এখনও পর্যন্ত প্রায় ১০ লক্ষ আমানতকারীর আবেদন জমা পড়েছে সারদা কাণ্ডে গঠিত কমিশনে। শুনানি হয়েছে মাত্র ৯০০ জনের। এত বিশাল সংখ্যক আবেদনের শুনানি কত দিনে হবে, সর্বস্বান্ত হওয়া আমানতকারীদেরই বা কী হাল হবে, তা নিয়ে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে।
শুক্রবার বৈঠকে বসেছিল সারদা-কাণ্ডে নিযুক্ত বিচারপতি শ্যামলকুমার সেন কমিশন। বিচারপতি সেন ছাড়াও হাজির ছিলেন কমিশনের অন্য দুই সদস্য রাজ্য বিত্ত নিগমের চেয়ারম্যান অম্লান বসু এবং প্রাক্তন পুলিশ কর্তা যোগেশ চট্টোপাধ্যায়ও। এর পরে শ্যামলবাবু বলেন, “এ পর্যন্ত যা শুনানি হয়েছে, তার ভিত্তিতে আবেদনগুলিকে দু’তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর ভিত্তিতে আবেদনগুলি ভাগ করে ফেলা হবে। তাতে জনে জনে শুনানির প্রয়োজন হবে না।”
আবেদনগুলির শ্রেণিবিন্যাস কী ধরনের? বিচারপতি সেন বলেন, “শুনানি পর্বে দেখা গিয়েছে অধিকাংশ আমানতই সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস এবং সারদা রিয়েলটিতে জমা পড়েছে। তাই আবেদনগুলিকে ওই দু’টি ভাগে ভাগ করে ফেলা হচ্ছে।” কমিশন সূত্রের খবর, যে সব গরিব মানুষের সারদায় সঞ্চিত টাকা ইতিমধ্যেই মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে, টাকা ফেরতের ব্যাপারে তাঁদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এক জনের একাধিক আমানত থাকলে ক’টির টাকা মিলবে, সেই ব্যাপারেও নীতি ঠিক করেছে কমিশন। ওই নীতি মেনে যত শীঘ্র সম্ভব আমানতের টাকা ফেরত দিতে জুলাই-এর শেষ বা অগস্টের গোড়াতেই রাজ্য সরকারের কাছে অন্তর্বর্তী রিপোর্ট জমা দেবে কমিশন।
কমিশন সূত্রের খবর, শুনানিতে সদস্যদের নজরে এসেছে, আমানতকারীদের মধ্যে মহিলার সংখ্যা যথেষ্ট। এঁদের অনেকেই পরিচারিকা, রাঁধুনি, কাগজ কুড়ুনি হতদরিদ্র আর্থিক অবস্থার। তাঁদের অগ্রাধিকার দিতে কমিশন শুক্রবার একটি নীতি তৈরি করেছে।
শ্যামলবাবু বলেন, “গরিব, দিনমজুর এই ধরনের মানুষদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। আর তাঁদের বাছাই করা হবে আমানতের মেয়াদ পূর্ণ (ম্যাচিওরিটি) হওয়ার নিরিখে। যাঁর টাকা যত আগে ফেরত পাওয়ার কথা, তিনি তত আগে টাকা পাবেন। পরে যাঁদের মেয়াদ পূর্ণ হবে, তাঁরা পরে পাবেন। কেবল মাত্র আমানতের মূল টাকাটাই মিলবে, আশ্বাসিত সুদের অঙ্ক নয়।” কমিশন আরও জানিয়েছে, কারও একাধিক আমানত থাকলে সবচেয়ে কম অঙ্কের আমানতের টাকাই আপাতত তাঁকে দেওয়া হবে। পরের পর্যায়ে বাকিগুলি দেওয়া হবে। শ্যামলবাবু জানান, এই নীতি ঠিক করা হয়েছে সহারা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় অনুযায়ী।
শুক্রবারের ওই বৈঠকের আগে রেজিস্ট্রার অফ কোম্পানিজ-এর অফিসারদের ডাকা হয় কমিশনে। পরে শ্যামলবাবু জানান, সারদার বিভিন্ন সংস্থার লাভ-ক্ষতির খাতাপত্র এবং বার্ষিক লেনদেনের যাবতীয় কাগজপত্র তাঁরা কমিশনের অফিসে জমা দিয়েছেন। কমিশন সূত্রের খবর, চার জন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট সংস্থা নিয়োগ করা হচ্ছে। রেজিস্ট্রার অফ কোম্পানিজ-এর সঙ্গে তাঁরা কথা বলবেন।
|