প্রথম দফার পঞ্চায়েত নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ২৫ দিন। ওই ২৫ দিনের মধ্যে রাজ্য সরকারকে জোগাড় করতে হবে অতিরিক্ত ৭৬ হাজার সশস্ত্র পুলিশ। সেই বাহিনী কোথা থেকে পাওয়া যাবে, শুক্রবার দুপুরে মহাকরণের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে তার কোনও জবাবই দিতে পারলেন না রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তারা।
আর ওই ৭৬ হাজার সশস্ত্র পুলিশ না-পেলে প্রথম দফার ন’টি জেলায় অবাধ ও সুষ্ঠু ভাবে নির্বাচন করা যাবে না বলে এ দিন ফের জানিয়ে দিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনী চেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আট রাজ্যের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিল। তাদের কেউই চিঠির জবাব দেয়নি। আর দিল্লি জানিয়ে দিয়েছে, তারা পঞ্চায়েত ভোটে কোনও কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠাতে পারবে না। অথচ রাজ্যে নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। গোলমাল চলছে বিভিন্ন জেলায়। সশস্ত্র বাহিনীর ব্যাপারে রাজ্য সরকার কী করল, তা জানতে চেয়েছে কমিশন। এই অবস্থায় রাজ্যের কী করা উচিত, তা নিয়ে এ দিন মহাকরণে বৈঠকে বসেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, পঞ্চায়েতসচিব সৌরভ দাস, রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়, এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) বাণীব্রত বসু এবং আইজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা। বৈঠকের পরে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত বলেন, “পঞ্চায়েত ভোট ঠিক সময়েই হবে।”
কিন্তু প্রয়োজনীয় বাহিনী আসবে কোথা থেকে? সুব্রতবাবু বলেন, “এখন কিছু বলব না।”
মন্ত্রী আশ্বাস দিলেও সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে এ দিনের বৈঠকে কোনও সিদ্ধান্তই নেওয়া যায়নি বলে মহাকরণ সূত্রের খবর। কমিশনকে রাজ্য সরকার চিঠিতে কী লিখবে, সেই ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র সোমবার দিল্লি থেকে ফিরলে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বৈঠক হবে। তার পরে মুখ্যমন্ত্রীই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। কমিশনকে চিঠিতে কী লেখা হবে কিংবা কলকাতা হাইকোর্টকে রাজ্য সরকার কী জানাবে, তা-ও ঠিক করে দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। কমিশন সূত্রের খবর, সোম বা মঙ্গলবার হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে গিয়ে কমিশনের আইনজীবী বাস্তব অবস্থা জানিয়ে রাখবেন। কী ভাবে ভোট হবে, সেই ব্যাপারে হাইকোর্টের নির্দেশও চাইবে কমিশন।
রাজ্য নির্বাচন কমিশন বলছে, প্রথম দফায় ন’টি জেলায় ভোট করতে হলে ১২০০ কোম্পানি সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষীর ব্যবস্থা করতে হবে রাজ্য সরকারকে। এ দিন পুলিশকর্তারা বৈঠকে জানান, রাজ্য পুলিশ এবং কলকাতা পুলিশের কাছ থেকে সর্বাধিক ৪৪০ কোম্পানি সশস্ত্র বাহিনী পাওয়া যেতে পারে।
মহাকরণের এক কর্তার কথায়, “এই অবস্থায় রাজ্যের কাছে দু’টি রাস্তা খোলা রয়েছে:
১) প্রথম পর্বের ভোট দু’দফায় নেওয়া।
২) তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র-সহ আরও কয়েকটি রাজ্যের কাছ থেকে বাহিনী চেয়ে পাঠানো।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন না-মিললে কিছুই করা যাবে না। মুখ্যসচিব এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন। তার পরেই যা হওয়ার হবে।”
কমিশন সূত্রে জানানো হয়েছে, শুক্রবারেও রাজ্য সরকার নিরাপত্তা বাহিনীর বিষয়ে কমিশনকে কিছুই জানায়নি। তাই প্রথম পর্বে মনোনয়ন পেশ করতে পারা বা না-পারা, তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের মন্তব্য, সারা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন ধরনের সংঘাত, সংঘর্ষের সবিস্তার তথ্য সংগ্রহ করছে কমিশন। সেই সঙ্গে বাহিনীর ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যও জেনে নিচ্ছে কমিশন। যাতে কমিশন মঙ্গলবার প্রয়োজনে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সরকারি অবস্থানের কথা বিস্তারিত ভাবে আদালতে জানাতে পারে।
বাহিনী নিয়ে এই টানাপোড়েনের মধ্যেই বিরোধীদের তরফে ভোট স্থগিত রাখার দাবি জানানো হল কমিশনের কাছে। পঞ্চায়েত নির্বাচন শান্তিপূর্ণ এবং অবাধ না-হলে ভোট স্থগিত রাখার দাবি তুলেছে ফরওয়ার্ড ব্লক। দলের রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষ বলেন, “আমরা রক্তপাত চাই না। তাই এই দাবি তুলতে বাধ্য হলাম।” মনোনয়নপত্র দাখিলকে কেন্দ্র করে কোচবিহার, বর্ধমান, হুগলি, বীরভূম ও বাঁকুড়ায় যে-সন্ত্রাস চলছে, তার কথা উল্লেখ করে ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা জয়ন্ত রায় বলেন, “কমিশনকে অনুরোধ, পঞ্চায়েত ভোট শান্তিপূর্ণ এবং অবাধ করতে পারলে করুন। নইলে ভোট স্থগিত করে দিন।”
|