অঙ্গনওয়াড়ি চলছে গাছতলায়। শিশু শিক্ষা কেন্দ্র, মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রে পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ নেই। সেচ ও পানীয় জলের ব্যবস্থাও নেই সর্বত্র। অথচ এই সব প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। তারপরেও কাজে গতি আসেনি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়।
পিছিয়ে পড়া এলাকার উন্নয়নে নানা কাজে অর্থ বরাদ্দ করা হয় বিআরজিএফ (ব্যাকওয়ার্ড রিজিওন গ্রান্ট ফান্ড) থেকে। এই তহবিল থেকে ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে প্রায় ২৫ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা পেয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুর। এথচ এখনও সেই টাকার অর্ধেকও খরচ করা যায়নি। খরচ হয়েছে মাত্র ১১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। এখন পঞ্চায়েত নির্বাচন। প্রশাসনিক কর্তারাও নির্বাচন নিয়েই ব্যস্ত। ফলে চলতি আর্থিক বছরেও বিগত অর্থবর্ষের টাকা সম্পূর্ণ খরচ করা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। আর বরাদ্দ টাকা খরচ না করতে পারলে চলতি আর্থিক বছরে এই প্রকল্পে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ মিলবে না।
নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় এ নিয়ে প্রশাসনিক কর্তারা মন্তব্য করতে চাননি। তবে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রকল্পের টাকা পেতেই দেরি হয়েছিল। মার্চ মাসের শেষে দিকে টাকা পাওয়া গিয়েছিল। তাই টাকা খরচে কিছুটা দেরি হচ্ছে। কিন্তু পরিকল্পনা তো আগে থেকেই তৈরি থাকে। তা হলে তা রূপায়ণে তো দেরি হওয়ার কথা নয়। এক পদস্থ প্রশাসনিক কর্তার মতে, “চলতি আর্থিক বছরের শুরু থেকেই নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়েছিল। যে কোনও সময় নির্বাচন ঘোষণা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছিল। তাই সব ক্ষেত্রে দ্রুত গতিতে কাজ করা যায়নি।” এর ফলে, গাছতলায় চলা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিকে আরও একটি বর্ষা গাছতলাতেই কাটাতে হবে। শিশু শিক্ষা কেন্দ্র বা মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রের ছাত্রছাত্রীদেরও গাদাগাদি করেই করতে হবে ক্লাস।
স্থায়ী সম্পত্তি তৈরির জন্যই এই প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ করে কেন্দ্রীয় সরকার। মূলত, পিছিয়ে পড়া জেলাগুলি অর্থ সাহায্য পায়। এ রাজ্যের অন্যতম পিছিয়ে পড়া জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর। বিশেষ করে জেলার জঙ্গলমহলে অনুন্নয়নই প্রধান সমস্যা। সেখানে সেচ থেকে পানীয় জল, স্কুল সব কিছুরই সঙ্কট রয়েছে। জেলার জন্য ৬০৯১টি প্রকল্পে মোট ৩৮ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকা চেয়েছিল প্রশাসন। কথা ছিল বরাদ্দ টাকায় অঙ্গনওয়াড়ির বাড়ি তৈরি, ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্প ও পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা করা, শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের বাড়ি তৈরি, যে সব মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রে ক্লাসরুমের অভাব রয়েছে তা তৈরি করে দেওয়া হবে। প্রথম ধাপে বরাদ্দ ২৫ কোটি ১৫ লক্ষ টাকায় গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের মাধ্যমে প্রকল্প রূপায়ণ করার কথা। দ্রুত প্রকল্প রূপায়িত হলে বাকি টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর টাকা খরচ না করতে পারলে পরের আর্থিক বছরের বরাদ্দের জন্য বেগ পেতে হয়। ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষের তিন মাস ইতিমধ্যেই অতিক্রান্ত। অথচ এখনও বিগত আর্থিক বছরের অর্ধেক টাকা খরচ করতে পারেনি প্রশাসন। পঞ্চায়েত নির্বাচন পর্বে এই প্রকল্পের কাজে নজরদারি চালাতে প্রশাসনের যে কিছুটা অসুবিধে হবে বলাই বাহুল্য। তবে নির্বাচন মিটে গেলে যাতে দ্রুত কাজগুলি বাস্তবায়িত করা যায় তার জন্য পদক্ষেপ করা হবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। |