একই দিনে জোড়া সুখবর! দেরি যা হয়েছে, শুক্রবারের জোড়া সুখবরে তার অভাব পূরণের ইঙ্গিতও মিলেছে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর এ দিন জানায়, উত্তরবঙ্গে বর্ষা ঢুকেছে। আর প্রাক্-বর্ষা পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গিয়েছে দক্ষিণবঙ্গেও। দিন তিনেকের মধ্যেই দক্ষিণবঙ্গের একাংশে বর্ষা ঢুকে যাবে বলে আবহবিদদের অনুমান। মৌসুমি বায়ুর দু’টি ভিন্ন শাখাকে বাহন করে বর্ষা ঢোকে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গে। একটি শাখা কেরল দিয়ে ঢুকে উত্তর দিকে উঠে পূর্ব ভারতে চলে আসে। সেটাই বর্ষা আনে দক্ষিণবঙ্গে। মৌসুমি বায়ুর অন্য শাখা আন্দামান থেকে মায়ানমার দিয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ঢুকে হাজির হয় উত্তরবঙ্গে। এ দিন জোড়া পথেই বর্ষার অগ্রগতির খবর এসেছে।
দু’টি পথেই অবশ্য কিছুটা দেরি হয়েই গিয়েছে। সাধারণ ভাবে ৪-৫ জুনের মধ্যে বর্ষা ঢুকে যায় উত্তরবঙ্গে। এ বার তার আগেই সেখানে বর্ষার পৌঁছনোর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কারণ আন্দামান থেকে বঙ্গোপসাগর হয়ে বর্ষা মায়ানমারে পৌঁছে গিয়েছিল ২৭ মে। নির্দিষ্ট সময়ের দু’দিন আগেই। মায়ানমার থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চল হয়ে তরাই-ডুয়ার্সে বর্ষা ঢুকতে দিন তিনেক সময় লাগে। তাই ১ জুনের আগেই বর্ষা উত্তরবঙ্গে ঢুকে যাবে বলে অনুমান ছিল আবহবিদদের। কিন্তু বঙ্গোপসাগরে বায়ুপ্রবাহ বদলে যাওয়ায় মায়ানমারে বর্ষা থমকে যায়। দু’-এক দিন নয়, টানা ন’দিন দাঁড়িয়ে থাকে। বুধবার তা ফের সক্রিয় হতে শুরু করে। আর শুক্রবার ঢুকে পড়ে উত্তরবঙ্গে। |
কেরল দিয়ে বর্ষার মূল শাখাটিও নির্ধারিত তারিখে, অর্থাৎ ১ জুন মূল ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েছিল। কেরলে মৌসুমি বায়ুর আবির্ভাবের স্বাভাবিক সময় এটাই। বর্ষার ওই শাখা আরবসাগর ও বঙ্গোপসাগর হয়ে ক্রমেই উঠতে থাকে উপরের দিকে। ওই পথে ঠিক সময়েই ভারতীয় ভূখণ্ডে পৌঁছে যাওয়ায় গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে তার আসার কথা ছিল আজ, শনিবার। কিন্তু বঙ্গোপসাগরের বায়ুপ্রবাহ বদলে যাওয়ায় কেরলের বর্ষা আর উপরের দিকে উঠতে পারেনি। চাই ৮ জুন দক্ষিণবঙ্গে আসার নির্ঘণ্ট হয়তো মানতে পারছে না বর্ষা। তবে বুধবার বঙ্গোপসাগরের বায়ুপ্রবাহ অনুকূল হওয়ায় কেরলের শাখাটিও সক্রিয় হয়ে উপরের দিকে উঠতে শুরু করেছে বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা। তার জেরে দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়ায় পরিবর্তন এসেছে। তৈরি হয়েছে প্রাক্-বর্ষার পরিস্থিতি।
শুক্রবার সকাল থেকে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় ভারী বৃষ্টি হয়েছে। আগামী কয়েক দিন দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়া একই রকম থাকবে বলে হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস। আবহবিদেরা বলছেন, বঙ্গোপসাগর এবং দক্ষিণবঙ্গের উপরে এই মুহূর্তে যে-বায়ুপ্রবাহ রয়েছে, তা বর্ষার অনুকূল। সেই সঙ্গে একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা রয়েছে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপরে। তার জেরে বঙ্গোপসাগর থেকে দক্ষিণবঙ্গের পরিমণ্ডলে জলীয় বাষ্প ঢুকছে এবং তা সম্পৃক্ত হয়ে মেঘ তৈরি করছে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ এ দিন বলেন, “আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে দক্ষিণবঙ্গের কোনও কোনও জেলায় বর্ষা ঢুকবে। বৃষ্টি হওয়ার ফলে তাপমাত্রা কমারও সম্ভাবনা রয়েছে।” |