টিমের তিন ক্রিকেটার স্পট ফিক্সিংয়ের দায়ে জেলে গিয়েছেন আগেই। এ বার বেটিংয়ের অভিযোগ খোদ রাজস্থান রয়্যালস মালিক রাজ কুন্দ্রার বিরুদ্ধে।
আজ দুপুরে দিল্লির পুলিশ কমিশনার নীরজ কুমার সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করেন, তাঁদের জেরার মুখে রাজ কুন্দ্রা গত দু-তিন বছর ধরে আইপিএলে বেটিং করার কথা স্বীকার করেছেন। বলেছেন, ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং ব্যবসার অংশীদার উমেশ গোয়েন্কার মাধ্যমে বেটিং করতেন তিনি। এমনকী নিজের টিমের বিরুদ্ধেও বেটিং করতেন তাঁরা। পুলিশ জানিয়েছে, বেটিং করতে গিয়ে গত তিন বছরে কুন্দ্রার প্রায় এক কোটি টাকা লোকসান হয়ে গিয়েছে। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, জেরার মুখে কুন্দ্রার স্ত্রী তথা রাজস্থান মালকিন শিল্পা শেট্টির দিকেও আঙুল তুলেছেন উমেশ। বলেছেন, একটি ম্যাচে তাঁকে বেটিং করতে বলেছিলেন খোদ শিল্পা।
স্বভাবতই, চেন্নাই সুপার কিংসের গুরুনাথ মইয়াপ্পনের পর বেটিং কেলেঙ্কারিতে আরও এক টিমের মালিক-মালকিনের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় নতুন করে বিতর্কের ঝড় উঠেছে ভারতীয় ক্রিকেটে। আরও এক বার প্রশ্ন উঠেছে ফ্র্যাঞ্চাইজির ভবিষ্যৎ নিয়ে। তড়িঘড়ি বোর্ডের ওয়ার্কিং কমিটির জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে আগামী সোমবার, নয়াদিল্লিতে। বোর্ডের অন্তবর্তিকালীন প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া আজ কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠক ডেকে বলেছেন, “কঠিন শাস্তি যদি দেওয়া প্রয়োজন হয়, তা হলে সে ব্যাপারে অবশ্যই ভাবনা-চিন্তা করবে বোর্ড।” |
বোর্ড কী করবে পরের কথা। দিল্লি পুলিশ কিন্তু জানিয়ে দিয়েছে, রাজ কুন্দ্রার বিরুদ্ধে তাদের হাতে আপাতত কোনও প্রমাণ নেই। নীরজ কুমার বলেন, “শ্রীসন্তের বিরুদ্ধে আমাদের হাতে যে রকম তথ্যপ্রমাণ ছিল, তা থাকলে ব্যাপারটা অন্য রকম হত। এখানে কুন্দ্রা নিজেই পুলিশের কাছে বেটিং করার কথা স্বীকার করেছেন। কোর্টে গিয়ে আমরা কী বলব? এই ধরনের স্বীকারোক্তি আদালতে গ্রাহ্য হবে না।” সম্ভবত সেই কারণেই বুধবার বারো ঘণ্টা জেরার পরেও গ্রেফতার করা হয়নি কুন্দ্রাকে। সব চেয়ে বড় কথা, রাজস্থান রয়্যালসের তিন ক্রিকেটার স্পট ফিক্সিংয়ে দায়ে গ্রেফতার হলেও কুন্দ্রার বিরুদ্ধে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের কোনও প্রমাণ মেলেনি। পুলিশ কমিশনারেরও বক্তব্য, “এই মুহূর্তে আমাদের কাছে এমন কোনও তথ্য নেই যা থেকে বলা যায়, কুন্দ্রা কোনও ক্রিকেটারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিলেন।” অতি দুর্বল এবং জামিনযোগ্য জুয়া আইনে কুন্দ্রার বিরুদ্ধে মামলা করার আগ্রহ নেই দিল্লি পুলিশের। পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, তাঁদের তদন্তের লক্ষ্য স্পট ফিক্সিং আর বুকি-চক্র, ক্রিকেট বেটিং নয়। তা বলে অবশ্য এখনই কুন্দ্রাকে ক্লিনচিটও দেওয়া হচ্ছে না। আদতে ব্রিটিশ নাগরিক কুন্দ্রা যাতে আপাতত দেশ ছাড়তে না পারেন, সে জন্য তাঁর পাসপোর্ট আটক করা হয়েছে। তবে শিল্পাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হতে পারে কি না জানতে চাওয়া হলে নীরজ কুমার বলেছেন, “সংবাদমাধ্যমকে সেটা জানাতে আমরা বাধ্য নই।” এ প্রসঙ্গে আক্রমণাত্মক শিল্পা টুইটারে লিখেছেন, “এ সব একেবারে বাজে কথা। জীবনে কখনও বেটিং করিনি।”
পুলিশ সূত্রের দাবি, শিল্পার নাম যিনি তুলেছেন, সেই উমেশ গোয়েন্কা আসলে ক্রিকেট বুকি। তাঁর নাম প্রথম উঠে আসে রাজস্থান রয়্যালস ক্রিকেটার সিদ্ধার্থ ত্রিবেদীর বয়ানে। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সিদ্ধার্থ বলেছিলেন, আমদাবাদের ম্যাচের আগে উমেশ তাঁর কাছে এসে পিচ এবং দল বাছাই সংক্রান্ত নানা তথ্য চেয়েছিলেন। এর পরেই রাজ এবং উমেশকে জিজ্ঞাসাবাদের সিদ্ধান্ত নেয় দিল্লি পুলিশ। বুধবার দু’জনকেই ডাকা হয়েছিল লোধি রোডে স্পেশ্যাল সেলের দফতরে। সেখানেই আলাদা আলাদা ভাবে তাঁদের কাছ থেকে বেটিংয়ের স্বীকারোক্তি মেলে। নীরজ কুমার জানিয়েছেন, দু’জনকে আলাদা জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও দু’জনের বক্তব্যের মধ্যে কোনও অসঙ্গতি পাওয়া যায়নি।
বেটিংয়ের ‘স্বীকারোক্তি’ নিয়ে আজ তোলপাড় শুরু হতেই অবশ্য রাহুল দ্রাবিড়ের টিমের মালিক-মালকিন একযোগে টুইটারে সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশে বিষোদ্গারে নামেন। সারা দিনই টুইট করে গিয়েছেন রাজ-শিল্পা। তাঁকে গ্রেফতার করা হতে পারে বলে সংবাদমাধ্যমের জল্পনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজ কুন্দ্রা বলেন, “আমি খুব তাড়াতাড়ি সরকারি বিবৃতি দেব। কিন্তু ততক্ষণ পর্যন্ত আমার নীরবতাকে যেন আমার অপরাধের প্রমাণ বলে ধরা না হয়। আমি কোনও অন্যায় করিনি। যেটা সত্যি, সেটা ঠিক বেরিয়ে আসবে।” সকালে অবশ্য তিনি লিখেছিলেন, “ঘুম থেকে উঠেই দেখছি খবরে বলা হচ্ছে ‘রাজ কুন্দ্রা ফেসেস দ্য হিট।’ হ্যাঁ, মুম্বইয়ে আজ সত্যিই খুব গরম। মিডিয়া অপপ্রচার চালানোর বদলে সত্যিটা জানতে দিল্লি পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের আসল লোকগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করুক।... আমার নামে কি অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট বেরিয়েছে? আমি মুম্বই ফিরে এসেছি। দয়া করে অপমানজনক কথাবার্তা না বলে দিল্লি পুলিশকে কাজটা করতে দিন।” শিল্পা তখন লিখছেন, “স্টপ প্রেস! যা চলছে, দেখে গা রি রি করছে। ব্রেকিং নিউজ চ্যানেলগুলোকে বলব, তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তে পৌঁছবেন না। প্রকৃত অপরাধী কারা সেটা জানতে আমরাও সমান উদগ্রীব। আবার বলছি, স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারির শেষ দেখতে পুলিশকে যত রকম ভাবে সাহায্য করা সম্ভব, আমরা করব।”
|
জেলে ফিরলেন অঙ্কিত চহ্বাণ। বিয়ের জন্য এক সপ্তাহের অন্তর্বর্তী জামিন পেয়েছিলেন রাজস্থান রয়্যালসের এই ক্রিকেটার। জামিনের মেয়াদ শেষে বৃহস্পতিবার দিল্লির মুখ্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। তাঁর ১৮ জুন পর্যন্ত বিচার বিভাগীয় হেফাজত হয়েছে। অঙ্কিত ফের জামিনের আর্জি জানিয়েছেন। শুনানি শুক্রবার। |