হয়। ব্যাটারি সংক্রান্ত সমস্যার জন্য কয়েক মাসের জন্য বসিয়ে দিতে হয়েছিল ‘স্বপ্ন-উড়ান’কে। এয়ার ইন্ডিয়া ছাড়াও বিশ্বের তাবড় তাবড় বিমানসংস্থাগুলিও তাঁদের ড্রিমলাইনারগুলিকে বসিয়ে দিয়েছিল। ব্যাটারির সমস্যা আপাতত মিটে যাওয়ায় কলকাতা থেকে দিল্লি, এয়ার ইন্ডিয়া ফের ড্রিমলাইনার চালু করেছে। তবে এখনও কিছু যান্ত্রিক সমস্যা রয়েছে। সেগুলিও তাড়াতাড়ি মিটে যাবে বলে আশা এয়ার ইন্ডিয়ার কর্তাদের। দীপক ব্রারা বলছেন, “এখন সামনের দিকে তাকানোর সময়।”
উড়ানে বসে মনে হচ্ছিল, ড্রিমলাইনার সত্যিই অন্য বিমানের চেয়ে অনেক আলাদা! অন্য বিমানের চেয়ে ভিতরে অনেক কম শব্দ মালুম হয়। যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য বিমানের ভিতরের বায়ুচাপও বিশেষ ভাবে তৈরি করা হয়েছে। সুবিধা মিলছে বিমানসংস্থাগুলিরও। সেটা কী?
বিমানসংস্থা সূত্রের খবর, ড্রিমলাইনারে অন্যান্য বিমানের তুলনায় ১৫% কম জ্বালানি লাগে। যার ফলে এয়ার ইন্ডিয়া অনেকটাই খবর বাঁচাতে পেরেছে। এবং এই কারণেই এয়ার ইন্ডিয়া আরও কয়েকটি ড্রিমলাইনারের জন্য মুখিয়ে রয়েছে।
এয়ার ইন্ডিয়া সূত্রের খবর, এয়ার ইন্ডিয়ার হাতে আপাতত ৬টি ডিএল রয়েছে। এ বছরের মধ্যেই আরও ৮টি চলে আসবে বলে সংস্থার কর্তারা আশা করছেন। এয়ার ইন্ডিয়ার এক কর্তা জানিয়েছেন, দেশের মধ্যে কলকাতা থেকে দিল্লি ছাড়াও দিল্লি-চেন্নাই ও দিল্লি-বেঙ্গালুরু রুটে নিয়মিত ড্রিমলাইনার চালানো হচ্ছে। আন্তর্জাতিক রুটে দিল্লি থেকে ফ্রাঙ্কফুর্ট ও প্যারিসে নিয়মিত উড়ান রয়েছে। সপ্তম বিমানটি হাতে এলেই দিল্লি-হংকং-ওসাকা রুটে উড়ান চালু হবে বলে ওই কর্তা জানান। আজ, দিল্লি-লন্ডন উড়ান চালুর অনুষ্ঠানে একই আশ্বাস মিলেছে বিমানমন্ত্রীর অজিত সিংহের কথাতেও। |