পঞ্চায়েত ভোটের আগে ক্রমশই উত্তেজনার পারদ চড়ছে জেলায় জেলায়। খুন-জখমের ঘটনাও ঘটছে। শনিবার রাতে পাথরপ্রতিমার জি-প্লটের একটি পুকুর থেকে উদ্ধার হয় সিপিএম নেতা সুভাষ মণ্ডলের দেহ। তাঁকে পিটিয়ে, জলে ডুবিয়ে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই খুনের ঘটনায় জড়িত বলে দাবি পাথরপ্রতিমার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক যজ্ঞেশ্বর দাসের। ৫৪ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে থানায়। রবিবার দেহ ময়না-তদন্তে গিয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া।
শুক্রবার বিকেলে পঞ্চায়েত ভোটের দেওয়াল লিখনকে কেন্দ্র করে সিপিএম এবং তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের মারপিট বাধে জি-প্লট এলাকায়। দু’পক্ষের কয়েক জন জখম হন। ওই ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা সুভাষবাবু। তাঁর দেহ উদ্ধারের পরে বিক্ষোভ শুরু করে সিপিএম। প্রতিবাদ মিছিল বেরোয়। সেই মিছিল থেকে তৃণমূলের এক সমর্থককে মারধর করে মোটর বাইক পুড়িয়ে দেওয়া হয় বলে পাল্টা অভিযোগ উঠেছে।
রবিবার বিমানবাবু বলেন, “পাথরপ্রতিমায় গত শুক্র-শনিবার সিপিএমের কর্মী-সমর্থকদের উপরে হামলা হয়েছে। পুলিশ এলাকায় ঘুরে গেলেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। বাড়ি ফেরার পথে আক্রান্ত হন সুভাষ মণ্ডল। তাঁকে মারতে মারতে জলে ডুবিয়ে দেওয়া হয়।” অস্বীকার করে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক সমীর জানার দাবি, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সুভাষবাবুর মৃত্যু ঘটে থাকতে পারে। সমীরবাবু বলেন, “একটা গণ্ডগোল হয়েছিল। তার জেরে আমাদের এক সমর্থকের বাড়ি ও পার্টি অফিসে ভাঙচুর হয়েছে।” এই অভিযোগ মানতে নারাজ স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্ব।
দেওয়াল লেখাকে কেন্দ্র করে রবিবার দুপুরে সিপিএম-তৃণমূলের সংঘর্ষ বাধে দক্ষিণ ২৪ পরগনারই মথুরাপুরের কৃষ্ণচন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের খোজখিদি গ্রামে। আহত হয়েছেন ৩ সিপিএম সমর্থক। সামান্য ধাক্কাধাক্কির ঘটনাকে সিপিএম বাড়িয়ে বলছে বলে অভিযোগ করেছে তৃণমূল।
পরস্পরের বিরুদ্ধে বোমাবাজি, প্রার্থীদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল ও কংগ্রেস। শনিবার রাতে বীরভূমের সাঁইথিয়ার বাতাসপুর এলাকার দক্ষিণসিজা গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। দু’দলই থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। শনিবার রাতে কোচবিহারের দিনহাটা থানার চৌধুরীহাট এলাকায় ফরওয়ার্ড ব্লকের এক মহিলা প্রার্থীর বাড়িতে ইট-পাথর ছোড়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ফব-র জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, “প্রার্থিপদ প্রত্যাহারের জন্য চাপ সৃষ্টি করতেই তৃণমূল পরিকল্পিত ভাবে হামলা চালিয়েছে।” অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।
শিলিগুড়ির কাছে গজলডোবার মিলনপল্লি এলাকায় সিপিএমের প্রচারসভা থেকে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে রাতে। তৃণমূলের দাবি, সভা শেষ হয়ে আসার সময়ে সেখান দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন সাত আটজন তৃণমূল কর্মী। সেই সময়ে লাঠি, সোঁটা ও ধারাল অস্ত্র দিয়ে সিপিএম হামলা চালায় বলে অভিযোগ। তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি চন্দন ভৌমিকের দাবি, পাঁচ জন তৃণমূল কর্মী আহত হয়েছেন। সিপিএম অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এ দিন নদিয়ার হাঁসখালিতেও এক তৃণমূল কর্মীকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছে বলে অভিযোগ।
মনোয়নয়নপত্র প্রত্যাহারের হুমকি দিয়ে সিপিএমের এক পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থীর বাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে হাওড়া জেলার বাগনানের বরুন্দা গ্রামে। এ ক্ষেত্রেও অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। বাগনান ২ পঞ্চায়েত সমিতিতে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন সিপিএমের কার্তিক পতি। তাঁর অভিযোগ, রবিবার ভোরে তৃণমূলের পতাকা নিয়ে এক দল যুবক বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। চাপের মুখে মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন বলে মৌখিক প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি। স্থানীয় তৃণমূল নেতা শ্রীকান্ত সরকার বলেন, “ব্যক্তিগত বিবাদের জেরেই কার্তিকবাবুর বাড়িতে গিয়ে কিছু যুবক বচসায় জড়িয়ে পড়ে। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।”
|