রাজস্থান রয়্যালস মালিক রাজ কুন্দ্রার ভাগ্য নির্ধারণ।
শ্রীসন্তদের নিয়ে বোর্ডের দুর্নীতিদমন শাখার অফিসার রবি সাওয়ানির রিপোর্ট নিয়ে সবিস্তার আলোচনা।
আইপিএলের শুদ্ধিকরণে অন্তর্বর্তিকালীন বোর্ড প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়ার কয়েক দফা প্রস্তাব।
খুব সংক্ষেপে, সোমবার দিল্লি দরবারে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের মহাবৈঠকের পূর্বাভাসের নির্যাসকে ধরতে গেলে, এ সবই পরপর উঠে আসবে। যেখানে অরুণ জেটলি, রাজীব শুক্ল, অনুরাগ ঠাকুর-সহ বোর্ডের মহাকর্তারা সবাই থাকবেন। যেখানে বোর্ড সচিব পদে বডোদরার সঞ্জয় পটেলের নামে সরকারি সিলমোহর পড়বে। যেখানে বোর্ড প্রেসিডেন্টের চেয়ারে নিজের দ্বিতীয় ইনিংসে জগমোহন ডালমিয়া নিজের কথামতো আইপিএলকে ‘পরিষ্কার’ করার আদর্শ মঞ্চ পাবেন।
কিন্তু পিছুপিছু উঠে আসছে অমোঘ প্রশ্নটারাজস্থান রয়্যালসকে সোমবারই কি আইপিএল থেকে বহিষ্কার করা যাবে? এতটা কড়া দাওয়াই কি দিল্লির জরুরি ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে নিতে পারবেন বোর্ড কর্তারা?
রবিবার রাত পর্যন্ত যা খবর, রাজস্থানকে এখনই বহিষ্কার করার সম্ভাবনা কম। যতই বোর্ড বা আইপিএলের সংবিধানে লেখা থাকুক যে, কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক অন্যায় কোনও কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে টুর্নামেন্টের ভাবমূর্তি নষ্ট করলে তাঁকে ও তাঁর ফ্র্যাঞ্চাইজিকে টুর্নামেন্ট থেকে বহিষ্কার করা হবে। বরং কর্তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে নতুন এক সম্ভাবনার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। গুরুনাথ মইয়াপ্পন কাণ্ডের যে তদন্ত কমিশন নিয়োগ করেছে বোর্ড, সেই কমিশনের হাতেই তুলে দেওয়া হতে পারে কুন্দ্রার ভাগ্য নির্ধারণ করার দায়িত্ব। তামিলনাড়ুর দুই বিচারপতিকে নিয়ে ওই কমিশনকে বলা হতে পারে, গুরুনাথকে নিয়ে তদন্তের পাশাপাশি কুন্দ্রার ব্যাপারটাও দেখতে। এ দিন রাতের দিকে এক বোর্ড কর্তা বলছিলেন, “বৈঠকে বিরাট কিছু ঘটে গেলে আলাদা কথা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি তাতে কমিশনের দিকেই ব্যাপারটা ঠেলে দেওয়া হবে। সঙ্গে খুব বেশি হলে কুন্দ্রাকে নির্বাসনে পাঠানো হবে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত। গুরুনাথের যা হয়েছিল।” |
পূর্বাভাস যা বলছে... |
১) রাজস্থান রয়্যালসকে আজই বহিষ্কারের সম্ভাবনা কম। বরং রাজ কুন্দ্রাকে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাসনে পাঠানো হতে পারে।
২) রবি সাওয়ানির রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা। শ্রীসন্তদের আজীবন নির্বাসনের শাস্তি ঘোষণা আজই হওয়ার সম্ভাবনা কম।
৩) কোষাধ্যক্ষ ঠিক হয়ে যেতে পারে।
৪) শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি থেকে সরানো হতে পারে শ্রীনিবাসনকে। |
|
ওয়াকিবহাল মহলের খবর, কুন্দ্রা এবং তাঁর টিম রাজস্থানকে বহিষ্কার করা যাচ্ছে না দু’টো কারণে।
এক) খুব স্বাভাবিক ভাবে তখন প্রশ্ন উঠবে, চেন্নাই সুপার কিংসও তা হলে বহিষ্কৃত হবে না কেন? তাদের মালিকও বেটিংয়ে জড়িয়েছেন। একই দোষে দোষী।
দুই) কুন্দ্রার বিরুদ্ধে এখনও গ্রেফতারি পরোয়ানা বার করতে পারেনি পুলিশ। তারা জানিয়েও দিয়েছে, হাতে যা তথ্যপ্রমাণ আছে সেটা দিয়ে কুন্দ্রাকে আদালতে তোলা যাবে না। পুলিশ তেমন তথ্য পায়নি। যা জানা গিয়েছে, সবই কুন্দ্রার স্বীকারোক্তির মাধ্যমে।
রাজস্থান রয়্যালস কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে, ফ্র্যাঞ্চাইজির স্বার্থে কুন্দ্রাকে ছেঁটে ফেলতে তারা দু’বার ভাববে না। রাজস্থান চেয়ারম্যান রঞ্জিত বড়ঠাকুর এবং সিইও রঘু আইয়ার ইতিমধ্যেই বিবৃতি মারফত সেটা বলেছেন। বলা হয়েছে, কুন্দ্রা গোটা টিমের মাত্র ১১.৭ শতাংশের মালিক। টিমের কাজকর্মের সঙ্গে কোনও যোগাযোগও তাঁর নেই। কুন্দ্রার স্বার্থ দেখতে গিয়ে আইন অমান্য করা হবে না। কিন্তু বোর্ডেরই কোনও কোনও কর্তা বলছেন, এই মুহূর্তে বোর্ডের পক্ষে চরম কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। বলা হচ্ছে, সে রকম কিছু ঘটাতে গেলে আইপিএলের গভর্নিং কাউন্সিলের বৈঠক আগে হত। যা হয়নি।
সাওয়ানির রিপোর্টকে ঘিরেও চরম কোনও সিদ্ধান্তে যাওয়া হবে বলে মনে করা হচ্ছে না। শোনা যাচ্ছে, নিজের রিপোর্টে শ্রীসন্ত-সহ দুই ক্রিকেটারকে আজীবন নির্বাসনে পাঠানোর প্রস্তাব দিতে পারেন সাওয়ানি। কিন্তু তাতেও নাকি ওয়ার্কিং কমিটির কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নেই। বরং বোর্ড কর্তাদের কথায়, শৃঙ্খলারক্ষা কমিটিতে শ্রীসন্তদের পুরো ব্যাপারটা পাঠানো হবে। এবং গড়াপেটায় অভিযুক্ত তিন ক্রিকেটারের বক্তব্য শোনার পরই শাস্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গায় আসবে বোর্ড। তবে চমক হতে পারে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সদস্যদের ঘিরে। আগে বোর্ড প্রেসিডেন্ট এন শ্রীনিবাসন সেখানে ছিলেন। এ বার সেই কমিটি থেকে তাঁকে সরানো হতে পারে। আরও জানা গেল, অজয় শিরকের জায়গায় বোর্ড কোষাধ্যক্ষ পদে কে আসবেন, সেটা নাকি বৈঠকে ঠিক হতে পারে।
দিল্লির পুলিশ কমিশনার নীরজ কুমার এ দিন ক্রিকেট থেকে ‘খারাপ’ প্লেয়ারদের উৎখাত করার ডাক দিয়েছেন। জানা গেল, ডালমিয়ার পক্ষ থেকে নাকি বৈঠকে আবার আইপিএলের কয়েকটা ব্যাপার ‘উৎখাত’ করার প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। যেমন ম্যাচ চলাকালীন ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের ডাগআউটে বসা বন্ধ করা। চিয়ারগার্ল ব্যাপারটাকে তুলে দেওয়া। স্ট্র্যাটেজিক টাইম আউট ছেঁটে ফেলার প্রস্তাব। সব ঠিক আছে। শুধু বিশাল ওলটপালটেরই যা সম্ভাবনা কম।
|