পড়শি রাজ্যের পর্যটকদের জন্য একগুচ্ছ ‘ট্যুরিস্ট-স্পট’ সাজাচ্ছে ঝাড়খণ্ড। প্রাতরাশে লুচি-আলুরদম, দুপুরে গরম ভাত-পাঠার মাংস, সন্ধ্যায় মশালের আলোয় আদিবাসী নাচগান—সব ব্যবস্থাই থাকবে সেখানে।
মাওবাদী আতঙ্কে কার্যত থমকে যাওয়া পর্যটন ব্যবসায় ফের গতি আনতে এ বার এমনই ছক কষেছে রাজ্য প্রশাসন। এ কাজে সামিল করা হয়েছে গ্রামের মানুষকেও।
পর্যটন কর্তাদের বক্তব্য, পাহাড়-জঙ্গল-নদীতে ঘেরা ঝাড়খণ্ডে পুরনো সময়ে বারবার গিয়েছেন পড়শি পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দারা। ‘স্বাস্থ্যেদ্ধার’ই হোক বা নিছক দু’দিনের বেড়ানোবাংলার মানুষের ভিড়ে জমজমাট থাকত ঘাটশিলা, গালুডি, হাজারিবাগের মতো পর্যটককেন্দ্রগুলি। রাঁচি, ডালটনগঞ্জ, বেতলা, ম্যাকল্যাক্সিগঞ্জ—ছবিটা একইরকম ছিল সব জায়গাতেই।
এখন পরিস্থিতি একেবারেই
বদলে গিয়েছে।
পর্যটন দফতরের এক অফিসারের কথায়, “পুরনো অনেক বাংলা উপন্যাস, গল্পেই ঝাড়খণ্ডের প্রাকৃতিক রূপের কথা লেখা হয়েছে। ওই সব দিনগুলোই আমরা ফেরাতে চাই।” মাওবাদীদের ভয়েই যে পর্যটকরা ওই রাজ্য থেকে মুখ ফিরিয়েছেন সে কথাও মেনেছেন সরকারি আমলা। তিনি জানিয়েছেন, পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে কেউ ঘুরতে না-গেলে ওই এলাকার সাধারণ মানুষই যে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তা এখন সবাইকে বোঝানো হচ্ছে। |
রাঁচির কাছে দশম জলপ্রপাত পর্যটকদের অপেক্ষায়। প্রশান্ত মিত্রের তোলা ছবি। |
পর্যটকদের ফেরাতে কী ভাবে সাজছে ঝাড়খণ্ড? পর্যটন দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মুখ্য সচিব সজল চক্রবর্তী জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে পশ্চিমবঙ্গের লাগোয়া ৩৩ নম্বর জাতীয় সড়কের কয়েকটি পর্যটনকেন্দ্রই সাজানো হচ্ছে। পরবর্তী পর্যায়ে অন্য এলাকাগুলিতেও কাজ চলবে। সজলবাবু জানান, ওই জাতীয় সড়কে বহরাগোড়া থেকে রাঁচির মধ্যে ঘাটশিলা, সতীঘাট, গালুডি, পরেশনাথ, দশম জলপ্রপাতের মতো সপ্তাহান্তে বেড়ানোর জায়গা রয়েছে। সে সব জায়গায় থাকার ব্যবস্থা, খাওয়ার জায়গা, বিনোদনের নতুন ব্যবস্থা করা হবে।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে ‘পুরনো’ ধাঁচের হোটেল তৈরি হবে। তবে সেখানে আধুনিক সব সুযোগ সুবিধাই মিলবে। ওই সব হোটেলে ভারতীয়, মোগলাই, চাইনিজ খাবারের পাশাপাশি পাওয়া যাবে লুচি, ঘুগনি, আলুর দম, পাঁঠার মাংস, রসগোল্লার মতো বাঙালি-খানাও। সন্ধ্যায় স্থানীয় শিল্পীদের আদিবাসী নাচগান। পর্যটকদের জন্য রাঁচি, টাটানগর, ঘাটশিলার মতো অন্য কয়েকটি স্টেশনে ‘কিয়স্ক’ রাখবে পর্যটন দফতর। তার সাহায্যে কোনও পর্যটনকেন্দ্রে ঘোরার ছক তৈরি করতে পারবেন যে কেউ-ই।
সজলবাবু জানিয়েছেন, পুজোর আগেই অন্তত ছ’টি ‘উইকএন্ড ট্যুর স্পট’ সাজানোর কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। কোন প্যাকেজে, কত খরচে, কোন জায়গা ঘোরা যাবে—তা নিয়ে সমস্ত তথ্য ক’দিন পর থেকেই মিলবে কলকাতার পর্যটন সংস্থাগুলির কাছে। |