প্রতীক বিলি নিয়েও তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব
জেলা পরিষদ আসনের প্রতীক বিলি নিয়েও তৃণমূলের দ্বন্দ্ব চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছল। অবস্থা এমনই যে প্রতীক বিলির দিনগুলিতে দলীয় কার্যালয়ে বসাতে হল পুলিশি পাহারা।
গোপীবল্লভপুর ব্লকের একটি আসনে মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন প্রাক্তন ছাত্র নেতা লোকেশ কর। দলের একটি অংশ তাঁকেই প্রার্থী হিসেবে চেয়েছিল। তবে জঙ্গলমহলের এক তৃণমূল বিধায়ক দলের অন্দরে হুমকির সুরে জানিয়েছিলেন, ওই লোকেশ প্রতীক পেলে তিনি বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেবেন। শেষমেশ পিছু হটেন নেতৃত্ব। লোকেশের বদলে প্রতীক পেলেন ওই বিধায়কের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত দিলীপ ঘোষ।
ডেবরার জেলা পরিষদ আসনে মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন দুই তৃণমূল নেতা রতন দে এবং বিবেক মুখোপাধ্যায়। রতনবাবু দলের ব্লক সভাপতি। স্থানীয় বিধায়ক রাধাকান্ত মাইতির ঘনিষ্ঠ। আর বিবেকবাবু দলের জেলা কোর কমিটির সদস্য। দলীয় সূত্রে খবর, বিধায়ক চেয়েছিলেন বলে এই আসনে প্রতীক পাওয়ার দৌড়ে এগিয়েছিলেন ব্লক সভাপতিই। তবে ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় অঞ্চল সভাপতিদের ‘বিদ্রোহ’। ১৪টি অঞ্চলের মধ্যে ৯টি অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়ে দেন, ব্লক সভাপতিকে প্রার্থী করা হলে তাঁরা পদত্যাগ করবেন। ফ্যাক্স মারফৎ বার্তা পৌঁছয় তৃণমূল ভবনে। দলের দুই গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানও তাতে গলা মেলান। এতেই হিসেব পাল্টে যায়। রাজ্য নেতৃত্ব জানিয়ে দেন, ব্লক সভাপতি নন, এই আসনে দলের প্রতীক পাবেন বিবেক মুখোপাধ্যায়।
শালবনির মণ্ডলকুপিতে তৃণমূলের
দেওয়াল লিখন।—নিজস্ব চিত্র।
প্রচার তুঙ্গে। শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকে তৃণমূলের দেওয়াল
লিখনে ব্যস্ত দলীয় সমর্থকরা। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।
এলাকায় এলাকায় এমন দ্বন্দ্ব যে কোনও সময় অশান্তি বাধাতে পারে। তাই শুক্র থেকে রবি যে তিন দিন মেদিনীপুর শহরের ফেডারেশন হল থেকে তৃণমূলের প্রতীক বিলি হল, প্রতিদিনই ছিল কড়া পুলিশি পাহারা। প্রথম দিন রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে দলের প্রতীক নিয়ে এসেছিলেন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। সঙ্গে যুব নেতা সৌরভ চক্রবর্তী। শুক্রবার রাতে ফেডারেশন হলের সামনে পুলিশ ভ্যান দেখে কিছুটা অবাক হয়েছিলেন তৃণমূল নেতারা। এক নেতা কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারকে প্রশ্নও করেন, ‘স্যার, এত রাতে এখানে এক গাড়ি পুলিশ। কী ব্যাপার? কোনও গোলমালের খবর আছে না কি?” অফিসারের জবাব, “তেমনই কোনও খবর আছে। না হলে থানা থেকে একসঙ্গে এত ফোর্স পাঠাবে কেন।”
জেলার প্রায় প্রতিটি ব্লকেই প্রতীক বিলি নিয়ে শাসকদলের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। দাঁতন ১, জামবনি থেকে কেশপুর, সর্বত্র তৃণমূল নেতা -কর্মীরা দু’টি শিবিরে বিভক্ত। ফলে, কোন ব্লকে জেলা পরিষদের আসনে কে প্রার্থী হবেন, তা নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছনো যায়নি। শুরুতে ঠিক ছিল, জেলা পরিষদের আসনে প্রার্থী নির্বাচন করবেন রাজ্য নেতৃত্ব। ক্ষেত্রে জেলা স্তর থেকে প্রস্তাব যাবে। তবে তীব্র দ্বন্দ্বের জেরে সিদ্ধান্ত বদলায়। পরিস্থিতি দেখে রাজ্য নেতৃত্ব বার্তা দেন, জেলা থেকে যাঁদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে, তাঁদের সকলে আপাতত মনোনয়ন দাখিল করবে। পরে জানানো হবে, কোন আসনে কে দলের প্রতীক পাবেন, আর কাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে হবে। এর পরই মনোনয়ন দাখিলের হিড়িক পড়ে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের ৬৭টি আসনে তৃণমূলের ১৫৭ জন মনোনয়ন জমা দেন।
আজ, সোমবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। রাজ্য নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত মতো ৬৭টি আসনে ৬৭ জনই ঘাসফুলের প্রতীক পেয়েছেন। বাকিদের মনোনয়ন তুলতে হবে। বাকি ৯০ জন মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন কি না, সেটাই দেখার। তবে, জেলা পরিষদের প্রতীক বিলি নিয়ে দলের দ্বন্দ্বের কথা মানতে নারাজ তৃণমূল। তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষের বক্তব্য, “আমরা তো সিপিএমের মতো উপর থেকে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিই না। ফলে, দ্বন্দ্বের ব্যাপার নেই। সুষ্ঠু ভাবে প্রতীক বিলি হয়েছে। যে সব ক্ষেত্রে মতবিরোধ ছিল, তা আলোচনায় মিটেছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে দল ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়বে।”

পুরনো খবর :


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.