বিলিতি ময়দান বাংলাদেশি মৃগেল থেকে ক্রিস গেইল,
বিলিতি ঠান্ডায় সব নিঃসঙ্গ
ড় পাবদা তিনটের প্যাকেট ৮৫০ টাকা।
বড় মৃগেল জোড়া ১৮০০ টাকা।
বড় কই জোড়া ১৫০০ টাকা।
বড় চিতল কেজি ৩৫০ টাকা।
বাংলাদেশি বোয়াল ৯০০ টাকা।
বার্মার বোয়াল ৮০০ টাকা।
ছোট ইলিশ তিনটের প্যাকেট ৮৫০ টাকা।
মাঝারি সাইজের ইলিশ ৭০০ টাকা।
মানিকতলা। ঠনঠনে। বা গড়িয়াহাট নয়। রোববার মাঝদুপুরে লন্ডনের মাছের বাজার ঘুরতে গিয়ে এই দরটা পাওয়া গেল। বড় বড় ফ্রিজারে শ’য়ে-শ’য়ে বিভিন্ন রকমের মাছ পাশাপাশি রাখা। এত ভ্যারাইটি যে আমাদের ওখানকার স্পেনসার-টেনসার তুলনাতেই আসবে না। এখানেই কাটিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে দূরে না দাঁড়ালে রক্ত ছলকে এসে শার্ট ভিজিয়ে দিতে পারে, কলকাতার সেই বাধ্যতামূলক সতর্কীকরণের কোনও প্রয়োজন নেই। আর একটা তফাত মাছের বাজারের সেই গমগমে ক্যাঁচরম্যাচরটাই নেই।
পূর্ব লন্ডনের শ্যাডওয়েল টিউব স্টেশনের ধারেই বিখ্যাত এই মাছ-পল্লী। পরপর দোকানগুলো। পরিষ্কার বাংলায় তার কোনওটার ওপর লেখা মাছ বাজার। কোনওটায় আপনার বাজার। কোনটার তলায় বাহারি বিজ্ঞাপন, এখানে বাংলাদেশি তাজা মাছ পাওয়া যায়। দোকানদারেরা সব সিলেটি। কলকাতার মাছের বাজার যদি বইমেলা হয়, এখানকারটা তবে দুুপুরের এলিয়ে থাকা অরবিন্দ আশ্রম এই ধারণাকে যাঁরা হয়তো মেনে নিতে প্রস্তুত নন। “গিজগিজে ভিড় অন্য রোববার থাকে। আজ ঠান্ডায় লোক নাই,” সিলেটিতেই জানালেন এক জন।
আজকের মতো অবিশ্বাসের মানে হয় না। কিছু আগে কেনিংটন ওভালে দেখে এসেছি ওয়েস্ট ইন্ডিজ নেট করছে জনশূন্য মাঠে। নেটে ব্যাট হাতে ক্রিস গেইল আর এখানে এত সস্তায় তাজা মাছগুলো একই নিঃসঙ্গতার শিকার। যা বয়ে এনেছে বিলিতি ঠান্ডা।
গ্রীষ্মকালীন ইংল্যান্ডের মনোরম সৌন্দর্য উপভোগ করতে শিগগির উড়ে আসুন এই বিজ্ঞাপনে ইন্টারনেট ছেয়ে দিয়েছে যে সব ট্র্যাভেল এজেন্সি আর ব্রিটেনের পর্যটন দফতর, তাদের তলায় ছোট করে লিখে দেওয়া উচিত যাঁরা জুনেই আসবেন বলে টিকিট কেটেছেন, সঙ্গে অবশ্যই আনবেন মাথা ঢাকা দেওয়ার টুপি, অন্তত দু’টো ফুলস্লিভ সোয়েটার, স্ট্রেপসিলসের একটা স্ট্রিপ আর গোটা পাঁচেক অ্যাজিথ্রাল ট্যাবলেট। স্থানীয়দের মুখে অহরহ অনুযোগ, ইংলিশ সামার কী, এ তো মার্চ-এপ্রিলের ওয়েদারই চলছে। কচিৎ সূর্যের দেখা মিলছে। আর সারা দিনই কনকনে হাওয়া।
নইলে ওভালে ম্যাচের দু’দিন আগে লম্বা নেটে গেইল অথচ ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানে অধ্যুষিত ওভাল এলাকায় তাঁকে দেখার জন্য একটা ছায়ামূর্তিও দাঁড়িয়ে নেই, হয় নাকি! মঙ্গলবারের ম্যাচটায় যারা জিতবে তারাই ‘এ’ গ্রুপ থেকে প্রথম সেমিফাইনাল চলে যাবে। অথচ অত গুরুত্বপূর্ণ যে প্র্যাক্টিসের বাহার দেখে বোঝাই যাচ্ছে না। সাধারণ পোশাকে দেখা গেল কিছু নেট বোলারকে। এরা কোথা থেকে এল? কে বললেন, মার্লন স্যামুয়েলসের মুম্বইয়ের কিছু ভারতীয় বন্ধু বল-টল করে আর এখানে আছে, তাদের ডেকে নেওয়া হয়েছে। কেউ আবার বললেন, ওরা সারে কাউন্টির ইয়ং বোলার্স। কোনটা ঠিক জানি না। তবে আন্তর্জাতিক প্র্যাক্টিসে ইউনিফর্মবিহীন বোলার তাঁর কাজে নিয়োজিত ভাবাই যায় না। ভাবা যায় না ওয়েস্ট ই ন্ডিয়ানরা যে কত রিল্যাক্সড। এই গ্রহেই যে স্পট ফিক্সিং বলে একটা উপদ্রব তোলপাড় ফেলে দিয়েছে। নিত্যদিন ধরপাকড় চলছে। সুনাম নষ্ট হচ্ছে এবং ভাঙছে এ সব মনেই হল না কারওকে কোনও স্পর্শ করেছে বলে।
আর ধোনির ভারতকে তো পাওয়াই গেল না প্র্যাক্টিসে। মার্লন স্যামুয়েলস যখন তেজি ভঙ্গিতে “ভারতকে আমাদের তিন ফাস্ট বোলার দিয়ে উড়িয়ে দেব” বলে ঘোষণা করে দিলেন, আপত্তিও করছে না কেউ। কেউ মনে করিয়ে দিচ্ছে না যে মার্লন কী করে বলছেন? ধোনির টিম এই আবহাওয়ায় টানা তিন ম্যাচ তিনশোর ওপর রান করেছে। দু’টো হোক না প্র্যাক্টিস ম্যাচ। টাফ প্রতিপক্ষ তো ছিল!
ভারতীয় মিডিয়া তখন আসলে বিহ্বল ভাবে এ দিনও প্র্যাক্টিসে টিম ইন্ডিয়ার গরহাজির থাকা নিয়ে তর্জন-গর্জনে ব্যস্ত। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাবার পর টানা তিন দিন ধোনিরা যে ব্যাট-বলে হাত দিলেন না এটা অনেকের কাছে পরম বিস্ময়কর মনে হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে অবশ্য মনে হল, কেলেঙ্কারি আর বিতর্কধ্বস্ত টিমের রুটিন ব্যাখ্যার অতীত নয়।
শুক্রবার ম্যাচ খেলার পর দিন কার্ডিফ থেকে ট্র্যাভেল করেছে। ট্র্যাভেল করার দিন প্র্যাক্টিস হয় না।
শনিবার একটা দিন নিজেদের গুছিয়ে নেওয়ার জন্য ছুটি পেয়েছে।
রোববার ব্যাট-বল না করলেও পুরো জিম সেশন আর পুল ট্রেনিং করেছে হোটেলে।
সোমবার সকাল দশটা থেকে ওভালে নেট থাকবে। সবই তো স্বাভাবিক। ওপর ওপর মেঘলা দেখালেও।
আর মেঘলা আবহাওয়ায় ঢেকে থাকা ইংল্যান্ডের ক্রিকেট মাঠ থেকে রাত্তিরে ভিক্টোরিয়া স্টেশনের কাছে বিখ্যাত ক্রাউন প্লাজা হোটেলে বাঙালি শিল্পপতির জন্মদিনের পার্টি সব এই ঘুরেফিরে আসছিলেন জীবনসঙ্কটে থাকা মান্না দে। বিবিসি-র সিনিয়র প্রোডিউসার মনে করাচ্ছিলেন, গত পরশু স্ট্র্যান্ডের এত বছরের ঠিকানা থেকে অক্সফোর্ড স্ট্রিটে স্থানান্তরিত হওয়া নতুন বিবিসি অফিস দ্বারোদ্ঘাটনে আসা ইংল্যান্ডের রানি মা’র কথা। সাতাশি বছরের এলিজাবেথ এখনও তরতরিয়ে ওঠেন বাড়ির একটা তলা থেকে আর একটা তলা। আর তাঁর স্বামী প্রিন্স ফিলিপ গত পরশু অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালের গাড়িতে উঠেছেন দিব্যি প্রাণশক্তিতে উচ্ছ্বল হয়ে। প্রিন্স ফিলিপ এবং মান্নার বয়স সমান তিরানব্বই।
কনকনে ঠান্ডা এবং বিষণ্ণ বিলিতি আবহাওয়ার ওপর ক্রিকেট সামান্য গরম আরোপ করতে পেরেছে গত কাল ইংল্যান্ড তাদের চিরশত্রুকে হারিয়ে দেওয়ায়। উত্তাপটা আরও ছড়িয়েছেন স্যর ইয়ান বোথাম অভিজাত ব্রডশিটে দেওয়া রবিবাসরীয় সাক্ষাৎকারে। বলেছেন, “অ্যাসেজ সিরিজ শুরুর আগে কালকের ম্যাচ দেখার পর আমি নিঃসন্দেহ হচ্ছি আগামী দশটা ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট ফল দাঁড়াবে ইংল্যান্ডের পক্ষে ১০-০।” বোথাম বলেছেন, “অস্ট্রেলিয়া যে রাস্তায় হাঁটছে তাকে হাস্যকর ছাড়া কী বলব? আইস বাথ। কোচের দেওয়া হোমটাস্ক করা এ সবের মানে কী? কোচ আবার এই পর্যায়ে এসে কী শেখাবে? বোগাস যত!” উন্নতির জন্য বোথামের প্রেসক্রিপশন সাহস করে বল হিট করো। বেশি বাউন্সার দাও। নেট প্র্যাক্টিস বস্তুটাকে শিকেয় তোলার ব্যবস্থা করো। আর ডেনিস লিলির সঙ্গে আরাম করে বিয়ার নিয়ে বসো। খেলাটা অনেক বেশি শিখবে।
নাইটহুড পেয়ে যাওয়ার পর আটান্ন বছরের বোথাম বেশ ক’বছর বোথামোচিত হাবভাব থেকে দূরেই ছিলেন। অকস্মাৎ ১৬ জুলাইয়ের অ্যাসেজ শুরুর আগে তাঁর পুরনো অবতারে প্রত্যাবর্তন মনে হচ্ছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিকেও নতুন আঙ্গিক দিল। টুর্নামেন্ট শুরু হতে না হতেই যুদ্ধের একটা বাজনা আগাম বেজে থাকল। অস্ট্রেলিয়াকে ১০-০। যা জীবনে কেউ কখনও বলেনি। সম্ভবত ভাবেওনি।
আইসিসি-র স্বেচ্ছাসেবকেরা মজা করে এ দিনই বলতে শুরু করেছেন, ফাইনালে আপনারা ভার্সেস আমরা। কাপ নিলাম আমরা ইংল্যান্ড। যারা পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে আজ পর্যন্ত কোনও বিশ্ব পর্যায়ের ট্রফি জেতেনি। শুনতে শুনতে মনে পড়ছিল জগমোহন ডালমিয়াকে সে দিনই সিএবিতে এক জন বলছিলেন, ‘ইন্ডিয়াই জিতবে যা দেখছি। তখন দেখবেন স্পট ফিক্সিং-টিক্সিং সব কাহিনি ধুয়েমুছে সাফ।’
দৃশ্যপট মান্নার গানের মতোই আপাতত ধূসর। জিন্দেগি, ক্যায়সি হ্যায় পহেলি হায়...।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.