|
|
|
|
কমিশনের কাছে নালিশ করল সিপিআইও |
শবর মহিলা প্রার্থীকে হুমকি, দহিজুড়িতে অভিযুক্ত তৃণমূল
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
জঙ্গলমহল জুড়ে সিপিএম-সহ বিরোধী দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য নানা ভাবে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাসক-দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিনপুর-১ ব্লকের (লালগড়) অন্তর্গত দহিজুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের এক মহিলা সিপিএম প্রার্থীর বাড়িতে চড়াও হয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। আদিম জনগোষ্ঠীভুক্ত শবর সম্প্রদায়ের ওই প্রার্থীর নাম জ্ঞান ভুক্তা। শুক্রবার ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন জ্ঞানদেবী। তাঁর অভিযোগ, মনোনয়ন দাখিল করার পর থেকেই তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাঁকে ও তাঁর পরিবারের লোকজনকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ দহিজুড়ির লোধা-পাড়ায় জ্ঞানদেবীর বাড়িতে তৃণমূলের লোকজন হামলা চালায় বলে অভিযোগ। শুক্রবার ঝাড়গ্রাম মহকুমাশাসকের দফতরে এসেছিলেন জ্ঞানদেবী। মহকুমাশাসক স্ক্রুটিনির কাজে ব্যস্ত থাকায় রিসিভিং সেকশনে অভিযোগপত্র জমা দেন জ্ঞানদেবী। এদিন সংবাদমাধ্যমের কাছেও জ্ঞানদেবী অভিযোগ করে জানান, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের মধ্যে ঝাড়খণ্ডী নেতা বাবু বসুর খুনের মামলায় শর্তাধীন জামিনে মুক্তিপ্রাপ্ত এক অভিযুক্তও রয়েছেন। জ্ঞানদেবী বলেন, “আগামী সোমবারের মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাহার না-করলে ওরা আমার ও পরিবারের চরম ক্ষতি করার হুমকি দিয়েছে। পুলিশ অভিযোগ না-নেওয়ায় মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগপত্র জমা দিয়ে নিরাপত্তার আবেদন করেছি।” বছর পঞ্চাশের প্রৌঢ়া নিরক্ষর জ্ঞানদেবী ও তাঁর স্বামী বারু ভুক্তা দিনমজুরি করে সংসার চালান। ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক বাসব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশকে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বলব।” তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ বলেন, “যে সব আসনে সিপিএমের ভোট পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই, সেখানেই ওরা আমাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করছে। আমরা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে বিশ্বাসী। কোনও বিরোধী প্রার্থীকেই আমরা হুমকি দিই নি।”
এ দিকে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে, এমনকী পুলিশের পোশাক পরে কিছু লোক রাত-বিরেতে প্রার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে বলে শুক্রবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানিয়েছে সিপিআই। দলের জেলা সম্পাদক সন্তোষ রাণা বলেন, “সীমাহীন সন্ত্রাস চলছে। বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূলের বাইক বাহিনী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মনোনয়ন প্রত্যাহারের চাপ দেওয়া হচ্ছে। আমাদের আশঙ্কা মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত এই অবস্থা চলবে। আমরা কিছু ঘটনার কথা নির্বাচন কমিশনারকে জানিয়েছি।” একই অভিযোগ সিপিএমেরও। দলের জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের কথায়, “এখন সর্বত্রই আমরা আক্রান্ত হচ্ছি। তবে আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছি।” যদিও তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দলের জেলা চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতির দাবি, “মিথ্যে অভিযোগ। নিজেদের দুর্বলতা বিরোধীরা অপপ্রচার করছে।”
এদিনই ভোরে লালগড়ের ধরমপুর অঞ্চলের উত্তর গোহমি গ্রামে স্থানীয় সিপিএম সমর্থকের বাড়ির লাগোয়া খড়ের গাদা থেকে একটি এক নলা দিশি বন্দুক উদ্ধার করেছে পুলিশ। স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের মারফত খবর পেয়ে এদিন পুলিশ উত্তর গোহমি গ্রাম থেকে ওই অস্ত্রটি উদ্ধার করে। লালগড়ের সিপিএম নেতা তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “পঞ্চায়েত ভোটের আগে আমাদের কর্মী ও প্রার্থীদের নামে মিথ্যা মামলা রুজু করার উদ্দেশ্যে তৃণমূলের লোকেরাই খড়ের গাদায় ওই বন্দুকটি রেখে পুলিশকে খবর দেয়।” তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষের পাল্টা যুক্তি, “ধরমপুর অঞ্চলে সিপিএমের হার্মাদ বাহিনী এখনও সক্রিয়। ভোটের আগে সন্ত্রাস করার জন্য সিপিএম অস্ত্র আমদানি করছে।” |
|
|
|
|
|