মুখ থুবড়ে পড়ল স্বপ্ন-বিমান।
কম জ্বালানি নিয়ে উড়তে সক্ষম বলেই বোয়িংয়ের তৈরি এই ৭৮৭ বিমানকে ‘ড্রিমলাইনার’ বা স্বপ্ন-বিমান নামে ডাকা হচ্ছিল। কিন্তু মাত্র ১৫ মাস ওড়ার মধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অভিযোগ আসতে শুরু করে। কখনও ককপিটের কাচে চিড় ধরে যাচ্ছে তো কখনও জ্বালানি ‘লিক’ করে যাচ্ছে। কখনও সমস্যা হচ্ছে ব্রেকেও। বুধবার জাপানে জরুরি অবতরণ করতে বাধ্য হয় অল নিপ্পন এয়ারলাইন্সের একটি স্বপ্ন-বিমান। ব্যাটারি সংক্রান্ত সমস্যা হয়েছে বলে বিমানটির ককপিটে বার্তা আসে। ককপিট ও কেবিনে পোড়া গন্ধও পাওয়া যায়। পরে নিরাপত্তা অফিসাররা জানান, ব্যাটারিটি অতিরিক্ত গরম হয়ে ফুলে গিয়েছিল। এই ঘটনার পরেই বৃহস্পতিবার বিশ্ব জুড়ে সবক’টি স্বপ্ন-বিমানকে বসিয়ে দিয়েছে বিভিন্ন দেশ। গোটা দুনিয়ায় আপাতত এই মডেলের বিমান উড়ত মোট ৫০টি। তার মধ্যে এয়ার ইন্ডিয়ার ৬টি বিমানও ছিল। কিন্তু আপাতত এই ৫০টিরই উড়ান বন্ধ।
এ দিন সকালে চেন্নাই থেকে দিল্লি পাড়ির জন্য প্রস্তুত ছিল এয়ার ইন্ডিয়ার ড্রিমলাইনার। সেই উড়ানের আগেই দেশের বিমান পরিবহণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)-এর নির্দেশ আসে। তাতে বলা হয়, আপাতত উড়তে পারবে না স্বপ্ন-বিমান। এর আগে আমেরিকার বিমান পরিবহণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) বিশ্বের সমস্ত স্বপ্ন-বিমান বসিয়ে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিল। বুধবার অল নিপ্পন-এর ওই ঘটনার তদন্তের পরেই এফএএ এই সিদ্ধান্ত নেয়। আমেরিকার ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের কাছে ৭৮৭ বিমান রয়েছে ৬টি। বাকি ৪৪টি বিমান রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন বিমানসংস্থার কাছে। জাপানের দু’টি সংস্থা, অল নিপ্পন এবং জাপান এয়ারলাইন্স মোট ২৪টি ড্রিমলাইনার ব্যবহার করে। বুধবারের ঘটনার পরে তারা ২৪টি বিমানই বসিয়ে দিয়েছে। |
বৃহস্পতিবার দিল্লি থেকে ডিজিসিএ কর্তা অরুণ মিশ্র বলেন, “এফএএ-এর নির্দেশ পেয়েই আমাদের দেশের স্বপ্ন-বিমানগুলিকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমেরিকায় বিমানটি তৈরি হয়। তাই এফএএ-এর বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ।” তাহলে কি ভারত থেকে বিমানগুলিকে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হবে? অরুণবাবু বলেন, “না, এখানে রেখেই সারানো হবে। বোয়িং থেকে ইঞ্জিনিয়ারদের দল এসে সেটা করবে। তত দিন পর্যন্ত উড়বে না ড্রিমলাইনার।”
মার্কিন সংস্থা বোয়িংয়ের কাছে ২০০৭ সালে ২৭টি ড্রিমলাইনারের বরাত দিয়েছিল এয়ার ইন্ডিয়া। তখন বিমান প্রতি দাম ছিল ৭৫০ কোটি টাকা। এখন সেই দাম বেড়ে ১১৩৮ কোটি টাকা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৬টি বিমান এয়ার ইন্ডিয়ার হাতে এসেছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ৬টি আসার কথা। এই বিমান চালানোর জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠিয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হচ্ছে পাইলটদের। এখন ১৬ জন পাইলট সেখানে সংস্থার টাকাতেই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
এই স্বপ্ন-বিমান চালানো নিয়ে সংস্থারই দু’দল পাইলটের মধ্যে বিরোধের ফলে গত বছরে বন্ধ হয়ে যায় এয়ার ইন্ডিয়ার আন্তর্জাতিক উড়ান। আর্থিক ক্ষতি হয় সংস্থার। এমনিতেই লোকসানে চলছে তারা। তার উপরে এ বার ৬টি বিমান বসিয়ে দেওয়ায় লোকসান বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ ড্রিমলাইনারের আসন সংখ্যাও সাধারণ বিমানের চেয়ে অনেক বেশি। এখন এয়ার ইন্ডিয়ার অভ্যন্তরীণ রুটে দিল্লি ছাড়া আরও তিনটি শহর থেকে এই বিমান উড়ত। চেন্নাই, বেঙ্গালুরু ছাড়াও একটি বিমান প্রতিদিন বিকেলে কলকাতায় আসত। |
কিন্তু বৃহস্পতিবার কলকাতায় স্বপ্ন-বিমানের বদলে বোয়িং ৭৭৭ আসে। দিল্লি থেকে দুবাই, ফ্রাঙ্কফুর্ট, প্যারিস যাতায়াত করত দু’টি বিমান। একটি বিমান হাতে রাখা ছিল। জ্বালানি বাঁচাতে প্রধানত বিমানের ওজন কমানোর লক্ষ্যেই অ্যালুমিনিয়ামের বদলে তুলনায় হাল্কা পদার্থ দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল স্বপ্ন-বিমান। ব্যবহার হয়েছিল হাল্কা ‘রিচার্জেবল’ লিথিয়িম ব্যাটারি। এখন বেশির ভাগ সমস্যা ওই ব্যাটারি থেকেই হচ্ছে। এফএএ জানিয়েছে, এই ব্যাটারি থেকে ভবিষ্যতে যাতে বড় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা তৈরি না হয়, তাই সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েই স্বপ্ন-বিমানকে ডানা মেলার অনুমতি দেওয়া হবে। তবে কয়েক দিনের মধ্যেই ড্রিমলাইনার উড়তে পারবে বলে আশাবাদী এয়ার ইন্ডিয়া। |