তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করার জন্য বীরভূম জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
শুক্রবার কমিশন সূত্রে জানানো হয়, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৭১/সি ধারায় (নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অবাঞ্ছিত প্রভাব) মামলা রুজু করতে বলা হয়েছে।
গত রবিবার রামপুরহাটে এক কর্মিসভায় তৃণমূলের জেলা সম্পাদক অনুব্রতবাবু বলেছিলেন, “কংগ্রেস-সিপিএম আমাদের শত্রু। কাউকে মনোনয়ন ফাইল করতে দেবেন না। দরকার হলে আমাকে ডাকবেন।” এর পরেই বিভিন্ন জায়গায় হামলা-সংঘর্ষ উস্কে ওঠে। এ দিনও বোলপুরে সিপিএমের এক জেলাস্তরের নেতা ও কয়েক জন প্রার্থীকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।
অনুব্রতবাবুর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কি না, রাত পর্যন্ত অবশ্য তা জানা যায়নি। বীরভূমের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা এবং পুলিশ সুপার মুরলীধর শর্মা দু’জনেই সন্ধ্যায় দাবি করেন, এমন নির্দেশ তাঁরা পাননি। অনুব্রতবাবুও বলেন, “আমার কাছে এ ব্যাপারে কোনও খবর নেই।” বরং তাঁর বাড়িতে হামলার আশঙ্কায় এ দিনই ‘জেড ক্যাটাগরি’র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও সম্ভাব্য মাওবাদী হামলার কথা মাথায় রেখেই এই ব্যবস্থা করা হয়ে থাকতে পারে বলে গোয়েন্দা দফতর সূত্রের খবর। |
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে মাওবাদী হামলার আশঙ্কা থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের তৃণমূলের ছয় বিধায়ক-নেতাকে বৃহস্পতি ও শুক্রবার থেকে ‘জেড ক্যাটাগরি’র নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন নয়াগ্রামের বিধায়ক দুলাল মুর্মু, শালবনির শ্রীকান্ত মাহাতো, গোপীবল্লভপুরের চূড়ামণি মাহাতো, মেদিনীপুরের মৃগেন মাইতি, তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায় এবং তৃণমূলের নয়াগ্রাম ব্লক সভাপতি উজ্জ্বল দত্ত। উজ্জ্বলবাবু বলেন, “আমাদের উপরে যে কোনও সময়ে হামলা হতে পারে। প্রশাসন তা বুঝে, যা ব্যবস্থা নেওয়ার নিয়েছে।”
রাজ্যে যে সব জায়গায় প্রথম দফায় ভোট হওয়ার কথা, সেখানে হানাহানি চলছেই। বাঁকুড়ায় কর্মিসভায় গিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু দাবি করেন, “তৃণমূলের লোকেরা আমাদের মারধর করছে।” কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়া ‘সন্ত্রাস কবলিত এলাকা’ পরিদর্শনের জন্য রাজ্যের নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডের কাছে আর্জি জানিয়েছেন। |
এ দিন দুপুরে বোলপুরে মহকুমাশাসকের দফতরের কাছে মোটরবাইক আটকে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সমীর ভট্টাচার্যকে মারধর করা হয়। তিন মহিলা প্রার্থী ও দুই প্রস্তাবকের উপরে তৃণমূলের লোকেরা রড ও লাঠি নিয়ে চড়াও হয় বলেও অভিযোগ। কোচবিহারের তুফানগঞ্জে এসডিও অফিসের কাছে তৃণমূলের লোকেরা তাদের দু’জন মহিলা নেত্রীকে মারধর করে মনোনয়ন জমা দিতে দেয়নি বলে অভিযোগ সিপিএমের। তবে জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জে সিপিএমই এক তৃণমূল কর্মীর মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ। বর্ধমানের কাঁকসায় এ দিন দুই তৃণমূল কর্মীকে মারধর করা হয়। সিপিএম কর্মীরা গুলিও চালায় বলে অভিযোগ। পাণ্ডবেশ্বরে পঞ্চায়েত সমিতির এক সিপিএম প্রার্থীর স্বামীকে মারধর ও বাড়িতে ভাঙচুরে অভিযুক্ত তৃণমূল। বৃহস্পতিবার রাতে উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়ায় সিপিএম প্রার্থীকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। শুক্রবার রাতে বারাসত ২ ব্লকের দাদপুরে সিপিএম প্রার্থীদের বাড়ি ভাঙচুর ও মারধর করা হয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে এক মহিলা সিপিএম প্রার্থীর বাড়িতে বোমা মারা হয়।
|