হাওড়া লোকসভা উপনির্বাচনের ফল তাঁদের খুশি করেছে। কিন্তু এখনও বহু পথ পেরনো বাকি আছে বলে দলের কর্মী-সমর্থকদের সতর্ক করে দিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
গত কয়েক বছরের মধ্যে হাওড়ার উপনির্বাচনেই প্রথম বামেদের ভোটব্যাঙ্কের রক্তক্ষরণ বন্ধ হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। যদিও ক্ষত এখনও নিরাময় হয়নি। হাওড়ার ফল প্রকাশের পর প্রথম বার মুখ খুলে ঠিক এই কথাই বলেছেন বুদ্ধবাবু। সিপিএমের এই পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, “সব তথ্য এখনও পাইনি। কোথায় কত (হাওড়া) ভোট পেয়েছি, আরও জানতে হবে। প্রাথমিক ভাবে যা দেখেছি, আমরা খুশি, আনন্দিত। আমাদের ভোট বেড়েছে। ভোটের হার বেড়েছে।” গত বিধানসভা নির্বাচনে হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র ধরে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের সঙ্গে বামেদের ভোটের ব্যবধান ছিল প্রায় ১ লক্ষ ৮৬ হাজার, শতাংশের বিচারে ১৭। এ বারের উপনির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে বামেদের ব্যবধান হয়েছে ২৬ হাজার ৯৬৫, শতাংশের বিচারে ৩ শতাংশ। এই সূত্র ধরেই বুদ্ধবাবুর মন্তব্য, “ওরা আমাদের চেয়ে যত বেশি এগিয়ে ছিল, এখন কমে এসেছে। এই হচ্ছে ভবিষ্যৎ।” |
উত্তর ২৪ পরগনার টিটাগড়ে শুক্রবার সিটুর সভায় বুদ্ধবাবু আরও দাবি করেছেন, বালি এবং উত্তর হাওড়ায় সন্ত্রাস ছাড়া সুষ্ঠু ও অবাধ ভোট হলে বামেদের ফল আরও ভাল হত। শাসক দলের আক্রমণের মুখেও তাদের ফল ভাল হয়েছে বলে মনে করলেও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, “আপনারা বুঝতে পারছেন, কী চলছে এ রাজ্যে। এ জিনিস বেশি দিন চলতে পারে না। অনেকে বুঝতে পারছেন। কিন্তু সবাই এখনও বুঝতে পারেননি। যাঁরা এখনও বুঝতে পারেননি, তাঁদের কাছে আমাদের বার বার যেতে হবে। বোঝাতে হবে।”
ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে চার বছর আগের লোকসভা ভোটের সময় থেকেই কোণঠাসা হয়ে গিয়েছে বামেরা। অথচ এক সময় এই শিল্পাঞ্চল তাদের শক্ত ঘাঁটি ছিল। সদ্য অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে হাওড়ার শহর ও শিল্পাঞ্চলে জনসমর্থন কিঞ্চিৎ পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত পেয়েই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী গঙ্গার পূর্ব পাড়ের শিল্পাঞ্চলে দাঁড়িয়ে দলের কর্মী-সমর্থকদের আশু কর্তব্য ঠিক করে দিয়েছেন বলে সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা। বুদ্ধবাবুর কথায়, “শ্রমিকদের কাছে, খেটে খাওয়া মানুষের কাছে, সাধারণ লোকের কাছে আমাদের যেতে হবে। তা হলে পশ্চিমবঙ্গে আবার আমরা নতুন একটা পরিস্থিতি তৈরি করতে পারব। শেষ বিচার মানুষই করবেন।”
সিটুর ডাকে টিটাগড়ের সভায় এসে কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রমিক-বিরোধী নানা পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছেন বুদ্ধবাবু। আগামী লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের পালে হাওয়া থাকবে না বলেও দাবি করেছেন। তার পাশাপাশি পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে জটিলতা এবং অশান্তির জন্য রাজ্য সরকারকেও তুলোধোনা করেছেন। কটাক্ষ করেছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনকেও। তাঁর বক্তব্য, “পঞ্চায়েতে এটা কী হচ্ছে? এটা কি নির্বাচন? কমিশন কাউকে নিরাপত্তা দিতে পারছে না। প্রার্থী হিসাবে নাম লেখালে হামলা। বাড়ির লোক প্রার্থী হলে হামলা। প্রচার করলে মার। এটা কি চলতে পারে? এমনকী, সাংবাদিকদেরও মারছে! এক দল শুধু পড়ে মার খাবে, এটা কী করে হয়?” বারে বারে বিভিন্ন দাবি করা সত্ত্বেও প্রশাসন যে পঞ্চায়েতের মনোনয়ন পর্বে নিরাপত্তার
ব্যবস্থা করতে পারেনি, সে দিকে ইঙ্গিত করে রাজ্য সরকারের প্রতি প্রায় চ্যালেঞ্জের সুরেই এ দিন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, “যদি পঞ্চায়েত নির্বাচন চান, তা হলে এখনই মত পাল্টান!” সিটুর এ দিনের সভায় ছিলেন প্রাক্তন সাংসদ তড়িৎ তোপদার, প্রাক্তন মন্ত্রী রঞ্জিত কুণ্ডু, সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের মতো ট্রেড ইউনিয়ন নেতারা।
|