সেট-টপ বক্সের মাধ্যমে ডিজিটাল কেবল পরিষেবা মসৃণ করতে এক গুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করল টেলিকম নিয়ন্ত্রক ট্রাই। ওই পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকেরা কোনও সমস্যার মুখে পড়লে, যাতে তাঁরা দ্রুত প্রতিকার পান, ওই নির্দেশিকায় তা-ই নিশ্চিত করতে চেয়েছে তারা। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পরিষেবা চালুর আগেই এমন পরিকাঠামো তৈরির, যাতে কোনও সমস্যার কথা সংশ্লিষ্ট মাল্টি সিস্টেম অপারেটর (এমএসও) বা কেবল অপারেটরকে জানাতে গিয়ে হেনস্থা না-হতে হয় গ্রাহককে। এর মধ্যে অভিযোগ শোনার জন্য টোল-ফ্রি (নিখরচার) ফোন নম্বর রাখার কথা যেমন বলা হয়েছে, তেমনই উল্লেখ করা হয়েছে অভিযোগ শোনার জন্য প্রতিটি এলাকায় আলাদা কেন্দ্র চালুর কথাও। জানানো হয়েছে, গ্রাহকের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার ৮ ঘণ্টার মধ্যে তা সমাধানের জন্য পদক্ষেপ করতে হবে। কেবল সংযোগ ছিন্ন করতে হলে, নোটিস দিতে হবে অন্তত ১৫ দিন আগে।
জুলাই থেকে এই পরিষেবা চালু করতে হলে, এমএসওগুলির হাতে রয়েছে সাকুল্যে মাস দেড়েক সময়। তাই এর মধ্যে এই সব কিছু করে ফেলা কী করে সম্ভব হবে, প্রশ্ন রয়েছে তা নিয়ে। অবশ্য কলকাতার যে সব অঞ্চলে ইতিমধ্যেই ক্যাস চালু রয়েছে, সেখানে এ সবের প্রাথমিক পরিকাঠামো ইতিমধ্যেই মজুত রয়েছে বলে দাবি সিটি কেবলের কর্তা সুরেশ শেঠিয়া এবং মন্থনের কর্তা সুদীপ ঘোষের। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ওই পরিকাঠামোকেই আরও উন্নত করতে সমস্যা হবে না বলে তাঁদের ধারণা। অনেকের অবশ্য প্রশ্ন থাকছে ক্যাস বহির্ভুত অঞ্চল নিয়ে। ট্রাইয়ের নির্দেশ খতিয়ে দেখার আগে মুখ খুলতে না-চাইলেও সেখানকার এমএসওগুলির দাবি, সময়ের মধ্যেই এ সব করার চেষ্টা করবে তারা।
এ দিন ট্রাইয়ের মূল নির্দেশগুলি হল
• পরিষেবা চালুর আগেই প্রত্যেক এমএসও (অথবা তার সঙ্গে যুক্ত কেবল অপারেটর)-কে নিজের পরিষেবা ক্ষেত্রে অভিযোগ গ্রহণের কেন্দ্র তৈরি করতে হবে। যেখানে হিন্দি ও ইংরেজির সঙ্গে স্থানীয় ভাষাতেও অভিযোগ জানাতে পারবেন গ্রাহক।
• সপ্তাহে সাত দিনই এই কেন্দ্র খোলা রাখতে হবে সকাল ৮টা থেকে রাত্রি ১২টা পর্যন্ত।
• অভিযোগ শুনতে যথেষ্ট কর্মী রাখতে হবে কেন্দ্রে।
• প্রতিটি কেন্দ্রে থাকতে হবে গ্রাহক পরিষেবা (কনজিউমার কেয়ার) নম্বর। এবং তা হতে হবে ‘টোল-ফ্রি’। যাতে ফোনে বিনা খরচে সেখানে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন গ্রাহকেরা।
• ফোন করে লাইন পাওয়ার জন্য যাতে অনন্তকাল অপেক্ষা করতে না-হয়, তা-ও নিশ্চিত করতে চেয়েছে ট্রাই। যেমন, ওই সব নম্বরের জন্য যথেষ্ট সংখ্যক ‘লাইন’ বা ‘কানেকশন’ রাখার কথা বলা হয়েছে।
• জোর দেওয়া হয়েছে ইন্টারঅ্যাক্টিভ ভয়েস রেসপন্স (আইভিআরএস) প্রযুক্তি ব্যবহারের উপরও। অর্থাৎ, এর মাধ্যমে ফোনের উল্টো প্রান্তে থাকা কম্পিউটারের সঙ্গে কথা বলেই পছন্দের ভাষা বাছাই থেকে শুরু করে অভিযোগ দায়েরের কয়েকটি কাজ সেরে ফেলা যাবে। এখন যেমন অনেক ক্ষেত্রেই গ্যাস বুকিংয়ের সময় করে থাকি আমরা।
• ফোনে অপেক্ষার দৈর্ঘ কমাতে বেঁধে দেওয়া হচ্ছে কোনও কলের উত্তর দেওয়ার সময়সীমাও (রেসপন্স টাইম)। যেমন, ট্রাই জানিয়েছে, যত ফোন আসবে, অন্তত কম্পিউটার মারফৎ তার ৮০ শতাংশের জবাব দিতে হবে ২০ সেকেন্ডের মধ্যে। একই ভাবে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে অভিযোগ কেন্দ্রের কোনও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলার জন্য অপেক্ষার সময়সীমাও।
• এই পরিষেবা নম্বর যাতে গ্রাহকের নজরে আসে, তা নিশ্চিত করতে প্রতি ছ’মাসে অন্তত এক বার কম পক্ষে একটি হিন্দি অথবা ইংরেজি এবং একটি স্থানীয় ভাষার কাগজে নোটিস দিতে হবে। ওই নম্বর ঝুলিয়ে দিতে হবে অভিযোগ কেন্দ্র, বিপণন কেন্দ্র এবং ওয়েবসাইটেও।
• জমা পড়া অভিযোগের উপর নজরদারির জন্য সহায়তা নিতে হবে তথ্যপ্রযুক্তির। তৈরি করতে হবে ‘ওয়েব-বেসড্ কমপ্লেন মনিটরিং সিস্টেম’।
• অভিযোগ গ্রহণের সময় সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে ডকেট নম্বর দিতে হবে। কত সময়ের মধ্যে তা সমাধান করা সম্ভব হবে, তা-ও জানাতে হবে তাঁকে। কোনও ক্ষেত্রে তা আগাম জানানো সম্ভব না-হলে, সারিয়ে ফেলার চেষ্টা করতে হবে তিন দিনের মধ্যে। নথিবদ্ধ রাখতে হবে সমস্যা সমাধানের জন্য করা প্রতিটি পদক্ষেপও।
• পরিষেবা চালুর আগেই প্রত্যেক এমএসও (অথবা তার সঙ্গে যুক্ত কেবল অপারেটর)-কে বাধ্যতামূলক ভাবে অন্তত এক জন নোডাল অফিসার নিয়োগ করতে হবে। এই অফিসারদের নাম, ঠিকানা, টেলিফোন নম্বর, ই-মেল, ফ্যাক্স নম্বর ইত্যাদি যথাসম্ভব ছড়িয়ে দিতে হবে। যাতে সমাধানে সন্তুষ্ট না-হলে, বিষয়টি তাঁর নজরে আনতে পারেন গ্রাহক।
• এই সমস্ত নির্দেশ বলবৎ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে গ্রাহকদের জন্য হিন্দি, ইংরেজি এবং স্থানীয় ভাষায় একটি তথ্যপঞ্জী তৈরি করতে হবে এমএসও (অথবা তার সঙ্গে যুক্ত কেব্ল অপারেটর)-কে। যার মধ্যে থাকবে গ্রাহক পরিষেবা নম্বর থেকে শুরু করে অভিযোগ জানানোর পদ্ধতির বিশদ বিবরণ পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সব কিছুই।
• পরিষেবায় থাকা প্রতিটি চ্যানেলের নাম দেখাতে হবে গ্রাহককে। চানেলের কাছে নেওয়া যাবে না ‘প্লেসমেন্ট ফি’-ও। |