আসন বণ্টনে নজিরবিহীন ঐক্য। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে, শাসক দলের তথাকথিত সন্ত্রাসের মোকাবিলায় ততই ভিন্ন সুর ধরা পড়ছে বামফ্রন্টের অন্দরে। ফরওয়ার্ড ব্লকের পরে এ বার আর এক বাম শরিক আরএসপি-রও দাবি, নির্বাচনের নামে প্রহসনের চেয়ে পঞ্চায়েত ভোট বন্ধ রাখা ভাল! কিন্তু বড় শরিক সিপিএম এখনও মনে করছে, ভোট বন্ধ করে দেওয়া সমাধান হতে পারে না। শাসক তৃণমূল অবশ্য সন্ত্রাসের যাবতীয় অভিযোগই উড়িয়ে দিচ্ছে।
তৃণমূলের হামলা ও হুমকির চোটে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর চরাবিদ্যা গ্রাম পঞ্চায়েতে সব আসনেই প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়েছে আরএসপি। আরএসপি-র জেলা সম্পাদক তথা বাসন্তীর বিধায়ক সুভাষ নস্করের নিজের এলাকা চরাবিদ্যা। আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদক ক্ষিতি গোস্বামী রবিবার বলেছেন, “রাজ্য নির্বাচন কমিশন শুধু রাজ্য সরকারকে বলেই দায় এড়াতে পারে না। নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারির পরে প্রশাসন এখন তাদেরই হাতে। কমিশনের দিক থেকে নিরাপত্তা না পেয়ে প্রার্থীরা মনোনয়ন তুলে নিতে বাধ্য হবেন, এটা কাঙ্ক্ষিত নয়। ফের মনোনয়নের ব্যবস্থা করা হোক। এই ভাবে নির্বাচন হলে মানুষ আরও বিপদে পড়বেন।” জেলা সম্পাদক সুভাষবাবুর বক্তব্য, “প্রস্তাবকদের ধরে ধরে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, মারধর করা হচ্ছে। বিডিও দফতরে তৃণমূলের নেতারা আরএসপি প্রার্থীর হাত ধরে নিয়ে গিয়ে মনোনয়ন তুলিয়ে দিচ্ছেন! আমাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, নির্বাচনের চেয়ে জীবনের দাম বেশি। তাই চরাবিদ্যা গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে সরে দাঁড়াতে হয়েছে।”
তাঁরাও কি মনে করছেন, প্রহসনের চেয়ে ভোট বন্ধ রাখা ভাল? সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর জবাব, “কোনও দল বললেই আমাদেরও বলতে হবে, তা নয়। এটা নিয়ে বামফ্রন্টে কোনও কথা হয়নি। রাজ্যে অন্য যে কোনও দলের তুলনায় সিপিএমের নেতা-কর্মীরা অনেক বেশি খুন হয়েছেন, আক্রান্ত হয়েছেন। তবু আমরা মনে করি, সামগ্রিক ভাবে এই আক্রমণের কথা ঐক্যবদ্ধ ভাবে মানুষের কাছে তুলে ধরতেই নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত।” ক্ষিতিবাবুদের অভিযোগ নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশন অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চায়নি।
ক্ষিতিবাবুদের আরও প্রশ্ন, ক্ষমতায় থাকার সময় কিছু কাজের জন্য সিপিএম তৃণমূলের আক্রমণের মুখে পড়তে পারে। কিন্তু তৃণমূলের কোনও ক্ষতি না-করেও স্রেফ বামফ্রন্টে থাকার কারণে কেন হামলা সামলাতে হবে?
এ দিন তৃণমূল ভবনে তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, “রাজ্য সরকার শান্তিপূর্ণ ভাবে পঞ্চায়েত ভোট করার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। নির্বিঘ্নেই ভোট হবে।”
মুকুলবাবুর পাল্টা দাবি, “২০০৩ সালে ৩১টা জেলা পরিষদের আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল বামেরা। ওই ভোটের আগে ৪৫ জন, ভোটের দিন ৪৭ জন এবং ভোটের পরে ২৫ জন মারা যান।” ২০০৮ সালেও প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি আসনে বামেরা বিরোধীদের প্রার্থী দিতে দেয়নি বলেও মুকুলবাবুর অভিযোগ। মুকুলবাবুর পাল্টা বক্তব্য, “যে সব অঞ্চলে বাম আমলে ব্যাপক সন্ত্রাস হয়েছে, মাটির তলা থেকে কঙ্কাল মিলেছে, সেই জায়গায় সিপিএমের প্রার্থী হওয়ার মতো কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না!” কমিশনের নিরপেক্ষতা প্রসঙ্গেও এ দিন ফের মুকুলবাবুর কটাক্ষ, “নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। বিরোধী দলের মতো আচরণ করছে!” |