আদালতের নির্দেশের পরেও রাজ্য সরকার পর্যাপ্ত সশস্ত্র বাহিনী জোগাড় করতে পারেনি। আজ, সোমবার এ কথা কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চকে জানাতে চলেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
অবাধ পঞ্চায়েত নির্বাচন করতে রাজ্য সরকারকে মোট ১ লক্ষ ৪৬ হাজার সশস্ত্র বাহিনী দিতে বলেছিল নির্বাচন কমিশন। ৪ জুন তাদের নির্দেশে ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য সরকারকে ওই বাহিনীর ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছিল। কমিশনের মতে, প্রথম দফায় দক্ষিণবঙ্গের ৯টি জেলার জন্য ১ লক্ষ ১৬ হাজারের মতো সশস্ত্র বাহিনী প্রয়োজন। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই বাহিনী জোগাড় করতে পেরেছে কি না তা রবিবার পর্যন্ত তারা কমিশনকে জানায়নি। কমিশন সূত্রে রবিবার বলা হয়, সোমবার ডিভিশন বেঞ্চকে এ কথা জানানো হবে। পর্যাপ্ত বাহিনী না পেলে কী ভাবে অবাধ নির্বাচন করা সম্ভব তাও হাইকোর্টের কাছে জানতে চাওয়া হবে।
রাজ্য কিছু না জানালেও বিভিন্ন সূত্রে কমিশন জানতে পেরেছে, প্রথম দফার ভোটের জন্য রবিবার পর্যন্ত মেরেকেটে ৫০ হাজারের বেশি সশস্ত্র বাহিনী জোগাড় করতে পারেনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। কেন্দ্রীয় সরকার যে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিতে পারবে না তা রাজ্যকে চিঠি লিখে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৫ জুন মমতা সেই চিঠির কথা সাংবাদিকদের জানান। কিন্তু, রাজ্য এখনও তা কমিশনকে জানায়নি। সে কথাও আদালতকে জানানো হবে বলে হাইকোর্ট সূত্রে খবর। মুখ্যমন্ত্রীর ওই সাংবাদিক বৈঠকের ভিডিও রেকর্ডও সংগ্রহ করেছে কমিশন।
মহাকরণ সূত্রে খবর, রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা গোটা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করবেন। সেই বৈঠকের রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হবে। তার পরেই রাজ্য সরকার ডিভিশন বেঞ্চে বিষয়টি জানাবে। হাইকোর্ট প্রতিটি বিষয় তাদের জানাতে বলেছে। তাই কমিশনকে চিঠি দিয়ে কিছু জানানোর আগে হাইকোর্টেরই শরণাপন্ন হবে রাজ্য। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া ও প্রত্যাহার নিয়ে রাজ্যে কোথায় কত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে সেই রিপোর্টও সোমবার রাজ্য হাইকোর্টে জমা দিতে পারে বলে মহাকরণ সূত্রে খবর।
কেন কমিশন মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় থেকে পর্যাপ্ত সশস্ত্র বাহিনী চেয়েছিল সোমবার হাইকোর্টে তার ব্যাখ্যা দেবে নির্বাচন কমিশন। কমিশন সূত্রের খবর, গত কয়েক দিন কোথায় কোথায় কত রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে তার সবিস্তার রিপোর্ট ডিভিশন বেঞ্চের কাছে জমা দিতে চলেছে কমিশন। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নির্বাচনী হিংসার ৪০০-রও বেশি অভিযোগ এসেছে কমিশনের দফতরে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। তবে তৃণমূলের পক্ষ থেকেও কিছু অভিযোগ মিলেছে।
প্রথম দফার যে ৯টি জেলায় নির্বাচন হবে সেখানে কত আসনে শাসক দল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে সেই পরিসংখ্যানও কমিশন সোমবার আদালতে পেশ করতে চলেছে। সব ইচ্ছুক ব্যক্তি যাতে মনোনয়নপত্র পেশ করতে পারেন তা সুনিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। কিন্তু তা যে হয়নি তাও তথ্য দিয়ে জানাবেন কমিশনের আইনজীবীরা। কমিশন সূত্রে খবর, হাইকোর্টে তারা যে রিপোর্টটি জমা দেবে তাতে, প্রথম পর্যায়ে কোথায় কোন দল কত আসনে প্রার্থী দেয়নি তার সবিস্তার পরিসংখ্যান থাকবে।
এ ব্যাপারে কমিশন যে রিপোর্ট তৈরি করেছে তাতে হুগলির খানাকুলের দুটি ব্লকের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, খানাকুল ১ নং ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৯২টি আসনে শাসক দল বাদে ৫ জন নির্দল প্রার্থী রয়েছেন। পঞ্চায়েত সমিতির ৩৯টি আসনে শাসক দল বাদে ১ জন বিজেপি প্রার্থী রয়েছেন। জেলা পরিষদের ৩টি আসনের মধ্যে মাত্র ১ জন বিজেপি প্রার্থী রয়েছেন। পাশাপাশি খানাকূল ২ নং ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৪৫টি আসনে তৃণমূল ছাড়া ১ জন বিজেপি প্রার্থী রয়েছেন। পঞ্চায়েত সমিতির ৩১টি আসনে তৃণমূল ছাড়া ১ জন কংগ্রেস প্রার্থী রয়েছেন। জেলা পরিষদের তিনটি আসনে কোনও বিরোধী প্রার্থী নেই।
কমিশনের এক মুখপাত্র এ দিন বলেন, ২০০৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৭ হাজার প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি। সে বারে কমিশন কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এ বার ৯টি জেলার ক্ষেত্রেই সংখ্যাটা ৩,৬০৭-এ পৌঁছে গিয়েছে। এ বারেও তারা ব্যবস্থা নিতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয়ে কমিশন। এই বিষয়টিও তারা সোমবার হাইকোর্টে তুলবে।
|