উত্তরবঙ্গে আগমনীর রাত পোহানোর সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গে হাজির হল বর্ষা।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল থেকেই প্রাক্-বর্ষার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। শনিবার মৌসুমি বায়ু দক্ষিণবঙ্গের একাংশে ঢুকেছে। এবং গোটা রাজ্যেই বর্ষার অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর ফলে আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে গোটা রাজ্যেই বর্ষা ঢুকে পড়বে বলে আবহবিদদের অনুমান।
এ দিন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের আবহবিদ গণেশকুমার দাস বলেন, “মৌসুমি বায়ুর একটি শাখা ওড়িশা হয়ে কলকাতা ও সংলগ্ন জেলাগুলিতে ঢুকেছে।” আবহাওয়া অফিস সূত্রের খবর, দক্ষিণবঙ্গ পেরিয়ে বাংলাদেশের একাংশের উপর দিয়ে মৌসুমি বায়ুর মুখটি উত্তরবঙ্গে পৌঁছনোর ফলে ওই এলাকায় বর্ষার পরিস্থিতি জোরালো হয়েছে। স্বাভাবিক নিয়মে ৮ জুন দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা হাজির হওয়ার কথা। এ বছর সেই নিয়ম কাঁটায় কাঁটায় মেনে চলেছে মৌসুমি বায়ু। সাম্প্রতিক কালে বর্ষার এমন নিয়মানুবর্তিতা চোখে পড়েছে ২০০৮ সালে। সে বছর ৯ জুন দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা হাজির হয়েছিল।
আবহবিদেরা জানিয়েছেন, দক্ষিণবঙ্গ বা গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বর্ষা বয়ে আনে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু। প্রথমে কেরল দিয়ে তা মূল ভূখণ্ডে ঢোকে। পরে উপরের দিকে উঠে এসে দক্ষিণবঙ্গে হাজির হয় বর্ষা। সাধারণত, জুন মাসের প্রথম দিনেই কেরলে বর্ষা ঢোকার কথা। এ বছর সেই নিয়ম মেনে ১ জুন কেরলে বর্ষা ঢুকেছিল। কিন্তু বঙ্গোপসাগরের বায়ুপ্রবাহের বাধায় তা প্রথম কয়েক দিন উপরে উঠতে পারেনি। এক আবহবিজ্ঞানী জানান, বর্ষা কেরলে ঢোকার পর তামিলনাড়ুর উপর দিয়ে তা বঙ্গোপসাগরের পৌঁছে যায়। কিন্তু এ বছর জুনের প্রথম দিন থেকেই বঙ্গোপসাগরে বায়ুপ্রবাহ বদলে যাওয়ার ফলে কেরলের শাখাটি বঙ্গোপসাগরে পৌঁছনোর পর আর উপরে উঠতে পারেনি। দুর্বল হয়ে পড়েছিল মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরের শাখাটিও। তার ফলে মায়ানমারেই ঠায় ন’দিন দাঁড়িয়েছিল বর্ষা।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, বঙ্গোপসাগরের পরিস্থিতির জন্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বর্ষার পৌঁছতে সপ্তাহ খানেক দেরি হয়েছে।
দক্ষিণবঙ্গের ক্ষেত্রেও তেমনটাই আশঙ্কা করেছিলেন তাঁরা। ঘটনাচক্রে, গত বছর বায়ুপ্রবাহের বদলের কারণেই নির্দিষ্ট সময়ের দশ দিন পরে বর্ষা ঢুকেছিল দক্ষিণবঙ্গে। এক আবহবিজ্ঞানীর কথায়, “এ বছরও তেমনটা হবে বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু বঙ্গোপসাগরে বায়ুপ্রবাহ বদলে গিয়ে বর্ষার অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হওয়াতেই বর্ষা নির্দিষ্ট সময়ে দক্ষিণবঙ্গে ঢুকেছে।”
আবহবিজ্ঞানীদের মতে, দক্ষিণবঙ্গের একাংশে বর্ষা ঢুকলেও তার প্রভাব বাকি জেলাগুলিতেও পড়বে। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপরে একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা থাকায় বর্ষা জোরালো হবে বলেই আবহবিদেরা মনে করছেন।
কেমন কাটবে আগামী কয়েক দিন?
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, আগামী ৪৮ ঘণ্টা কলকাতা-সহ হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। অল্পবিস্তর বৃষ্টি হবে দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতেও।
উত্তরবঙ্গে বর্ষা পরিস্থিতি জোরালো হওয়ায় দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
|