বকেয়া নিয়ে মাল্টি-সার্ভিসেস অপারেটর (এমএসও) মন্থন ও চ্যানেল সম্প্রচার সংস্থার বিবাদের ফল ভুগছেন কেব্ল টিভি-র দর্শকরা।
মন্থনের গ্রাহকদের অভিযোগ, এই বিবাদের জেরে ইএসপিএন, স্টার স্পোর্টস ও স্টার ক্রিকেট এই ৩টি চ্যানেলই উধাও। কখনও সখনও টিভিতে সেগুলি ভেসে উঠলেও তা সাময়িক। সংশ্লিষ্ট চ্যানেল সংস্থা জানিয়ে দিয়েছে, এই মুহূর্তে মন্থনের পরিষেবায় বন্ধ রাখা চ্যানেলগুলির প্রদর্শন বেআইনি।
বৃহত্তর কলকাতায় অ্যানালগের বদলে ডিজিটাল কেব্ল পরিষেবা পুরোপুরি চালু হয়েছে গত ফেব্রুয়ারিতে। মন্থনের মতো বিভিন্ন এমএসও-র গ্রাহকদের অভিযোগ, তাঁরা নিয়মিত মাসুল দিলেও মাঝেমধ্যেই পছন্দের চ্যানেল দেখতে পাচ্ছেন না। অভিযোগ জানিয়েও সুরাহা হয়নি। বিভিন্ন এমএসও-র প্যাকেজগুলি কবে চালু হবে, তা নিয়েও বিভ্রান্তি রয়েছে।
খেলার ওই তিনটি চ্যানেল-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ইএসআইপিএল জানিয়েছে, টাকা বাকি পড়ায় ২ জুন থেকে মন্থনের পরিষেবায় সেগুলির সম্প্রচার বন্ধ আছে। চ্যানেলগুলি দেখালে সংশ্লিষ্ট পক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা। সংস্থার এক মুখপাত্রের বক্তব্য, দীর্ঘ দিন টাকা বকেয়া থাকলেও তাঁরা পরিষেবা চালু রেখেছিলেন। সম্প্রতি মন্থন তার একাংশ মেটাতে চেক দিলে তা বাউন্স করে। ফলে ২১ দিনের নোটিস দিয়ে সম্প্রচার তালিকা থেকে চ্যানেল তুলে নিতে বাধ্য হন তাঁরা। উল্লেখ্য, চ্যানেল বন্ধের আগে ২১ দিনের নোটিস দেওয়াই এই ব্যবসার নিয়ম। |
আর্থিক সমস্যায় বকেয়া মেটাতে দেরির কথা মানলেও তার পরিমাণ নিয়ে ইএসআইপিএল-এর হিসেব মানতে নারাজ মন্থন। তাদের পাল্টা দাবি, এই সমস্যা এত বড় আকার নেওয়ার দায় ওই সংস্থারও। কিন্তু এ জন্য তো গ্রাহকদের ভুগতে হচ্ছে? মন্থনের অন্যতম কর্তা সুদীপ ঘোষ বলেন, “গ্রাহকদের কথা ভেবে সম্প্রতি কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের উপস্থিতিতে ওঁদের সঙ্গে বৈঠকে বকেয়ার বড় অংশ মিটিয়ে দেব বলি। তাঁরা প্রথমে রাজি হলেও পরে পিছিয়ে যান।” সুদীপবাবুর দাবি, এই ব্যবসায় বকেয়া থাকে। আলোচনার মাধ্যমে ধাপে ধাপেই তা মেটানো হয়। তাঁর অভিযোগ, “প্রতি বারই ভাল খেলার সময়ে এ ভাবে চাপ দিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা হয়।” চেক বাউন্সের বিষয়টি বিচারাধীন বলে মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
আর্থিক সমস্যার দায় এমএসও-রা কিছুটা কেব্ল অপারেটরদের উপরেও চাপিয়েছেন। তাঁদের দাবি, কিছু অপারেটর গ্রাহকদের থেকে পুরনো অ্যানালগ পরিষেবার হারেই কম টাকা নিচ্ছেন। কিন্তু ডিজিটাল ব্যবস্থায় খরচ বেড়েছে। গ্রাহকসংখ্যা বেশি দেখে চ্যানেল সংস্থাগুলিও বেশি টাকা চাইছে। উপরন্তু, অপারেটরদের একাংশ গ্রাহক মাসুলের ভাগ ঠিক মতো এমএসওদের দিচ্ছেন না। অপারেটরদের করের টাকাও অনেকটাই এমএসওদের পকেট থেকে যাচ্ছে। কিন্তু আগে এমএসও-রা যে ‘ক্যারেজ ফি’ পেতেন, তা-ও কমে গিয়েছে। ফলে চ্যানেল সংস্থার বকেয়া মেটাতে সমস্যায় পড়ছেন এমএসও-রা। সুদীপবাবু ও সিটি কেব্ল-এর কর্তা সুরেশ শেঠিয়া বলেন, “গত নভেম্বর থেকে বাড়তি বোঝা এমএসওদের বইতে হচ্ছে। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান না-হলে ব্যবসা চালানোই অসম্ভব হয়ে পড়বে।”
গ্রাহকদের থেকে নতুন হারে বাড়তি মাসুল না-নিতে পারার দায় কেব্ল-অপারেটেরা এমএসওদের উপরে চাপিয়েছে। আইডিয়াল কেব্ল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা অলোক শর্মার বক্তব্য, বারবার এই ব্যবস্থা পিছিয়ে যাওয়ায় এখনও প্যাকেজগুলি কার্যত চালু হয়নি। ফলে তাঁরা সর্বত্র বাড়তি টাকা নিতে পারছেন না। তিনি বলেন, “যতক্ষণ না পুরোদস্তুর প্যাকেজ চালু হচ্ছে, ততক্ষণ সমস্যা হবে। নতুন ব্যবস্থায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেও সময় লাগে।” তবে মাসুল বণ্টনের সরকারি নীতি মানতে নারাজ অলোকবাবু। তাঁর দাবি, তাঁদের খরচও বেড়েছে। ফলে সরকারি নীতি পুনর্মূল্যায়নের জন্য তাঁরা কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানিয়েছেন।
বস্তুত, প্যাকেজ চালু হওয়া নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। সিটি কেব্ল-এর গ্রাহকদের একাংশের অভিযোগ, জুলাই থেকে তা চালু হবে বলে জানিয়েছিলেন অপারেটরেরা। কিন্তু এখনই অনেক চ্যানেল টিভি থেকে উধাও। সুরেশবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁরা ট্রাই-এর নির্দেশিকা মেনেই চলছেন। এবং তা অপারেটরদেরও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “হয়তো সব অপারেটর এখনও গ্রাহকদের কাছে পৌঁছতে পারেননি বলেই এই সমস্যা হয়েছে।”
গ্রাহক মহলের অভিযোগ, সকলেই তাঁদের মতো করে যুক্তি দিচ্ছেন। একে অপরের উপর দায়ও চাপাচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের বঞ্চনার বিষয়টি কাযর্ত উপেক্ষিতই থেকে যাচ্ছে।
|