কাল, সোমবার পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রথম দফার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। বাকি দুই দফার মনোনয়ন জমা দেওয়া চলছে। এরই মধ্যে দ্বিতীয় প্রাণহানির ঘটনা ঘটে গেল দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমায়।
নির্বাচনী সংঘর্ষে প্রথম বলি হন রানিগঞ্জের এক তৃণমূল কর্মী। শনিবার রাতে পাথরপ্রতিমায় জি-প্লট এলাকায় পুকুরে ভাসতে দেখা যায় সিপিএমের পঞ্চায়েত প্রধানের দেহ। নাম সুভাষ মণ্ডল (৫৯)। শুক্রবার বিকেলে ওই এলাকায় সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষ হয়। সিপিএমের অভিযোগ, তার জেরেই সুভাষবাবুকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। তাঁর মৃতদেহ নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত মিছিল করে সিপিএম। দলের জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, “পরিকল্পনা মাফিক খুন করে ওঁকে জলে ফেলে দেওয়া হয়েছে।” জেলা তৃণমূল সভাপতি চৌধুরী মোহন জাটুয়া বলেন, “আসলে কী ভাবে এই মৃত্যু, পুলিশ তদন্ত করে দেখুক।”
পাথরপ্রতিমা ছাড়াও বহু জায়গায় শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ উঠেছে। বীরভূমের বোলপুরে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের হাতে নিগৃহীত হন মহকুমাশাসক। পাথরের ঘায়ে জখম হন কমপক্ষে দশ জন পুলিশকর্মীও। দুই মহিলা-সহ বামফ্রন্টের ২৭ জন আহত হয়েছেন। দু’জন বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি। সংঘর্ষ হয়েছে দুবরাজপুরেও। শুক্রবার বিকেল থেকে এ দিনের মধ্যে বর্ধমানে তাদের ৪১ জন প্রার্থীকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ সিপিএমের। এঁদের ২০ জন মহিলা। তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে ঘণ্টাখানেক জিটি রোড অবরোধ করে কংগ্রেস। জামুড়িয়ার মদনপুর ও নিমষায় চার সিপিএম কর্মীকে মারধর ও বোমাবাজির অভিযোগও উঠেছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার চড়াবিদ্যায় আরএসপি-র ১৪ জনকে মারধর দিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হয়েছে বলেও অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ভাঙড়-১ ও ২ ব্লকে ১৩ জন প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রত্যাহারে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে। মালদহের মানিকচকে এক মহিলা আরএসপি প্রার্থীর বাড়িতে হামলা ও অপহরণের চেষ্টা হয়। তিন জন বোমায় জখম। হুগলির ধনেখালিতে সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের এক নেতাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। মহিলা প্রার্থীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলে নদিয়ার কৃষ্ণনগরে বিক্ষোভ দেখিয়েছে কংগ্রেস।
বহু জায়গায় আবার সিপিএম তথা বাম কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধেই হামলা করার অভিযোগ রয়েছে। শুক্রবার রাতে দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরে আবার এক তৃণমূল নেতাকে হাঁসুয়া দিয়ে কোপানোয় অভিযুক্ত সিপিএম। মালদহের কালিয়াচকে এক তৃণমূল কর্মীকে বাড়ি থেকে ডেকে গুলি করে মারা হয়েছে। বীরভূমের মাড়গ্রামে এক তৃণমূল কর্মীর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর পেটে লাথি মারার অভিযোগ উঠেছে ফব কর্মীদের বিরুদ্ধে। গ্রেফতার হয়েছে এক জন। মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামে বোমা-গুলিতে জখম হন দুই কংগ্রেস প্রার্থীর স্বামী। ধরা হয়েছে সিপিএমের সাত জনকে। রবিবার রাতে জলঙ্গিতে রৌশননগর গ্রামে সিপিএম এবং কংগ্রেসের সংঘর্ষে আট জন জখম হয়েছেন।
বর্ধমানের বুদবুদেও তৃণমূলের এক কর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে সিপিএমের বিরুদ্ধে। তাঁকে দেখতে এ দিন দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে যান তৃণমূলের মহাসচিব তথা শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এ দিনই রায়নায় প্রার্থিপদ না পাওয়ায় দলের এক নেতা ও তাঁর বাড়ির লোকজনকে মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের এক কর্মীর বিরুদ্ধে। প্রার্থিপদ নিয়ে বৈঠকের পরে বর্ধমানের দায়িত্বে থাকা পার্থবাবু বলেন, “অতিরিক্ত প্রার্থীদের প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করতে বলা হচ্ছে। অন্যথায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” আসন বণ্টন নিয়ে শুক্রবার বাঁকুড়ায় তুমুল গোষ্ঠী কোন্দলের পরে ওই জেলার বৈঠকও এ দিন দুর্গাপুরেই হয়েছে। |